আইল্যাশ এক্সটেনশন- বিপদের সাতকাহন

আইল্যাশ এক্সটেনশন- বিপদের সাতকাহন

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৪ জুলাই, ২০২৪
আইল্যাশ

“প্রহর শেষের আলোয় রাঙা সেদিন চৈত্র মাস তোমার চোখে দেখে ছিলাম আমার সর্বনাশ”। রবীন্দ্রনাথ থেকে শুরু করে ক্ষণেকের কবি, সবার কাছে আমাত্য বিষয় ‘চোখ’। আর এই চোখের শোভা বাড়াতে যখন চোখের সর্বনাশ-ই ডেকে নিয়ে আসে কেউ! আর্টিফিশায়াল ইন্টালিজেন্স এর যুগে, আর্টিফিশায়াল আইল্যাশ (কৃত্রিম চোখের পাতা) নতুন কিছু নয়। বরং দিন দিন আরও বেশি সংখ্যক মানুষ, বিশেষত মহিলারা প্রসাধনী চিকিত্সার দিকে আগ্রহ দেখাচ্ছেন কারণ এগুলো সার্জারি ছাড়াই হয়।
কিন্তু বিপদ ধাওয়া করছে পিছু পিছু। আমাদের চোখের পাতায় থাকা রোম, চোখের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। এককথায়, চোখের সংস্পর্শে আসা বিভিন্ন ধূলোকণা, ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস থেকে চোখকে রক্ষা করে। এই ব্যক্টেরিয়া বা ভাইরাস এর মধ্যে এমনও কিছুও আছে, যা শরীরে প্রবেশ করলে মানুষের মৃত্যুও ঘটাতে পারে। এর সাথে চোখের সাদা অংশকে সজল ও পিচ্ছিল রাখতে সাহায্য করে এই রোমগুলি। কৃত্রিম আইল্যাশ এক্সটেনশনগুলি একটি বিশেষ আঠা দিয়ে চোখের আসল পাতাগুলির সাথে আটকানো থাকে। এক্সটেনশনে স্বতন্ত্র ফাইবার ব্যবহার করা হয়। এগুলি সিন্থেটিক (যেমন নাইলন) বা প্রাকৃতিক ফাইবার (ঘোড়ার চুল, সিল্ক বা মিঙ্ক) দিয়ে তৈরি। দুর্ভাগ্যবশত, এই বিশেষ আঠা থেকেই চোখের বিপদ ঘনিয়ে আসতে পারে।
ক্রমবর্ধমান আইল্যাশ এক্সটেনশন এর চাহিদা, অনেকসময় বাজারে লাইসেন্সবিহীন এবং স্বল্পপ্রশিক্ষিত পরিষেবা প্রদানকারীদের, একটা আখড়া তৈরী করছে। গবেষণা বলছে ৪০% মহিলার এই কৃত্রিম আইল্যাশ এক্সটেনশন থেকে অ্যালার্জি হয়েছে। আঠার থেকে শরীরে অ্যালার্জি হতে পারে কিনা তা জানতে অ্যালার্জি টেস্ট করানো বাধ্যতামূলক। কিন্তু এমন স্বল্পপ্রশিক্ষিতরা হয়ত জানেননা, টেস্টের প্রয়োজনীয়তা বা পদ্ধতিটি কি! অনেকসময় টেস্ট হলেও চোখের মতন সংবেদনশীল জায়গায় এর প্রতিক্রিয়া কি হতে পারে, তা বোঝা দায়।
চোখের পাতার ফলিকলে দুই ধরনের গ্রন্থি থাকে। চোখের চারপাশে ব্যাকটেরিয়া তৈরি হওয়া রুখতে, এই দুই গ্রন্থি অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান তৈরি করে। কৃত্রিম আইল্যাশ এক্ষেত্রে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদানে বাঁধ সাজে। আর ব্লেফারাইটিস-এর ফলে ব্যাকটেরিয়া তৈরি হয়। তাই জন্য কৃত্রিম ল্যাশের ব্যবহারে আঞ্জনি বা কনজাংটিভাইটিস হতে পারে। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, এক্সটেনশন থেকে ৬০% বেশি মহিলাদের কেরাটোকনজাংটিভাইটিস হয়। সিন্থেটিক এই ফাইবার কিংবা কমদামী এক্সটেনশন আঠা ফর্ম্যালডিহাইড, চোখের কর্নিয়া এবং কনজাংটিভা সংক্রামিত করতে পারে। চোখ ফুলে গিয়ে শুরু হতে পারে প্রবল যন্ত্রণা। আর বলাবাহুল্য, চোখের দৃষ্টি-সমস্যা তখন অদৃষ্ট হবে না।
আরও আছে- স্বাস্থ্যসম্মত বিধি না মানলে, হানা দিতে পারে ল্যাশ মাইটও। গ্লুকোমায় ব্যবহৃত হওয়া সেরাম প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন চোখের পাতার রোম ঘন, বড়ো করতে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এর থেকে চোখের মণির রঙ পালটে যেতে পারে। চোখের চারপাশের ফ্যাট সরে গিয়ে একটা গর্তের মতো দেখতে লাগে। এইসমস্ত উদ্বেগের পরিপ্রেক্ষিতে, চিকিত্সকরা মনে করছেন, এইসব প্রসাধনী পদ্ধতির ঝুঁকি সম্পর্কে মানুষের সচেতন হওয়া উচিত। আর আইল্যাশ লাগানোর জন্য স্বাস্থ্যবিধি সম্মত লাইসেন্স প্রাপ্ত পার্লারে যাওয়া প্রয়োজন।