আইনস্টাইনকে ভুল প্রমাণ করে নোবেল জিতলেন তিন পদার্থবিদ

আইনস্টাইনকে ভুল প্রমাণ করে নোবেল জিতলেন তিন পদার্থবিদ

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৫ অক্টোবর, ২০২২

ফ্রান্সের প্যারিস-সেকলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালেন আসপেক্ট, অষ্ট্রিয়ার ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যান্টন জেলিঙ্গার আর অ্যামেরিকার জন ক্লাউসার। এ বছর পদার্থবিদ্যায় নোবেল পেলেন একসাথে এই তিন বিজ্ঞানী। পুরস্কারমূল্য ১০ মিলিয়ন সুইডিশ ক্রোনর।
বিষয়টা ছিল কোয়ান্টাম এন্ট্যাঙ্গেলমেন্ট। মানে? যোজন দূরে থাকা একাধিক কণার মধ্যে অদৃশ্য জোট। একটাকে পাল্টাতে গেলে অন্যটাও পাল্টে যায়। আলোর জন্যে দায়ী ফোটন কণিকার ক্ষেত্রে এই জোট বাঁধার প্রবণতার প্রমাণ দিয়েছেন ঐ তিন বিজ্ঞানী। কিন্তু কোয়ান্টাম এন্ট্যাঙ্গেলমেন্ট নিয়ে বিতর্ক আজকের না। এক শতকের বেশি সময় ধরে চলছে। এমনকি আলবার্ট আইনস্টাইনও কোয়ান্টাম গবেষকদের ভালো চোখে দেখতেন না। তাঁর মনে হত কণার এমন খামখেয়ালি আচরনের নেপথ্যে বিশেষ কোনও প্রাকৃতিক সূত্র অবশ্যই আছে। তিনি কল্পনা করতেন কিছু গোপন চলরাশির বা হিডেন ভেরিয়েবেলের, যারা কিনা যে কোনও রকম পরিমাপের চেষ্টাকে লুকিয়ে থেকে প্রভাবিত করতে থাকে। ঐ গোপন চলরাশির মাধ্যমেই হয়তো লক্ষ লক্ষ মাইল দূরে থেকেও একাধিক কণার মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের কাজটা ঘটে।
আইনস্টাইনের এই মতামত খণ্ডন করে উত্তর আয়ারল্যান্ডের বিজ্ঞানী জন স্টুয়ার্ট বেল ১৯৬৪ সালে প্রতিষ্ঠা করেন বেল অসমীকরণ। যদিও সেটা ছিল একটা তাত্ত্বিক পরীক্ষা মাত্র। অ্যামেরিকার জন ক্লাউসার সত্তরের দশকেই বেল সাহেবের ধারণাকে চাক্ষুষ আলোর ক্ষেত্রেও ব্যবহারিকভাবে প্রমাণ করেছিলেন। কিন্তু ঐ পরীক্ষাতেও কিছু খামতি ছিল, যাকে বেল লুপহোলস বলে। ফ্রান্সের অ্যালেন আসপেক্ট এক দুর্ধর্ষ গবেষণায় বেলের অসমীকরণের প্রায় সব ফাঁক পূরণ করে দেন। তারপর মাঠে নেমেছেন অষ্ট্রিয়ার বিজ্ঞানী জেলিঙ্গার। কোয়ান্টাম এন্ট্যাঙ্গেলমেন্ট এর ধ্যানধারণাকে যে সত্যিই প্রয়োগ করা যায় অত্যাধুনিক যন্ত্র নির্মাণে, সেটা হাতেনাতে দেখিয়ে দিয়েছেন উনি। সারি সারি জোটবদ্ধ কণাকে সম্মিলিত করে নেটওয়ার্ক তৈরি করা যায়। স্বভাবতই দূরত্বের প্রতিবন্ধকতা একেবারেই আর থাকে না এই প্রযুক্তিতে।
নোবেলের মঞ্চে যদিও তিন গবেষকই একবাক্যে বলেছেন, এখনও পথ হাঁটা বাকি।