আগ্নেয়গিরির অকস্মাৎ বিস্ফোরণ কেন?

আগ্নেয়গিরির অকস্মাৎ বিস্ফোরণ কেন?

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২ জুন, ২০২৪

২০১৮ সালে হাওয়াই দ্বীপ কেঁপে উঠেছিল পরপর ১২টা আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতে। এতে অন্তত ৭০০ বাড়ি ধ্বংস হয়েছে, ২০০০-এর বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। আগ্নেয়গিরির লাভার ফোয়ারা বিজ্ঞানীদের আবার মনে করিয়ে দিয়েছে আগ্নেয়গিরি কী করতে সক্ষম। ওরেগন বিশ্ববিদ্যালয়ের আগ্নেয়গিরিবিদ লেইফ কার্লস্ট্রম ব্যাখ্যা করেছেন, এই অগ্ন্যুৎপাতের ক্রমানুসারী সারির মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য মিল ছিল। সাধারণত আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত ক্রমবর্ধমান ম্যাগমার চাপ বা বাষ্পীভূত ভূগর্ভস্থ জলের চাপ, অথবা ভূগর্ভস্থ উভয় শক্তির সংমিশ্রণ থেকে শুরু হয় বলে মনে করা হয়। কিন্তু ছয় বছর আগে কিলাউয়া আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণে এর কোনোটাই ঘটেনি। বিশ্বের সবচেয়ে সক্রিয় আগ্নেয়গিরি তার অগ্ন্যুৎপাত শুরু করার আগে তার তাপমাত্রা বা রসায়নে নাটকীয়ভাবে কোনো পরিবর্তন দেখায়নি।
২০১৮ সালে, ম্যাগমার প্রবাহ কিলাউয়ার মূল সিস্টেম থেকে বেরিয়ে এসে পূর্ব দিকে ছড়িয়ে পড়ে, একটা ১০ কিলোমিটার লম্বা ভূগর্ভস্থ টানেল তৈরি করে। এই সময়ে এই অঞ্চলে একের পর এক ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। গবেষকদের মডেল বলছে, এই লাভা টানেলের ছাদ যেকোনো একটা ভূমিকম্পের কারণে যদি হঠাৎ ধসে পড়ে তবে এটা ছিটকে পড়ে ভূগর্ভস্থ চাপ তৈরি করতে পারে যার ফলে বায়ুমণ্ডলীয় ধোঁয়া, লাভা আগ্নেয়গিরির মুখ থেকে ছিটকে উঁচুতে ছুটে যেতে পারে। একটা আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের পর আগ্নেয়গিরির নীচে ম্যাগমা চেম্বারে উপস্থিত ম্যাগমা বেরিয়ে যাওয়ার পর একটা বড়ো খাত তৈরি হয়। কারণ ম্যাগমা চেম্বার খালি হয়ে গেলে, চেম্বারের ভিতরে ম্যাগমার চাপ হ্রাস পায় আর তার ফলে আগ্নেয়গিরির পার্শ্বদিক শীর্ষ অংশ ভিতরের দিকের খাতে ধসে পড়ে, একে ক্যালডেরা বলে। কিলাউয়া বিস্ফোরণ যখন ঘটেছিল তখন আগ্নেয়গিরির চূড়া ক্যালডেরা ধসের প্রাথমিক পর্যায়ে ছিল।
এই আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত বিজ্ঞানীদের এই নতুন ট্রিগারের কথা ভাবাচ্ছে। আগ্নেয়গিরির এই গর্তের পতন অন্যান্য অতীতের অগ্ন্যুৎপাতেরও বৈশিষ্ট্য, যা মোটামুটি একটা সাধারণ ঘটনা ধরে নেওয়া যেতে পারে। নেচার জিওসায়েন্সে প্রকাশিত এই গবেষণা জানাচ্ছে বিজ্ঞানীদের এই জাতীয় অগ্ন্যুৎপাতের পেছনে কী বৈশিষ্ট্য কাজ করে তার ধারণা থাকলে তা ভবিষ্যৎ বিস্ফোরণ মোকাবিলা করতে প্রস্তুত করবে।