অ্যালজাইমার রোগের জন্য কী ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ দায়ী?

অ্যালজাইমার রোগের জন্য কী ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ দায়ী?

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা‌
Posted on ২০ ডিসেম্বর, ২০২৩

সাম্প্রতিক কিছু বছরে, ক্রমবর্ধমান সংখ্যক বৈজ্ঞানিক গবেষণা থেকে এক উদ্বেগজনক অনুমান উঠে আসছে- অ্যালজাইমার রোগ কেবল একটি রোগ নয়, এটি একটি সংক্রমণ। যদিও এই সংক্রমণের সঠিক প্রক্রিয়া নিয়ে গবেষকরা এখনও অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছে, তবে গবেষণায় দেখা গেছে যে অ্যালজাইমারের বিস্তার আমাদের ভাবনাকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছে। ২০১৯ সালে প্রকাশিত এক গবেষণা থেকে জানা গেছে যে অ্যালজাইমার রোগের কারণ ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ যা মাড়ির রোগ থেকে আসে। লুইসভিল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক মাইক্রোবায়োলজিস্ট জ্যান পোটেম্পারের নেতৃত্বে একটি গবেষণাপত্রে, গবেষকরা জানিয়েছেন যে মৃত অ্যালজাইমার রোগীদের মস্তিষ্কে পোরফিরোমোনাস জিঞ্জিভালিস নামে এক ধরণের ব্যাকটেরিয়া পাওয়া গেছে যা মাড়ির রোগ- পেরিয়ডনটাইটিস-এর কারণ।
ইঁদুরের সাথে পৃথক পরীক্ষায় দেখা গেছে জীবাণু দ্বারা মুখের ভিতরে সংক্রমণের ফলে মস্তিষ্কেও ব্যাকটেরিয়া কলোনি বিস্তার করে এবং অ্যামাইলয়েড বিটা (Aβ) নামে এক ধরণের আঠালো প্রোটিন যা সাধারণত অ্যালজাইমারের সাথে যুক্ত তার নিঃসরণ বৃদ্ধি পায়। বিজ্ঞানীরা ভাবছেন তাদের গবেষণার এক নতুন দিশা উন্মোচিত হয়েছে। তারা মনে করছেন গ্রাম-নেগেটিভ প্যাথোজেন, পি. জিঞ্জিভালিস এবং অ্যালজাইমারের মধ্যে কোনো যোগসূত্র রয়েছে। এছাড়াও, দলটি অ্যালজাইমার রোগীদের মস্তিষ্কে ব্যাকটেরিয়া দ্বারা নিঃসৃত জিঞ্জিপেইন নামক বিষাক্ত এনজাইম শনাক্ত করেছে, যা রোগের দুটি পৃথক চিহ্নিতকারীর সাথে সম্পর্কযুক্ত: টাউ প্রোটিন এবং ইউবিকুইটিন নামক একটি প্রোটিন ট্যাগ। মৃত ব্যক্তি, যাদের কখনই অ্যালজাইমার রোগ নির্ণয় করা হয়নি, তাদের মস্তিষ্কে গবেষকরা এই বিষাক্ত জিঞ্জিপেইন এনজাইম শনাক্ত করেছেন। আর এই তথ্যটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ পূর্বে অ্যালজাইমার ও পি. জিঞ্জিভালিস সংযুক্ত থাকলেও মাড়ির রোগ অ্যালজাইমারের কারণ কিনা, বা ডিমেনশিয়ার কারণে মানুষ মুখের যত্ন নিতে অক্ষম হয়ে পরে কিনা তা অজানা থেকে গেছে। ইঁদুরের উপর পরীক্ষায় দেখা গেছে যে COR388 নামক একটি যৌগ, মস্তিস্কের ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের লোড কমাতে পারে, পাশাপাশি অ্যামাইলয়েড-বিটা উৎপাদন হ্রাস করতে পারে এবং স্নায়ুর প্রদাহ কমাতে পারে। গবেষকদের মতে আমাদের অপেক্ষা করতে হবে এবং দেখতে হবে ভবিষ্যতের গবেষণা এই যোগসূত্র সম্পর্কে কী তথ্য দেয়, তবে গবেষণা সম্প্রদায় আশাবাদী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

nine + 7 =