আইবিএস বা ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোমের শিকার অনেকেই। আমাদের খাদ্যাভ্যাসে বাওয়েল মুভমেন্টের সমস্যা হয়েই থাকে। সাধারণত কেটে-ছড়ে-পুড়ে যাওয়া, হার্টের বা কিডনির সমস্যা, পেটের ক্রনিক কোনও সমস্যা থাকলে তার শারীরবৃত্তীয় বদল ঘটে। কিন্তু আইবিএসের ক্ষেত্রে তেমন কোনও বদল হয় না কারণ অন্ত্রের দেওয়ালে কোনও ক্ষত বা পেটের কোথাও কোনও শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তন হয় না। আইবিএস তাই কোনো গঠনগত সমস্যা নয়, ফাংশনাল ডিজ়অর্ডার। তাই কোনও ডাক্তারি পরীক্ষা করে এ রোগ ধরা পড়ে না। আইবিএসে আক্রান্ত অনেক রোগী বিশ্বাস করেন কিছু নির্দিষ্ট খাবার, যেমন গ্লুটেন বা গম, তাদের উপসর্গকে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে, তাই অনেকসময় দেখা যায় তারা কোনও ডায়েটিশিয়ান বা ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই নিজেরা তাদের খাবার তালিকা থেকে নির্দিষ্ট কিছু খাবার বাদ দিয়ে দেয়।
প্রায় এক-তৃতীয়াংশ আইবিএস রোগীর খাদ্যাভ্যাস ঠিক থাকে না এবং তাদের মধ্যে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার এক ধরনের বদ্ধ সংস্কার তৈরি হয় যাকে ইংরেজিতে অর্থোরেক্সিয়া বলে। ফলে এটি একটি “নোসেবো প্রভাব” সৃষ্টি করতে পারে, যেখানে রোগীর নেতিবাচক প্রত্যাশার কারণে তার চিকিত্সায় খারাপ প্রভাব পড়ে যা হয়তো অন্যথায় এতটা খারাপ প্রভাব ফেলত না।
ম্যাকমাস্টার ইউনিভার্সিটির ফার্নকম্ব ইনস্টিটিউটের গবেষকরা দেখেন যদিও কিছু রোগীর ক্ষেত্রে গ্লুটেন বা গম শরীরে খারাপ প্রভাব ফেলে তবে একই সংখ্যক রোগীদের আবার নোসেবো প্রতিক্রিয়াও দেখা যায়। গবেষণায় আরও দেখা গেছে যে সব রোগীদের আগে থেকে জানানো হয়েছে যে তাদের গ্লুটেনযুক্ত খাবার দেওয়া হয়েছে তাদের অন্যদের তুলনায় আরও বেশি করে উপসর্গ দেখা গেছে এবং খারাপ প্রভাব পড়েছে। গবেষকদের মতে খাদ্যনালী, নার্ভ-সহ সার্বিক ভাবে গোটা শরীরের সব কিছুই নিয়ন্ত্রণ করে মস্তিষ্ক। সেখান থেকেই সিগনাল আসে ও তার ফলে বাওয়েল মুভমেন্ট দ্রুত হয় । তার পরেই আসে মলত্যাগের বেগ। কিন্তু এই সিগনালিংয়েই ফাংশনাল সমস্যা থাকলে তৈরি হয় আইবিএস। খাবারের প্রতি রোগীর ভয়, বা নোসেবো প্রভাব কমাতে এবং সাধারণভাবে আইবিএস উপসর্গের চিকিৎসার জন্য বর্তমানে মনস্তাত্ত্বিক চিকিৎসাকে ক্রমবর্ধমানভাবে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। তবে গবেষকরা মনে করেন যে আইবিএস একটি জটিল ব্যাধি যা বিভিন্ন কারণে বেড়ে যেতে পারে, এবং অনেক রোগীর ক্ষেত্রে মানসিক চিকিত্সা সম্ভবত একটি কার্যকর চিকিত্সা প্রক্রিয়া বলে মনে করা যেতে পারে।