আমাদের শরীরে ক্ষতিকর জীবাণুর পাশাপাশি থাকে কিছু ভালো জীবাণুও। উপকারী ‘গাট মাইক্রোবস’ বা ভালো জীবাণুদের সংখ্যা ও বৈচিত্র বাড়লে আমাদের শরীর ভালো থাকে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ঠিক থাকে। কিন্তু বিভিন্ন কারণে আমাদের পাকস্থলী ও অন্ত্রে ভালো জীবাণুর সংখ্যা কমে যায়। বয়সের সঙ্গে সঙ্গেও ভালো জীবাণুরা কমে যায়। খুব সহজেই আমরা সংক্রমণের শিকার হই। তাই আমাদের উপকারী ‘গাট মাইক্রোবস’ নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে। কোনো রোগ হলেই আমাদের প্রবণতা থাকে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার। এর ফলে অন্ত্রে ভালো-মন্দ সব জীবাণুই মরে যায়। প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। ব্রিটিশ কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা প্রথম দেখিয়েছেন কীভাবে ও কেন অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের ফলে নবজাতকের অন্ত্রে অণুজীবের সংখ্যা হ্রাস পায়। এর ফলে পরবর্তী ক্ষেত্রে শ্বাসযন্ত্রে অ্যালার্জি দেখা দিতে পারে। অ্যালার্জি এবং ক্লিনিকাল ইমিউনোলজি জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায়, স্কুল অফ বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর এক দল গবেষক জানিয়েছেন তাদের এই গবেষণা দেখায় অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া এবং অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার একটি নবজাতকের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রভাবিত করে এবং তাদের অ্যালার্জিতে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বাড়িয়ে তোলে।
ফুলের পরাগ বা পোষা প্রাণীর খুশকির প্রতি অনেকসময় আমাদের শরীর তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখায়। সাধারণত, ইমিউন সিস্টেম ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস এবং পরজীবীর মতো ক্ষতিকারক আক্রমণকারীদের থেকে আমাদের রক্ষা করে। অ্যালার্জির ক্ষেত্রে, আমাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ক্ষতিকারক নয় এমন পদার্থের প্রতিও প্রতিক্রিয়া দেখায়। হাঁচি, চুলকানি বা শরীরের বিভিন্ন অংশে মশার কামড়ের আকারে ফুলে যায়। শিশুর জীবনের শুরুর বেশ কয়েকটি বছরের মধ্যেই ইমিউন সিস্টেম বিকাশ লাভ করে। গবেষণা জানায় শিশুর অন্ত্রে জীবাণু এক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। কিন্তু জন্মের পরপরই প্রায়শই সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য শিশুদের অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়। এর ফলে শরীরে ভালো জীবাণু হ্রাস পেতে পারে। এই ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে কিছু, বিউটারেট নামের একটি যৌগ তৈরি করে। যে শিশুদের বিউটারেট-উৎপাদনকারী ব্যাকটেরিয়া কমে যায় তারা বিশেষ করে অ্যালার্জির জন্য সংবেদনশীল হয়ে ওঠে। গবেষণায় আরও দেখা গেছে যে প্রাথমিক জীবনে বিউটারেটের পরিপূরক দেওয়া হলে অ্যালার্জি প্রশমিত করা যেতে পারে বা একদম কমেও যেতে পারে। গবেষকদের মতে অ্যান্টিহিস্টামাইন এবং ইনহেলার দিয়ে অ্যালার্জির চিকিৎসা করলে উপসর্গ থেকে মুক্তি পাওয়া গেলেও রোগ নিরাময় হয় না। সেক্ষেত্রে যে কোশ এবং প্রক্রিয়াগুলো আমাদের অতি সংবেদনশীল ইমিউন সিস্টেম তৈরি করে তাদের টার্গেট করতে হবে। তবে এই বিষয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন।