অ্যাস্ট্রোসাইট:একই অঙ্গে দুই রূপ

অ্যাস্ট্রোসাইট:একই অঙ্গে দুই রূপ

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৬ জুলাই, ২০২৫

মাইক্রোগ্লিয়াল কোষ হল স্নায়ুতন্ত্রের সৈনিক। মস্তিষ্ক বিপদে পড়লেই, এরা প্রদাহজনক সাইটোকাইন নামক রাসায়নিক অস্ত্র ছুড়ে দেয় এবং শুরু হয় প্রদাহ। তবে মস্তিষ্কের আরেক রহস্যময় চরিত্র অ্যাস্ট্রোসাইট ঠিক কী করে তা ঘিরেই ছিল ধোঁয়াশা। সম্প্রতি একদল বিজ্ঞানী এই নিঃশব্দ খেলোয়াড়টিকে প্রকাশ্যে এনেছেন। নেতৃত্বে রয়েছেন ড. গৌরব সিংহল, ইউনিভার্সিটি অব উইসকনসিন। তাদের গবেষণা জানাচ্ছে, অ্যাস্ট্রোসাইট শুধু স্নায়ু-কোষের সহায় নয়, বরং তারা সিন্যাপ্সকে (নিউরনদের সংযোগস্থল) মজবুত রাখে, নিউরনদের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে, এবং মস্তিষ্ক-আহরিত নিউরোট্রফিক ফ্যাক্টর (BDNF) ও FGF-2 প্রভৃতি উপাদান নিঃসরণ করে নিউরনের বিকাশে ভূমিকা রাখে। তবে আশ্চর্য বিষয় হলো, যখন অ্যাস্ট্রোসাইটের গঠন বা কাজ ব্যাহত হয়, তখনই শুরু হয় বিষণ্ণতার মতো মানসিক রোগের সূচনা। গবেষকদের মূল পর্যবেক্ষণ ছিল- ক) অ্যাস্ট্রোসাইট স্নায়ু কোষের মাঝে ‘ত্রিমাত্রিক সিন্যাপ্স’ গঠন করে সঠিক যোগাযোগ বজায় রাখে। খ) তারা মস্তিষ্কে আয়নের ভারসাম্য রক্ষা করে, যা নিউরনের বার্তা আদান-প্রদানের জন্য একান্ত গুরুত্বপূর্ণ। গ) অ্যাস্ট্রোসাইটের পরিবর্তিত আচরণ দুর্বল স্নায়ু সংযোগ এবং বিষণ্ণতার কারণ। তবে আসল মোড়টা তখনই আসে যখন মাইক্রোগ্লিয়া সক্রিয় হয়ে TNF-α ও IL-1 নামক এমন উপাদান ছাড়ে যা প্রদাহ সৃষ্টি করে। এই সংকেত পেয়ে অ্যাস্ট্রোসাইট আরও প্রদাহ সৃষ্টিকারী রাসায়নিক ছাড়তে থাকে। ফলে প্রদাহ আরও বেড়ে যায়। এছাড়া, গবেষণা বলছে, অ্যাস্ট্রোসাইটের ভিতরে ক্যালসিয়ামের মাত্রা বাড়লে তারা ATP ছাড়ে। এই ATP -ই আবার মাইক্রোগ্লিয়াকে উত্তেজিত করে। এই চক্র চলতেই থাকে, যতক্ষণ না মাইক্রোগ্লিয়া কোষের মৃত্যু হয়। ল্যাকটেট ডিহাইড্রোজেনেজ A (একটি উৎসেচক যা শরীরের কোষগুলিতে শক্তি উৎপাদনের জন্য জরুরি) অ্যাস্ট্রোসাইটে ল্যাকটেট তৈরি করে, যা নিউরনের উদ্দীপনা বজায় রাখতে সাহায্য করে। ল্যাকটেট আবার DNA-র হিস্টোন প্রোটিনের গায়ে বসে হিস্টোন ল্যাকটাইলেশন ঘটায়, যা নির্দিষ্ট জিন চালু বা বন্ধ করে দেয়। এর মাধ্যমেই অ্যাস্ট্রোসাইট, প্রদাহে সহায়ক রূপে রূপান্তরিত হয়। তাহলে দেখা যাচ্ছে, অ্যাস্ট্রোসাইট কখনো বন্ধু, কখনো শত্রু। এই কোষ যদি নিয়ন্ত্রিত না হয়, তাহলে মস্তিষ্ক নিজেই নিজের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে। তবে এই গবেষণা থেকে দেখা যায় যে, বিষণ্ণতার মতো জটিল মানসিক ব্যাধির অন্তরালে রয়েছে এইসব নীরব ঘাতকদের হাত। কিন্তু ইতিবাচক ভাবে ভাবলে, ভাবাই যায় ভবিষ্যতে বিষণ্ণতা চিকিৎসায় এই অ্যাস্ট্রোসাইটই হতে পারে নতুন আশা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

5 × two =