প্রকৃতির বাতাস অনেকগুলো গ্যাসের মিশ্রণ; তার কোন্ উপাদান জীবন ধারণে অপরিহার্য? – অক্সিজেন। কেন শরীরে অক্সিজেনের এত চাহিদা! অক্সিজেন বিহনে কেন কয়েক মিনিটও মানুষ বাঁচতে পারে না?
অক্সিজেন, বেঁচে থাকবার প্রধান শর্ত। আমরা সংগ্রহ করি বায়ুমণ্ডলের বাতাস থেকে। সেখানে থাকে নাইট্রোজেন (৭৮.০৮%), অক্সিজেন (২০.৯৫%), আর্গন (০.৯৩%), কার্বন ডাইঅক্সাইড (০.০৪%), সামান্য পরিমাণে অন্য গ্যাস (হাইড্রোজেন, হিলিয়াম, জলীয় বাষ্প) আর ধুলো বালি বিভিন্ন ভাসমান কণা।
শ্বাস নিলে বাতাস শরীরের ভিতরে ঢুকে যায়। বাতাসের সঙ্গে ক্ষতিকর ধুলো, অন্য কিছু ক্ষুদ্র কণাও প্রবেশ করে। ঢুকবার পথেই নাসিকা-লোম ধুলোবালির প্রবেশে বাধা দেয়। এর পর সেই বাতাস অর্থাৎ গ্যাসের মিশ্রণ ফুসফুসে গিয়ে পৌঁছায়।
নির্দিষ্ট করে বললে, পৌঁছায় ফুসফুসের অ্যালভিওলাসে। অ্যালভিওলাস (বহুবচনে অ্যালভিওলাই) জিনিসটা বেলুনের মতো। একে বলা হয় বায়ুকোষ বা বায়ুথলি। অ্যালভিওলাসের বাইরে থাকে সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম রক্তজালিকা (Capillary)। অ্যালভিওলাসের আবরণটি খুবই পাতলা, মাত্র ২৫ ন্যানো মিটার। তার মধ্যে থাকে অসংখ্য ছিদ্র । সেসব ছিদ্রের মধ্য দিয়ে অ্যালভিওলাসের ভিতর তাই সহজেই বাতাস ঢুকতে পারে, বেরোতেও পারে। অ্যালভিওলাসেই বাতাস থেকে অক্সিজেন আলাদা হওয়ার কাজটি ঘটে। অর্থাৎ ছাঁকনিতে ছেঁকে নিয়ে অক্সিজেনকে আলাদা করে নেয়। সেই অক্সিজেন ব্যাপন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে অ্যালভিওলাস থেকে ক্যাপিলারিতে পৌঁছায়। এমন ঘটবার কারণ, অক্সিজেনের পার্শ্ব চাপ অ্যালভিওলাসে বেশী এবং রক্ত জালিকায় কম।
স্বাভাবিক প্রশ্ন, আমাদের শরীর কীভাবে গ্যাস-মিশ্রণ থেকে অক্সিজেনকে আলাদা করে নেয়? বাতাসের অন্য গ্যাসগুলোই বা কোথায় যায়?
অক্সিজেন-সমৃদ্ধ রক্ত ফুসফুস থেকে বেরিয়ে ধমনীর মধ্য দিয়ে হৃদযন্ত্রের বাম দিকের প্রকোষ্ঠে গিয়ে ঢোকে। তারপর হৃদযন্ত্র পাম্প করে সেই রক্ত পাঠিয়ে দেয় শরীরের সব যন্ত্রে, সমস্ত কোষে। আর কার্বন ডাইঅক্সাইড সমৃদ্ধ রক্ত দুটো মহাধমনীর মধ্য দিয়ে (the superior vena cava and the inferior vena cava) চলে আসে হৃদযন্ত্রের ডান দিকের প্রকোষ্ঠে। এবার হৃদযন্ত্রের ক্রিয়ায় সেই রক্ত চলে আসে ফুসফুসে। সেখান থেকে কার্বন ডাইঅক্সাইড চলে যায় শরীরের বাইরে (শ্বাস বর্জন)।
অক্সিজেন শরীরে ঢুকে বহু রকম কাজ করতে থাকে। রক্তের উপাদান লোহিত রক্তকণিকা, শ্বেত রক্তকণিকা, অণুচক্রিকা। লোহিত রক্তকণিকায় থাকে হিমোগ্লোবিন; যা ধাতব আয়রন আর পরফিরিন নামের যৌগ দিয়ে তৈরি। হিমোগ্লোবিন কাজে লাগায় অক্সিজেনকে (আয়রনের যোজ্যতা দুই থেকে তিনে বদলে যায়)। হিমোগ্লোবিনকে দেহের কোষে রক্তের মাধ্যমে পৌঁছে দেয় অক্সিজেন।
অক্সিজেন গ্রহণ করে শরীরের কোষ শুরু করে দরকারি রাসায়নিক বিক্রিয়া। বিক্রিয়ায় তৈরি হয় শক্তি। কোষের মধ্যে মাইটোকনড্রিয়া নামের এক সূক্ষ্ম যন্ত্র তৈরি করে শক্তি। শরীর সেই শক্তি কাজে লাগায়। শক্তি তৈরির প্রক্রিয়ায় কার্বন ডাইঅক্সাইড তৈরি হয়। সেটি আবার ব্যাপন ক্রিয়ায় রক্তে ফিরে আসে। তারপর রক্তের মধ্য দিয়ে আবার আসে অ্যালভিওলাসে। সেখান থেকে ফুসফুসের ক্রিয়ায় শরীরের বাইরে চলে যায়। সামান্য কিছু নাইট্রোজেন রক্তে মিশে যায়। কিন্তু নিষ্ক্রিয় গ্যাস বলে শরীরের কোনো ক্ষতি করতে পারে না। শ্বাস ত্যাগের সঙ্গে শরীরের বাইরে চলে যায়।
শ্বাসক্রিয়ায় বাতাস শরীরে প্রবেশ করে। শরীরে বাতাসের ধুলোবালির আটকে দেয় নাসিকা-লোম। কিন্তু সূক্ষ্ম ধুলো, অন্য ভেসে থাকা পদার্থ কণার পরিমাণ খুব বেশী হলে নাসিকা-লোম আটকাতে পারে না। সেই দূষিত বাতাস তখন ফুসফুসে গিয়ে পৌঁছায়। ডেকে আনে ফুসফুসের বহু রোগ। এমনকি প্রাণঘাতী ক্যানসার। তাই বেঁচে থাকতে দরকার শুদ্ধ বায়ু।
একবার শ্বাস গ্রহণ আর শ্বাস ত্যাগ, মাত্র দু’তিন সেকেন্ডের কাজ। তার মধ্যেই ঘটে বহু ক্রিয়াকর্ম। অনেক জটিল বিক্রিয়া। একটা কথা বারবার বলা দরকার – শুদ্ধ বাতাস বিনা আমরা বাঁচতেই পারবো না।
Very good