অ্যান্টি-ম্যাটারের প্রথম বিদেশ যাত্রা
প্রকৃতিতে সবকিছুরই একটা করে বিপরীত বা পালটা থাকে। ম্যাটার বা বস্তুর বিপরীত হল অ্যান্টি-ম্যাটার বা প্রতি-বস্তু। ব্রহ্মাণ্ডে বস্তু আর প্রতি-বস্তুর পরিমাণ সমান-সমান হওয়ার কথা; কিন্তু তাহলে আমরা কেবল বস্তুরই সংস্পর্শে আসি, প্রতিবস্তুর হদিশ পাই না কেন? এ প্রশ্ন অনেক দিন ধরে ব্যতিব্যস্ত করে রেখেছে পদার্থবিজ্ঞানীদের।
প্রতিবস্তু যেন বস্তুর আয়না-বিম্ব। আয়নায় যেমন ডানদিক আর বাঁদিক বদলা-বদলি হয়ে যায়, এ-ও তেমনি। বস্তু যদি হয় ধনাত্মক, প্রতি-বস্তু হবে ঋণাত্মক। মুশকিল হচ্ছে বহু সাধ্যসাধনায় ল্যাবরেটরিতে যদি-বা এই প্রতি-বস্তুর হদিশ পাওয়া গেছে, কিন্তু তা বস্তুর সংস্পর্শে আসা মাত্র মিলিয়ে যায়, তাকে ধরে রাখা যায় না। তাই তাদের আয়ু বাড়ানো যায় কিনা তা নিয়ে পদার্থবিজ্ঞানীরা খুব চেষ্টা চালাচ্ছেন।
সুইটজারল্যান্ডের জিনিভাতে অবস্থিত সি ই আর এন ল্যাবরেটরিই পৃথিবীর একমাত্র জায়গা যেখানে একটু ধীরগতি প্রতিবস্তু তৈরি করা সম্ভব হয়েছে, যাদের মজুত করে রাখা সম্ভব। হয়তো এবার তাদের অক্ষত অবস্থায় এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নিয়ে যাওয়াও সম্ভব হবে। এক ল্যাবরেটরি থেকে অন্য ল্যাবরেটরিতে ওদের চালান করে দেওয়া যায় কিনা, তা নিয়ে কাজ করছেন দুটি গবেষক-দল। সম্ভবত ২০২৫-এর দ্বিতীয়ার্ধে সে-পরীক্ষা করা হবে। এখন তারই প্রস্তুতিপর্ব।
ল্যাব-ঘরের বাইরে প্রতিবস্তুদের বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার প্রথম পর্বটি মাত্র কয়েক ঘণ্টা স্থায়ী হবে। কিন্তু গবেষকদের আশা, ভবিষ্যতে ইউরোপের বিভিন্ন ল্যাবরেটরিতে প্রতিবস্তুদের ঘনঘন বেড়াতে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। একটি দল চেষ্টা করছেন প্রোটনের বিপরীত কণা বা অ্যান্টি-প্রোটনকে জিনিভা থেকে ৭০০ কিমি দূরে জার্মানির ডুসেলডর্ফ শহরের হাইনরিশ হাইনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবরেটরিতে চালান করতে। এঁদের লক্ষ্য হল এই অ্যন্টি-প্রোটন কণার সাহায্যে অন্যান্য স্বল্পায়ু পদার্থসমূহের ধর্ম নিয়ে চর্চা করা। দ্বিতীয় দলটি চাইছেন অ্যান্টি-প্রোটনকে এমন কোনো জায়গায় নিয়ে যেতে যেখানে থাকবে না পরীক্ষা-নিরীক্ষা জনিত কোনোরকম ব্যাঘাত। সেখানে তাদের ধর্ম জানার জন্য নির্বিঘ্নে কাজ করা যাবে। এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত জার্মানির ডার্মস্টাড প্রযুক্তি-বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানী আলেকসান্দ্রে ওবের্তেল্লি বলেছেন, ল্যাব-ঘর থেকে অ্যান্টি-প্রোটনকে বাইরে নিয়ে যাওয়ার এই পদ্ধতি “প্রতিবস্তুর ব্যবহার কিংবা প্রতিবস্তু নিয়ে চর্চাকে গণতান্ত্রিক রূপ দেবে”। কেননা তখন অনেকগুলি ল্যাবরেটিরি মিলে এ নিয়ে গবেষণা চালাতে পারবে।