অ্যান্টার্কটিক অক্টোপাস পৃথিবীর শীতলতম মহাসাগরে কীভাবে বেঁচে থাকে?

অ্যান্টার্কটিক অক্টোপাস পৃথিবীর শীতলতম মহাসাগরে কীভাবে বেঁচে থাকে?

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৯ অক্টোবর, ২০২৩

পৃথিবীর সবচেয়ে ঠান্ডা জলে বাস করে অ্যান্টার্কটিক অক্টোপাস। সেখানে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশেপাশ থাকে এবং প্রায়শই তপমাত্রা -২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে যায়। ‘শীতল-শোণিত’ প্রাণীরা কীভাবে এমন চরম তাপমাত্রায় বেঁচে থাকে তা একটি রহস্যের বিষয়। সম্প্রতি দেখা গেছে অ্যান্টার্কটিকার মতো অতি-ঠান্ডা পরিবেশেও শরীরের কলাতে অক্সিজেন সরবরাহ করতে প্যারেলেডোন প্রজাতির অডবল অক্টোপাস তাদের তিনটি হৃৎপিণ্ড ব্যবহার করে এবং তাদের শরীরের অভ্যন্তরে একটি বিশেষ ধরনের ব্লু ব্লাড সংবহন করে । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মেরিন বায়োলজিক্যাল ল্যাবরেটরির নেতৃত্বে পরিচালিত একটি গবেষণা অনুসারে, স্থায়ীভাবে হিমায়িত জলে বসবাসকারী অন্যান্য প্রজাতির মতো, এই অক্টোপাসেও ঠান্ডা তাপমাত্রায় থাকার জন্য এক ধরনের এনজাইম রয়েছে বলে মনে করা হয়। এই জাতীয় প্রোটিন বেশ কয়েকটি জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়ায় মূল ভূমিকা পালন করে। অ্যান্টার্কটিকে বসবাসকারী প্রাণীরা, তাদের অনন্য বৈশিষ্ট্যের জন্য কম তাপমাত্রায়ও কাজ করতে পারে, যেখানে আরও নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে বসবাসকারী অক্টোপাসের এনজাইমগুলো একই রকম চরম তাপমাত্রায় ২৫% ধীর হয়ে যায়। মানুষের শরীরে অন্ত্রে যেমন এনজাইম খাবার ভাঙতে সাহায্য করে ঠিক তেমনই এই দ্রবণীয় এনজাইম বিশেষ প্রতিক্রিয়ার কারণে বিভিন্ন তাপমাত্রার সাথে আরও সহজে খাপ খাইয়ে নিতে পারে৷ কিন্তু শরীরের সমস্ত এনজাইম এত নমনীয় হতে পারে না৷ কিছু কোশের ঝিল্লিতে চূর্ণ হয়, যেখানে তাদের কাজ করা বেশ কঠিন। এই প্রোটিন ‘পাম্প’ বা চ্যানেল কোশের মধ্যে এবং বাইরে গুরুত্বপূর্ণ আয়ন বহন করে।
এই বিশেষ এনজাইমগুলো কীভাবে অ্যান্টার্কটিকার ঠান্ডা মোকাবিলা করে তা জানার জন্য গবেষকরা দুটি মডেল তৈরি করেন: একটি অ্যান্টার্কটিক অক্টোপাস প্যারেলেডোনে পাওয়া সোডিয়াম-পটাসিয়াম পাম্প এনজাইমের উপর ভিত্তি করে এবং অন্যটি একই পাম্পের উপর ভিত্তি করে যা নাতিশীতোষ্ণ প্রজাতি, টু-স্পট অক্টোপাস, অক্টোপাস বিমাকুলাটাসে পাওয়া যায়। গবেষকরা এই এনজাইমটি বেছে নিয়েছেন কারণ অ্যাডিনোসিন ট্রাইফসফেট (এটিপি) যা কোশের শক্তির উত্স তার একটি অণুর মূল্যে এটি তিনটি সোডিয়াম আয়নের বদলে দুটি পটাসিয়াম আয়ন গ্রহণ করে। কোশের দ্রবণ পরিবহনের জন্য এই বিনিময় অপরিহার্য। গবেষকরা দেখেন যে নাতিশীতোষ্ণ অক্টোপাসের পাম্পের চেয়ে অ্যান্টার্কটিক অক্টোপাসের পাম্পটি −১.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ভালো কাজ করে। এটি ঠান্ডার জন্য কম সংবেদনশীল ছিল। অ্যান্টার্কটিক অক্টোপাসের পাম্পের বিল্ডিং ব্লক বা অ্যামিনো অ্যাসিড নাতিশীতোষ্ণ অক্টোপাস প্রজাতির থেকে বেশ কিছুটা আলাদা। গবেষকরা, অ্যান্টার্কটিক অক্টোপাসের অ্যামিনো অ্যাসিড সিকোয়েন্সে মোট ১২টি অবস্থান দেখেছেন যেখানে একটি মিউটেশন ঠান্ডা প্রতিরোধে সক্ষম বলে মনে করা হচ্ছে। এই মিউটেশনগুলোকে একটি মডেলে এক এক করে যুক্ত করে, গবেষকরা বের করেছেন যে বিশেষভাবে তিনটি মিউটেশন পাম্পের ঠান্ডা প্রতিরোধের জন্য একসাথে কাজ করেছে। তবে ভবিষ্যতে গবেষকদের এই মিউটেশনের কারণ আরও অধ্যয়ন করতে হবে।