অ্যান্টি–ক্যান্সার অণু ভার্টিসিলিন এ

অ্যান্টি–ক্যান্সার অণু ভার্টিসিলিন এ

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫

বিজ্ঞানজগতে বহুদিন ধরেই আলোচনায় ছিল ছত্রাকজাত জটিল অণু ভার্টিসিলিন এ। ক্যান্সার কোষ ধ্বংসে এর অসাধারণ সম্ভাবনার কথা জানা থাকলেও অণুটি এতটাই সূক্ষ্ম, ভঙ্গুর এবং গঠনগতভাবে জটিল যে আবিষ্কারের অন্তত অর্ধশতাব্দী পরেও কেউ ল্যাবরেটরিতে এর সম্পূর্ণ কৃত্রিম সংশ্লেষ করতে পারেনি। অবশেষে সেই অসম্ভবকেই সম্ভব করেছেন এমআইটির রসায়নবিদরা। এই প্রথম সফলভাবে প্রস্তুত হলো পূর্ণাঙ্গ ভার্টিসিলিন এ।

ভার্টিসিলিন এ–র সাথে অন্যান্য ছত্রাকজাত অণুর তফাত খুব সামান্য—মাত্র কয়েকটি অতিরিক্ত অক্সিজেন পরমাণু। কিন্তু এই ক্ষুদ্র পার্থক্যই তার গঠনকে এতটাই ভঙ্গুর ও জটিল করেছে যে গবেষক দলকে বারবার নতুন কৌশল নিয়ে চেষ্টা করতে হয়েছে। এমআইটি অধ্যাপক মোহাম্মদ মোভাসসাঘি বলেন, দুটি অক্সিজেনই পুরো প্রক্রিয়াটিকে ভীষণ কঠিন ও সংবেদনশীল করে তোলে ; প্রতিটি ধাপেই মনে হয় যেন তীরে এসে তরী ডুবে যাচ্ছে।

অণুটি দুটি অভিন্ন অংশ মিলিয়ে একটি ডাইমার তৈরি করে, যা তৈরির জন্য স্টিরিওকেমিস্ট্রি থেকে শুরু করে কার্বন–সালফার বন্ধনের নিপুণতা—সবকিছুই ছিল অপরিহার্য। ২০০৯ সালে গবেষক দল তার কাছাকাছি—(+)-11,11′-ডাইডিঅক্সিভার্টিসিলিন এ—অণুর সংশ্লেষে সফল হলেও, মূল ভার্টিসিলিন এ সেই কৌশলে তৈরি হয়নি। শেষ পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা পুরো উৎপাদন–ক্রম নতুনভাবে সাজালেন। তাঁরা প্রাথমিক পদার্থ হিসেবে বেছে নেন বিটা–হাইড্রক্সিট্রিপটোফান নামের একটি অ্যামিনো অ্যাসিডকে এবং ১৬ ধাপের জটিল প্রক্রিয়ায় ধীরে ধীরে অণুটিকে রূপ দেন।

প্রতিটি ধাপ ছিল উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ; সামান্য চাপ, তাপমাত্রার ওঠানামা বা রাসায়নিক গ্রুপ জোড়া লাগানোর ভুল সময়চক্র—সবই পুরো অণুটিকে ভেঙে দিতে পারত। এই নিপুণ গঠন তৈরীর লড়াই জেতবার পর অবশেষে গবেষকরা পেলেন আকাঙ্ক্ষিত সফলতা।

সংশ্লেষ প্রক্রিয়াটি সফল হওয়ার পর দলটি ভার্টিসিলিন এ–র আরও কয়েকটি রূপান্তরিত সংস্করণও তৈরি করে। ডানা–ফার্বার ক্যান্সার ইনস্টিটিউট এসব সংস্করণ একটি জটিল ও বিরল শিশুদের মস্তিষ্কের ক্যান্সার—ডিফিউজ মিডলাইন গ্লিওমা (ডি এম জি) কোষের বিরুদ্ধে পরীক্ষা করে।

ফলাফল অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। বিশেষত যেসব ক্যান্সার কোষে EZHIP প্রোটিনের মাত্রা অস্বাভাবিক বেশি, সেগুলোর ওপর যৌগটির প্রভাব ছিল দ্রুত ও তীব্র। EZHIP ডিএনএ–মিথাইলেশন প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত, এবং নতুন এই যৌগগুলো সেই প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে ক্যান্সার কোষকে কার্যত আত্মবিনাশে বাধ্য করে।

সবচেয়ে শক্তিশালী অণুগুলোর মধ্যে ছিল এন-সালফোনাইলেটেড ভার্টিসিলিন-এ ও তার ডাইডিওক্সি সংস্করণ, যেগুলো সালফোনাইল গ্রুপ যুক্ত হওয়ার দরুন আরও স্থিতিশীল।

গবেষকরা এখন এই যৌগগুলো কীভাবে কাজ করে তার বিশদ প্রক্রিয়া যাচাই করছেন। তাঁরা শীঘ্রই প্রাণীদেহে পরীক্ষা শুরু করতে চান। যদি সবকিছু প্রত্যাশা মতো এগোয়, তবে এই ছত্রাকজাত জটিল অণুই ভবিষ্যতে শিশুদের মারাত্মক মস্তিষ্কের ক্যান্সার চিকিৎসায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।

 

সূত্র: “Total Synthesis and Anticancer Study of (+)-Verticillin A” by Jun Qi, Mohammad Movassaghi,et.al; 2nd December 2025, Journal of the American Chemical Society.

DOI: 10.1021/jacs.5c16112

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

six + five =