অ্যান্ড্রোমিডা ইকো-সিস্টেমের হাবল-ঝলক

অ্যান্ড্রোমিডা ইকো-সিস্টেমের হাবল-ঝলক

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৪ মার্চ, ২০২৫

প্রায় আড়াই মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত অ্যান্ড্রোমিডা নক্ষত্রপুঞ্জের চারপাশে ঘুরন্ত প্রায় তিন ডজন ছোটো ছোটো উপ-গ্যালাক্সি পুঞ্জ গ্যালাক্সিদের এক পরস্পর-সম্পর্কিত ইকোসিস্টেম তৈরি করে রেখেছে। এ নিয়ে হাবল স্পেস টেলিস্কোপ অভাবনীয় অনুপুঙ্খে গবেষণা করে চলেছে। উচ্চাকাঙ্ক্ষী হাবল ট্রেজারি প্রোগ্রাম হাজারেরও বেশি হাবল কক্ষপথের পর্যবেক্ষণকে কাজে লাগাচ্ছে। অ্যান্ড্রোমিডার চারপাশে ঘুরে বেড়ানো সমস্ত বামন গ্যালাক্সির একটি সুনির্দিষ্ট ত্রিমাত্রিক মানচিত্র তৈরি করা এর কাজের অঙ্গ। মহাবিশ্বের প্রায় ১৪০০ কোটি বছরের জীবনকালে সেইসব গ্যালাক্সি কতখানি দক্ষতার সাথে নতুন নতুন নক্ষত্র গঠন করেছে সে বিষয়ে তথ্য আহরণ করছে এই কর্মসূচি।
দ্য অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল-এ প্রকাশিত গবেষণাপত্র থেকে দেখা যাচ্ছে, আমাদের ছায়াপথকে প্রদক্ষিণরত অপেক্ষাকৃত ছোটো ছোটো উপ-গ্যালাক্সিগুলির তুলনায় বেশ অন্য রকমের একটা ইকো সিস্টেমের ছবি তুলে ধরছে হাবল। আমাদের ছায়াপথ তুলনামূলকভাবে শান্ত ছিল। কিন্তু অ্যান্ড্রোমিডার ইতিহাস অপেক্ষাকৃত গতিময়। সম্ভবত কয়েকশো কোটি বছর আগে অন্য একটি বড়ো গ্যালাক্সির সঙ্গে মিশে যাওয়ার দরুন এর চরিত্র বদলে গিয়েছিল। এছাড়া অ্যান্ড্রোমিডা আমাদের ছায়াপথের তুলনায় দ্বিগুণ ভারী। এই দুটি কারণে এর মধ্যে রয়েছে প্রচুর বৈচিত্র্যময় বামন নক্ষত্রপুঞ্জ।
সমগ্র ছায়াপথের উপ-গ্যালাক্সিপুঞ্জের সমীক্ষা মোটেই সহজ কাজ নয়। কারণ একে তো আমরা নিজেদের নক্ষত্রপুঞ্জের অনেক ভিতরে সেঁধিয়ে আছি। আবার অন্য বৃহৎ গ্যালাক্সিগুলি এতই দূরে অবস্থিত যে তাদের উপ-গ্যালাক্সিপুঞ্জের বিস্তারিত হিসেব নেওয়া দুষ্কর। অ্যান্ড্রোমিডার উপ-গ্যালাক্সিপুঞ্জের এই ওপর-ওপর দৃশ্য আমাদের বুঝতে সাহায্য করে কীসের তাড়নায় এই সব ছোটো ছোটো উপ-গ্যালাক্সিপুঞ্জ বিবর্তিত হয়। জানা যাচ্ছে, উপ-গ্যালাক্সিগুলি কতক্ষণ ধরে নতুন নতুন তারকা গঠন করে চলবে তা নির্ভর করে উপ-গ্যালাক্সিগুলি কত ভারী এবং অ্যান্ড্রোমিডার কত কাছাকাছি তার ওপর। ছোটো ছোটো গ্যালাক্সির বাড়বৃদ্ধি কীভাবে অ্যান্ড্রোমিডার মতো বিপুলাকার গ্যালাক্সির প্রভাবে ব্যাহত হত তার স্পষ্ট লক্ষণ মিলেছে। গবেষকরা জানাচ্ছেন, অ্যান্ড্রোমিডায় সমস্ত কিছুই খুব অসম আর বিক্ষুব্ধ। মনে হয় অনতিকাল পূর্বে সত্যিই একটা কিছু ঘটেছিল এখানে। প্রশ্ন উঠছে: আমাদের নিজেদের ছায়াপথে যা ঘটছে তারই আলোকে মহাবিশ্বের অন্যান্য নক্ষত্রপুঞ্জগুলিকে অনুমান করার যে-চেষ্টা আমরা সর্বদা করি, সেটা কি ঠিক? গবেষণা বলছে অন্যান্য পরস্পর-সম্পৃক্ত ইকো-সিস্টেমের অন্তর্ভুক্ত কম-ভারী গ্যালাক্সিগুলি, ছায়াপথের উপ-গ্যালাক্সিগুলির তুলনায় অন্য পথে বিবর্তিত হয়েছে। যেমন, অ্যান্ড্রোমিডার উপ-গ্যালাক্সিগুলির অর্ধেকগুলি যেন একটাই তলে রয়েছে বলে মনে হচ্ছে, তারা একই মুখে আবর্তিত হচ্ছে। কেন যে এরকমটা ঘটল তার হদিশ এখনো মিলছে না। এছাড়া অ্যান্ড্রোমিডার মধ্যে আছে একদল বামন গ্যালাক্সি, আমাদের ছায়াপথে যাদের দেখা মেলে না। খুবই গোড়ার দিকে তাদের তারকাগুলো গড়ে উঠেছিল, কিন্তু তাই বলে তারপর থেমে যায়নি। গ্যাসের একটা সঞ্চয় থেকে রসদ নিয়ে তারা খুব ধীরগতিতে অনেক সময় নিয়ে নক্ষত্র গঠন করেই চলেছিল। বামন গ্যালাক্সিদের ক্ষেত্রে এটা আদৌ প্রত্যাশিত নয়। কম্পিউটার সিমুলেশন করেও বোঝা যাচ্ছে না এর প্রকৃতি। হয়তো বছর পাঁচেক পরে যখন দ্বিতীয় পর্যায়ের চিত্রমালা আসবে তখন এর উত্তর মিলবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

one × 2 =