আণবিক স্ব-সমাবেশের সূক্ষ্মতর রূপ

আণবিক স্ব-সমাবেশের সূক্ষ্মতর রূপ

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৬ আগষ্ট, ২০২৫

আণবিক বিজ্ঞানে, স্ব-সমাবেশ (যা স্ব-সংগঠন নামেও পরিচিত) এমন এক প্রক্রিয়াকে বর্ণনা করে যার মাধ্যমে অণুগুলি স্বতঃস্ফূর্তভাবে একত্রিত হয়ে সুশৃঙ্খল কাঠামো গঠন করে। সাম্প্রতিক এক সফল গবেষণায় জাপানের বিজ্ঞানীরা এই প্রক্রিয়াটিকে সূক্ষ্মতর রূপ দেওয়ার একটি উপায় আবিষ্কার করেছেন। তাঁরা দেখেছেন, অবশিষ্ট আণবিক গুচ্ছর একটি ছোট পরিমাণও – যা ‘অবশিষ্ট সমষ্টি’ নামে পরিচিত – আলোয় সাড়া-দেওয়া অণুগুলির স্বয়ং-একত্রীভবনকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করতে পারে। চিবা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েট স্কুল অফ ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অধ্যাপক শিকি ইয়াগাই এই গবেষণার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন । তাছাড়া সহকারী অধ্যাপক তাকুহো সাইতো ( গবেষণার সময় নাগোয়া বিশ্ববিদ্যালযয়ে ), দাইসুকে ইনোয়ে এবং তোহোকু বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ইউইচি কিতামোতোরও গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল। তাদের গবেষণার ফলাফল নেচার ন্যানোটেকনোলজিতে প্রকাশিত হয়েছে ।

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, বিজ্ঞানীরা এই স্ব-একত্রিত সমষ্টিগুলির আকার এবং গঠন আরও ভালভাবে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কাজ করে চলেছেন যাতে তাদের বৈশিষ্ট্যগুলি নির্দিষ্ট কাজের উপযুক্ত হয়ে ওঠে। কিন্তু স্ব-একত্রীকরণ একটি অত্যন্ত গতিশীল প্রক্রিয়া। এখানে অণুগুলি ক্রমাগত সংযুক্ত হয় আর ভেঙে যায়। তাই এটিকে খুব সাবধানে নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। গবেষণা দলটি কাইরাল, আলোয় সাড়া-দেওয়া অ্যাজোবেনজিনের স্ব-সমাবেশের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। এটি প্রাকৃতিকভাবে বাঁ-হাতি হেলিকাল সমষ্টি গঠন করে। কিন্তু দলটি আবিষ্কার করেছে যে দ্রবণের মধ্যে অল্প পরিমাণে অবশিষ্ট সমষ্টির উপস্থিতি সমাবেশ প্রক্রিয়ায় এক বিরাট পরিবর্তন আনে। তার ফলে বাঁ-হাতি হেলিকাল সমষ্টি ডান-হাতি হেলিকাল সমষ্টি গঠনের দিকে এগিয়ে যায়। অধিকন্তু, আলোয় সাড়া দিতে সক্ষম হওয়ার কারণে, আলোর সংস্পর্শ নিয়ন্ত্রিত আণবিক সমাবেশটির সময়কেও বদলে দেয়। এই দুটি বৈশিষ্ট্যকে একসাথে সুনির্দিষ্টভাবে নিয়ন্ত্রণ করার পদ্ধতি ব্যবহার করে, গবেষকরা প্রয়োজন অনুসারে বাঁ-হাতি বা ডান-হাতি হেলিকাল সমষ্টি গঠনের হেরফের করতে সফল হয়েছেন। বর্ণালী এবং আণবিক মডেলিং গবেষণায় এঁরা দেখেছেন যে কাঁচি আকৃতির অ্যাজোবেনজিন অণুকে ঘরের তাপমাত্রায় একটি জৈব দ্রাবকে দ্রবীভূত করা হলে এটি একটি বন্ধ কাঁচির মতো ভাঁজ করা কাঠামো তৈরি করে যা আরও একটি হেলিকাল সমাবেশে প্রসারিত হয়।

এই অণুগুলো আলোক-বিক্রিয়াশীল। তাই স্তূপীকৃত হেলিকাল কাঠামোটি দুর্বল অতিবেগুনী আলোর সংস্পর্শে এলে হেলিকাল সমাবেশটি পৃথক পৃথক অণুতে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় । পরে দৃশ্যমান আলোর সংস্পর্শে এসে তারা আবার হেলিকাল কাঠামোতে একত্রিত হয়। মজার বিষয় হল, কিছু নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে, হেলিকাল সমষ্টিগুলি বাঁ-হাতির বদলে ডান-হাতি বলে প্রমাণিত হয়েছিল, কিন্তু শক্তিশালী অতিবেগুনী আলোর সংস্পর্শে আসার পরে দৃশ্যমান আলো মূল বাঁ-হাতি হেলিকাল সমষ্টিগুলিকে ফিরিয়ে আনে। অতএব, অতিবেগুনী এবং দৃশ্যমান আলোর তীব্রতাকে কাম্য মাত্রায় নিয়ে গিয়ে গবেষকরা বাঁ- এবং ডান-হাতি হেলিকাল কাঠামোর মধ্যে হেরফেরকে সফলভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছেন। এই হেরফের অবশিষ্ট সমষ্টিগুলির প্রভাবের উপর নির্ভরশীল।
সামগ্রিকভাবে, এই গবেষণার লক্ষ্য ছিল অবশিষ্ট সমষ্টিগুলির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা অন্বেষণ করা । এছাড়াও এই গবেষণা ব্যাখ্যা করেছে যে কীভাবে আলো-সক্ষম সূক্ষ্ম-বুনোটের গঠন মারফত নতুন কার্যকর উপকরণ তৈরি করা যায়। মেটিরিয়াল বিজ্ঞানে এ থেকে আশাব্যঞ্জক অন্তর্দৃষ্টি লাভ করা গেছে।

সূত্র : “Inversion of supramolecular chirality by photo-enhanced secondary nucleation” by Takuho Saito, Daisuke Inoue, Yuichi Kitamoto, Hiroki Hanayama, Takatoshi Fujita, Yuki Watanabe, Masayuki Suda, Takashi Hirose, Takashi Kajitani and Shiki Yagai, 11 April 2025, Nature Nanotechnology

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

seventeen − 9 =