অ্যান্টিবায়োটিক রেজ়িস্ট্যান্স

অ্যান্টিবায়োটিক রেজ়িস্ট্যান্স

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২০ ডিসেম্বর, ২০২৪

‘অ্যান্টিবায়োটিক রেজ়িস্ট্যান্স’ বা ‘অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল রেজ়িস্ট্যান্স’ নিয়ে এখন সারা বিশ্ব জুড়ে চলছে হইচই। রোগ হল কি হল না, যখন-তখন অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে ফেলার প্রবণতা থেকেই জন্ম নিচ্ছে ‘অ্যান্টিবায়োটিক রেজ়িস্ট্যান্স’। এর ফলে জন্ম হচ্ছে এমন সব সংক্রামক ব্যাক্টেরিয়ার, যারা ওষুধেও মরবে না। এদের বলা হচ্ছে ‘সুপারবাগস’। সম্প্রতি এক গবেষণা জানিয়েছে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধের বিস্তারে মাটি অনেক বড়ো ভূমিকা পালন করে। ভাবতে অবাক লাগে, আমাদের পায়ের তলার মাটিতে নাকি এই অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী জিন (এআরজি) গিজ গিজ করছে। এআরজি হল এমন একধরনের ক্ষুদ্র কোড যা ব্যাকটেরিয়াকে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী করে তুলতে সাহায্য করে। আমাদেরই কাজকর্ম- দূষণ বা ভূমির ব্যবহার মাটির বাস্তুতন্ত্রে বিঘ্ন ঘটায় এবং প্রতিরোধী জিনগুলোকে মাটির ব্যাকটেরিয়া থেকে স্থানান্তরিত করে মানুষকে সংক্রামিত করতে সাহায্য করে। নেচার কমিউনিকেশনে প্রকাশিত এই গবেষণায় গবেষকরা দেখতে চেয়েছেন অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধের ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক সমস্যায় মাটিতে থাকা ব্যাকটেরিয়ার ভূমিকা ঠিক কতটা। তাদের এই গবেষণা দেখিয়েছে যদি একবার ব্যাকটেরিয়া এই প্রতিরোধী জিনগুলো অর্জন করে ফেলে তবে তারা তা দ্রুত অন্যান্য প্রজাতিতে স্থানান্তরিত করতে পারে। গবেষকদের ধারণা এই গবেষণা অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধের বিস্তার নিয়ন্ত্রণ করতে, মানুষের স্বাস্থ্য রক্ষা করতে এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা বজায় রাখার উপায় খুঁজে পেতে সহায়তা করতে পারে।
মাটি শুধু ধুলো, বালি বা ময়লা নয় –মাটিতে রয়েছে ব্যাকটেরিয়ায় ভরা একটি বাস্তুতন্ত্র। এদের মধ্যে কিছু ব্যাকটেরিয়ায় প্রাকৃতিকভাবে এআরজি থাকে, যা তাদের অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। ঘটনাটি খুব সামান্য মনে হলেও কখনও কখনও এটি বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে যখন কিছু ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া এআরজির সাহায্যে মানুষকে সংক্রামিত করে। এরকম একটি ব্যাকটেরিয়া – লিস্টেরিয়া মনোসাইটোজেনস। মাটির এই বাসিন্দা খাদ্য শৃঙ্খলে প্রবেশ করে লিস্টিরিওসিস নামের এক গুরুতর ব্যাধির কারণ হতে পারে। যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের ক্ষেত্রে এই লিস্টিরিওসিস মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে মৃত্যুর হার ২০ থেকে ৩০% হতে পারে। লিস্টেরিয়া অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী জিন ছড়াতে পারে, আর মানুষকে সংক্রামিত করার ক্ষমতাও রাখে। তাই এই ধরনের ব্যাকটেরিয়া নিয়ে কাজ করে গবেষকরা দেখতে চাইছেন কীভাবে মাটিতে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধের বিকাশ ঘটে এবং তা অন্য পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

1 + 2 =