চারদিকে সবুজ পাহাড়। তার মাঝে বিশাল বড় চার পাঁচটা ধাতব যন্ত্র। সেগুলোর মাথার ওপর আরও বিশাল বিশাল পাখা! আপনমনে অবিরাম সেই পাখাগুলো ঘুরে চলেছে। তাদের কাজ বায়মণ্ডল পরিষ্কার করা। মানে বাতাসে থাকা কার্বন-ডাই-অক্সাইডকে টেনে নিয়ে একদম মাটির ভেতর ঢুকিয়ে দেওয়া। কাজটাকে বলা হয় ‘ডাইরেক্ট এয়ার ক্যাপচার’। কয়েক বছর আগেও এই প্রযুক্তিকে বিশেষজ্ঞরা বলতেন ‘সোনার পাথর বাটি’! আজ বাতাস থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড নামক বিষ সরানোর জন্য এই ‘ডাইরেক্ট এয়ার ক্যাপচার’ প্রক্রিয়াই মানুষের কাছে অন্যতম প্রধান হাতিয়ার হয়ে দাঁড়িয়েছে। আইসল্যান্ডের এই প্লান্টগুলিকে বলা হয় ‘ওরকা প্লান্ট’। বিশ্বে এত বড় ডাইরেক্ট এয়ার ক্যাপচার প্লান্ট আর কোথাও নেই। প্রত্যেক বছর ওরকা প্লান্ট বাতাস থেকে বছরে ৪ হাজার মেট্রিক টন কার্বন ডাই-অক্সাইড টেনে মাটির ভেতর ঢুকিয়ে দিচ্ছে। আর পৃথিবী জুড়ে ডাইরেক্ট এয়ার ক্যাপচার প্রক্রিয়ায় বাতাস থেকে বছরে ৯ হাজার মেট্রিক টন কার্বন-ডাই-অক্সাইড মাটির ভেতরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ইন্টারন্যাশনাল এর্নার্জি এজেন্সির বিজ্ঞানীরা তাও বলছেন, পরিমাণটা খুবই কম! এই শতকের মাঝামাঝি সময় বায়ুমণ্ডল থেকে বছরে ১০ হাজার মেট্রিক টন কার্বন ডাই অক্সাইড পরিষ্কার করতে পারলে তবে দূষণের পরিমাণ বলার মত কমতে পারে। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্লোবাল এনার্জি পলিসির এক গবেষক জুলিও ফ্রিডমান জানিয়েছেন আইসল্যান্ডের ওরকা প্লান্টের মত বিশাল এয়ার ক্যাপচার প্লান্ট পৃথিবী জুড়ে অন্তত দুই থেকে তিনটে তৈরি হওয়া প্রয়োজন আগামী ৩০ বছরের মধ্যে। তেল বা গ্যাসের প্লান্টের মত। না হলে পৃথিবী জুড়ে বায়ুমণ্ডলে থাকা কার্বন-ডাই-অক্সাইড পরিষ্কার করে কঠিন হয়ে যাবে। ডাইরেক্ট এয়ার ক্যাপচার প্লান্ট প্রথম তৈরি হয়েছিল সুইৎজারল্যান্ডে, ২০১৭-য়। সেই প্লান্ট বছরে ৯০০ মেট্রিক টন কার্বন-ডাই-অক্সাইড পরিষ্কার করত।
বাতাসকে বিষমুক্ত করার লড়াই সেই শুরু। বিজ্ঞানীরা বলছেন লড়াই আরও জোরদার করতে হবে ২০৩০-এর মধ্যে। না হলে বড় রকমের ক্ষতি অবশ্যম্ভাবী।