অস্ট্রেলিয়ায় ছোটোদের জন্য নিষিদ্ধ সোশ্যাল মিডিয়া

অস্ট্রেলিয়ায় ছোটোদের জন্য নিষিদ্ধ সোশ্যাল মিডিয়া

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৫

অস্ট্রেলিয়া প্রথম দেশ, যারা ১৬ বছরের নীচে শিশু-কিশোরদের জন্য অধিকাংশ সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম নিষিদ্ধ করেছে। কিশোরদের মধ্যে এ নিয়ে ক্ষোভ থাকলেও সামাজিক বিজ্ঞানীদের জন্য এটি এক বিরল “ স্বাভাবিক পরীক্ষা”। এতে বাস্তব পরিবেশে সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ন্ত্রণের প্রভাব মাপা যাবে। নিষিদ্ধ প্ল্যাটফর্মের তালিকায় আছে Facebook, X, Reddit, YouTube, Threads এবং Snapchat। কিশোরদের নতুন অ্যাকাউন্ট তৈরি বা অস্তিত্ব আছে এমন অ্যাকাউন্ট কোম্পানিগুলোকে বাধ্যতামূলকভাবে বন্ধ করতে হবে। নইলে ৪৯.৫ মিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলার পর্যন্ত জরিমানার মুখে পড়তে হবে।

সরকারের দাবি, সোশ্যাল মিডিয়া, কিশোরদের মানসিক স্বাস্থ্য, ঘুম ও আচরণে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তবে গবেষকদের মতে, প্রমাণ এখনও মিশ্র। অনেক কিশোরের জন্য অনলাইন যোগাযোগই হচ্ছে মানসিক সমর্থনের প্রধান উৎস। বিশেষ করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বা দূরবর্তী এলাকার শিশুদের জন্য। মেলবোর্নের মার্ডক চিল্ড্রেনস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের গবেষক সুসান সওয়ার ইতিমধ্যেই ১৩–১৬ বছর বয়সী ১৭৭ জন কিশোরের সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার ও মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে প্রাক-নিষেধাজ্ঞা তথ্য সংগ্রহ করেছেন। ছ-মাস পর তিনি তাদের আবার সমীক্ষা করবেন। যাতে বোঝা যায়, নিষেধাজ্ঞা তাদের আচরণ বা মানসিক অবস্থা বদলেছে কি না। অভিভাবকদেরও আলাদা করে প্রশ্ন করা হবে। পার্থ-এর বিশ্ববিদ্যালয়গুলি যৌথভাবে খতিয়ে দেখবে, এই আইন পিতামাতার ওপর সন্তানদের নিয়ে নতুন ধরনের চাপ তৈরি করছে কি না, পরিবারে কোন বা কী ধরনের দ্বন্দ্ব তৈরি হচ্ছে। ওয়েস্টার্ন সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক আমান্ডা থার্ড শিশুদের প্রযুক্তি ব্যবহারের ধরন বদলাচ্ছে কি না, সেটি পর্যবেক্ষণ করবেন। তবে তিনি মনে করেন, ইন্টারনেটকে শিশু-বান্ধব করতে, আসন্ন অন্যান্য নীতিগুলির প্রভাবের সঙ্গে এই নিষেধাজ্ঞার প্রভাব আলাদা করা কঠিন হতে পারে। মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী জারেহ গাজারিয়ান জানতে চান, সোশ্যাল মিডিয়ার অনুপস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক সচেতনতা কতটা কমে, তারা কোন বিকল্প প্ল্যাটফর্মে যাচ্ছে। কুইন্সল্যান্ড ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির ড্যানিয়েল অ্যাঙ্গাস দেখছেন, নিষেধাজ্ঞা এড়াতে কিশোররা নতুন কোন অ্যাপ ব্যবহার করছে। Lemon8 এবং Yope-এর ডাউনলোড বাড়ছে, যা পর্যবেক্ষণের আওতায় আনা হয়েছে। এসব তথ্য অভিভাবকদের সচেতন করতে কাজে লাগবে। তবে নিষেধাজ্ঞার কারণে আরেকটি গবেষণা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। মদের অনলাইন বিজ্ঞাপন পর্যবেক্ষণের জন্য ব্যবহৃত তাদের ডামি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট নতুন নীতির কারণে বন্ধ হয়ে গেছে। এখন নতুন অ্যাকাউন্ট তৈরি করাও সম্ভব নয়। অস্ট্রেলিয়ার স্বাধীন eSafety কমিশনার, জুলি ইনম্যান গ্রান্ট, পুরো নিষেধাজ্ঞা বাস্তব সময়ে কী প্রভাব ফেলছে, তা পর্যবেক্ষণ করবেন। সওয়ার ও থার্ড একটি আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্য, যা দু’বছরের মধ্যে মূল্যায়ন প্রতিবেদন দেবে। জানা যাবে, শিশুরা কি এর কারণে, বেশি নিরাপদ, বেশি সামাজিকভাবে যুক্ত হচ্ছে, নাকি ভিন্ন ধরনের ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছে।

 

সূত্র: Australia’s world-first social media ban is a ‘natural experiment’ for scientists; 11th Dec, 2025; Nature.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

4 × 2 =