অস্তিত্বসংকটে সুমাত্রার বাঘ

অস্তিত্বসংকটে সুমাত্রার বাঘ

Posted on ৯ এপ্রিল, ২০১৯

সুমাত্রার জঙ্গল ছেড়ে বনের রাজপুত্র নাকি অস্তিত্ব বাঁচাতে ঘাঁটি গেড়েছে পাতলা জনবসতিতে । ভয়ালসুন্দর এই শিকারি প্রজাতির ভাগ্যে হয়তো ঝুলছে অবলুপ্তির খাঁড়া। ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া (বার্কলে)–র একবছর ব্যাপী সন্ধান অভিযানে উঠে আসা এই দুর্ভাগ্যজনক তথ্য অবশ্যই চিন্তার ভাঁজ ফেলবে পশুপ্রেমীদের কপালে।

জাভা, বালি বা সিঙ্গাপুরের জঙ্গলে বিশ শতকেই বিদায়ঘণ্টা বেজে গিয়েছিল ব্যাঘ্রকুলের । সুমাত্রার অরণ্যে এই এশীয় বাঘের অন্য উপপ্রজাতিকে বাঁচাতে চেষ্টার খামতি অবশ্য ছিল না – চোরাশিকারের বিরুদ্ধে নতুন বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে । এবং, সাফল্যও এসেছিল তাতে । শেষ দুটি দশকে বাঘের সংখ্যাও বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ । কিন্তু গবেষণায় দেখা যাচ্ছে অন্যরকম অশনিসংকেত – সুরক্ষিত বনভূমি ক্রমশ্যই ধ্বংস হচ্ছে, খাপছাড়া জঙ্গলে প্রতিকূল হয়ে উঠছে সুমাত্রান বাঘের অস্তিত্বরক্ষা । সুমাত্রাতেই ২০০০ সাল থেকে ২০১২ সাল অবধি, প্রায় ১৭ শতাংশ জঙ্গল কেটে ফেলা হয়েছে ওয়েল পামের ফলনের জন্য ।

ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যাথিউ লাসকিন সিঙ্গাপুরের নানয়্যাং টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটির সাথে যুক্ত হয়ে গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন । ন্যাশানাল জিওগ্রাফিক সোসাইটির পৃষ্ঠপোষকতায় সংঘটিত অভিযানটির ব্যাপারে বিশদে লেখা হয় ৫ই ডিসেম্বরের ‘নেচার কমিউনিকেশনে’ ।

তবে, বলাই বাহুল্য শার্দূলশ্রেষ্ঠকে জঙ্গলের মধ্যে ক্যামেরায় ধরা মোটেই সহজ কাজ ছিল না । সুমাত্রার দুর্গম অরণ্যে অভিযাত্রী দল প্রায় একবছর ধ’রে ট্রেক ক’রে স্থিরচিত্র এবং ভিডিওতে বন্দী করেছেন বাঘের ছবি । চামড়ায় বিশেষ ধরণের ডোরাকাটা দাগ দেখে আলাদা ক’রে চেনা যায় সুমাত্রার বাঘকে ।

ক্যামেরা থেকে সংগৃহীত তথ্য বলছে, সুমাত্রান বাঘের বিচরণ আনুমানিক দেড়শ বর্গমাইল এলাকা জুড়ে, যা কিনা সানফ্রান্সিস্কোর তিনগুন । ভারতীয় বাঘের মুক্তাঞ্চলের চেয়েও এটি ক্ষেত্রফলে বেশী ।

কেটে ফেলা পাতলা জঙ্গলের তুলনায় আদিম ঘন অরণ্যগুলিতে বাঘের সংখ্যা প্রায় ৪৭ শতাংশ অধিক । নিচুজমিতে ব্যাপকহারে অরণ্যধ্বংসের ফলস্বরূপ কমেছে বাঘের সংখ্যা । ১৯৯০ থেকে ২০১০ সাল – এই কুড়ি বছরে সুমাত্রায় ৩৭ শতাংশ জঙ্গল কেটে ফেলা হয়েছে নির্বিচারে ।

সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অন্যান্য বিজ্ঞানীদের তথ্যের সাথে এই গবেষণার ফলাফল মিলিয়ে অনুসন্ধানকারী দল একপ্রকার নিশ্চিত যে, সুমাত্রার জঙ্গলে ৩০ টি প্রসূতি বাঘিনীর সাথে মাত্র দুটি পূর্ণাঙ্গ পুরুষ বাঘ চালিয়ে যাচ্ছে অস্তিত্বরক্ষার সংগ্রাম ।

“ব্যাপকহারে বনক্ষয় সুমাত্রান বাঘের বিলুপ্তির পথ মসৃণ করছে’’, জানিয়ে ম্যাথিউ লাসকিন সতর্কবার্তা হিসেবেই দেখতে চাইছেন এই ফলাফলকে । গবেষণার অন্য সহযোগী ম্যাথিস টবলার প্রাথমিক বনভূমি বাঁচানোর নিদান দিচ্ছেন । উত্তর সুমাত্রায় গুনুং লিউজার ন্যাশানাল পার্কে অরণ্যছেদন ও চোরাশিকারের মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে লিওনার্দো দি-ক্যাপ্রিও ফাউন্ডেশান ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three + seventeen =