
গবেষকরা দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রাচীন মানব পুর্বপ্রজন্মের হাত ব্যবহার সংক্রান্ত নতুন যে তথ্য আবিষ্কার করেছেন তা থেকে তাদের বিভিন্ন কর্মদক্ষতা ও আরোহণ ক্ষমতা সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়। আমেরিকান মিউজিয়াম অফ ন্যাচারাল হিস্ট্রির গবেষক সামার সৈদার নেতৃত্বে পরিচালিত এই গবেষণায় বিভিন্ন বিজ্ঞানী অংশগ্রহণ করেন। তারা আঙুলের হাড়ের গঠনের যে বৈচিত্র্য বিশ্লেষণ করেছেন, তা প্রমাণ করে যে দক্ষিণ আফ্রিকার হোমিনিনরা( আদি মানব বংশ) শুধুমাত্র বিভিন্ন জিনিস ধরার দক্ষতা অর্জন করেছিল তা নয়, বরং তাদের আরোহণ ক্ষমতাও ছিল।
এই নতুন গবেষণার মূল কেন্দ্রে রয়েছে দুটি আদি মানব জীবাশ্মের হাতের কঙ্কাল, যা দক্ষিণ আফ্রিকায় আবিষ্কৃত হয়েছে। প্রথমটি অস্ট্রালোপিথেকাস সেদিবার হাত, যা ২০১০ সালে মালাপাতে আবিষ্কৃত হয়। এটি আনুমানিক ২০ লক্ষ বছরের পু্রোনো এবং দ্বিতীয়টি হোমো নালেদির কঙ্কাল, যা ২০১৫ সালে রাইজিং স্টার গুহার গভীরে পাওয়া যায়। এটি আনুমানিক ২.৫ লক্ষ বছরের পুরোনো বলে নির্ধারিত হয়েছে। দেখা গেছে , এদের হাতের গ্রিপ (শক্ত করে আঁকড়ে ধরা) বিভিন্ন প্রকার কাজের দক্ষতার নির্দেশ দিত। যেমন- হাতিয়ার ধরা , গাছে ওঠা ইত্যাদি।
এদের হাড়ের অভ্যন্তরীণ গঠন পরীক্ষা করে গবেষকরা স্পষ্ট ধারণা দিয়েছেন যে অস্ট্রালোপিথেকাস সেদিবার হাতের কিছু অংশ বাঁদরের মতো, আবার কিছু অংশ মানুষের মতো। বিশেষ করে তার বুড়ো আঙুল এবং কড়ে আঙুল মানুষের মতো ছিল, যা সূক্ষ্ম কাজ করার ইঙ্গিত দেয়। অন্যদিকে, হোমো নালেদির হাতের কাঠামোরও কিছু অংশ ছিল মানুষের মতো, আবার কিছু অংশ বাঁদরের মতো, যা বিভিন্ন প্রকারের গ্রিপ নির্দেশ করে। গবেষক সামার সৈয়দা বলেন, যে এ. সেদিবা এবং এইচ. নালেদির আঙ্গুলের কর্টিকাল হাড়ের গঠন ভিন্ন ভিন্ন কার্যকরী সংকেত দেখায়। সেদিবাদের বেশিরভাগ আঙ্গুলের প্রক্সিমাল এবং মধ্যবর্তী ফ্যালাঞ্জেসের মধ্যে কর্টিকাল হাড়ের গঠন অনেকটা এপদের মতো। তবে এর বুড়ো আঙুল ও কড়ে আঙুলের হাড় অনেকটা মানুষের মতো। যদি মানুষের বুড়ো আঙুলের সাথে তাদের আঙ্গুল একত্রিত করি, তখন দেখা যায়, এ. সেদিবা তার হাত হাতিয়ার ব্যবহার এবং অন্যান্য কাজের পাশাপাশি আরোহণের জন্যও ব্যবহার করতো।
অপরদিকে,হোমো নালেদির প্রক্সিমাল ফ্যালাঞ্জেসের (হাতের তালুর সাথে যুক্ত হাড়) বৈশিষ্ট মানুষের মতো , কিন্তু তার মধ্যবর্তী ফ্যালাঞ্জেসের (আঙুলের মাঝের অংশের হাড়) বৈশিষ্ট্য এপ-এর মতো । এই ধরণটি অপ্রত্যাশিত ছিল এবং এটি ইঙ্গিত করে যে হোমো নালেদি সম্ভবত তার আঙুলের বিভিন্ন অংশ বিভিন্নভাবে ব্যবহার করত। এই ধরনের চাপ প্রয়োগের ধরণ কেবলমাত্র নির্দিষ্ট গ্রিপের সাথে সম্পর্কিত, যেমন- বর্তমানকালে ব্যবহৃত ‘ক্রিম্প গ্রিপ’ যা শিলা পার্বতিকরা ব্যবহার করে। সেখানে আঙুলের ডগা দিয়েই পৃষ্ঠটি ধরা হয়। হোমো নালেদির আঙুলের হাড়গুলিও ছিল অস্বাভাবিক বেশি বাঁকানো। বিশেষত একটি হোমিনিন আমাদের প্রজাতি হোমো সাপিয়েন্স-এর আদি, সদস্যদের সাথে একই সময়ে বাস করত। এটি আরও একটি ইঙ্গিত যে হোমো নালেদি তার হাতের ব্যবহার আংশিকভাবে চলাচলের জন্যও করত।
এই গবেষণাটি দক্ষিণ আফ্রিকার মানব বিবর্তনের এক নতুন দিকের উন্মোচন ঘটায়। এটি মানব পুর্বপ্রজন্মর হাতের ব্যবহার নিয়ে দীর্ঘদিনের বিতর্ককে নতুন মাত্রা দেয়। দেখায় যে হাতের ব্যবহার কোনো একটি নির্দিষ্ট কাজের জন্য একমুখী ছিল না, বরং বিভিন্ন অভিযোজন প্রক্রিয়া চলছিল যার ফলে হাতের ব্যবহার ও আরোহণ দক্ষতার ভারসাম্য রক্ষা হয়েছে।