আচার্য জগদীশচন্দ্রের আত্মভোলা স্বভাবের কথা সর্বজনবিদিত। একইসঙ্গে এই তথ্যও সর্বজনবিদিত যে তিনি আবিষ্কার করেছিলেন রেডিও। ভুল! জগদীশচন্দ্র সম্পূর্ণ রেডিও আবিষ্কার করেননি! রেডিওর যে অংশের আবিষ্কার তিনি করেছিলেন সেটাও এক বিরল আবিষ্কার। তা হল বেতার সংকেত রিসিভ করার জন্য যে রিসিভারের প্রয়োজন হত তাকে বলা হত কোহেরার। সেই কোহেরার আবিষ্কারকের নাম আচার্য জগদীশচন্দ্র বোস। আর এখানেই তার আত্মভোলা স্বভাব এবং এক বড় ভুল! নিজের জার্নালে নিজের নামে কোহেরার আবিষ্কারের কথা প্রকাশও করে ফেলেন। সঙ্গে সঙ্গে সেই তথ্য পাবলিক ডোমেনে চলে যায়। তখন সেটা যে কেউ ব্যবহার করতে পারে। সেটা একমাত্র পেটেন্ট নিয়ে আটকানো যায়। পেটেন্ট আগে নিয়ে রাখলে পুরো লেখাটা প্রকাশ করার প্রয়োজন হয় না, পেটেন্ট নম্বরটার উল্লেখ করলেই হয়। তার ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছিল। আত্মভোলা স্বভাব, মানুষকে বিশ্বাস করার মানসিকতার খেসারৎ দিতে হয়েছিল জগদীশচন্দ্রকে! মার্কনি রেডিওর অ্যান্টেনা, ট্রান্সমিটার, ডায়োড, অ্যামপ্লিফায়ার, টার্নিং কয়েল-সব তৈরি করে ফেলেছিলেন। শুধু পারছিলেন না কোহেরার তৈরি করতে! বোসের পেপার পড়ে তিনি ওই পদ্ধতিতে তৈরি করে ফেললেন কোহেরার। তারপর আটলান্টিকের এপার থেকে ওপারে পাঠালেন বেতার তরঙ্গ। রেডিও আবিষ্কারের সঙ্গে জুড়ে গেল তারই নাম!
সেটা ছিল জগদীশচন্দ্রের কাছে একটা শিক্ষা। তাই ১৯০৪-এ জগদীশ্চন্দ্র সলিদ স্টেট ডায়োড ডিটেক্টর তৈরি করার সময় পেপার পাবলিশের আগেই নিয়ে রেখেছিলেন পেটেন্ট।
জগদীশ্চন্দ্রের রেডিও আবিষ্কার নিয়ে বাঙালির বড় অভিমান আছে! মার্কনি তার গবেষণাকে অনুকরণ করে রেডিও আবিষ্কার করেছিলেন, জগদীশচন্দ্র তাই যথার্থ সমান পাননি-এই ধারণা আজ শুধু আমজনতার মনে নেই, বাংলার স্কুলের পাঠ্যবইয়েও ঢুকে পড়েছে! কিন্তু ১৮৯৭-এ বেতারের কোহেরার আবিষ্কার নিয়ে ফরাসি আকাদেমি অফ সায়েন্সের তাকে লেখা চিঠি আমাদের জানিয়েছে কী পরিমাণ শ্রদ্ধা ও সম্মান তাকে ইউরোপের বিজ্ঞান সমাজ করেছে! ফরাসি আকাদেমি অফ সায়েন্স বলেছিল জগদীশ্চন্দ্র এক বিরল প্রতিভা! তার কাজেই তিনি ভাস্বর!