আত্মীয়তা ছাপানো বন্ধুত্ব

আত্মীয়তা ছাপানো বন্ধুত্ব

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১০ মে, ২০২৫

বিজ্ঞানীদের অনুসন্ধানে উঠে আসা একটা অদ্ভুত ঘটনা হল, পাখিরাও নাকি মানুষের মতোই বন্ধুত্ব গড়তে পারে, যেটা আবার দীর্ঘস্থায়ীও হয়। এ যেন এক নতুন বিশ্ব, যেখানে আত্মীয়তা রক্তের বন্ধনের মাধ্যমে নয় পারস্পরিক সম্পর্ক স্থাপনের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে চলে।
উত্তর আফ্রিকার স্টারলিং পাখিরা পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে দৃঢ় , দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্ব তৈরি করতে বিশেষ ভাবে সক্ষম। এদের প্রত্যাশা তাৎক্ষনিক পরিশোধের নয়, দীর্ঘমেয়াদী সমর্থনের ।এদের জগত আর পাঁচটা পাখিদের মতো অতটা সাধারণ নয়, এরা চেনা পরিচিতদের প্রাধান্য কম দেয় বললেই চলে। মানুষের মতো সামাজিক গোষ্ঠীর জীবরা যেমন সমাজে পরিবার, আত্মীয় ও অনাত্মীয়দের নিয়ে বাস করে এরাও তার অনুরূপ। এরা জিনগত সম্পর্কের ঊর্ধ্বে উঠে আত্মীয়, অনাত্মীয় নির্বিশেষে সকলের সাথেই সুসম্পর্ক গড়ে তোলে , একে অপরকে সহায়তা করে। গবেষকরা এই পাখিদের মধ্যে এক ভিন্ন ধরনের বন্ধন লক্ষ্য করেছেন। এরা পারস্পরিক সম্পর্কের ওপর নির্ভর করে, আত্মীয়তায় নয়।
তবে, এই পাখিরা সারাজীবন শুধু সাহায্যকারী বা শুধু প্রজননকারী থাকে না, সময় বিশেষে এরা নিজেদের ভূমিকাও পাল্টায় খুব দ্রুত।এই ভূমিকা বদলও পরস্পরকে সাহায্যের দ্বার উন্মোচন করে ।একটি পাখি যে প্রজনন ঋতুতে অপরকে সাহায্য করছিল , প্রজননকারী হিসেবে পরবর্তীতে সে অপরের থেকেও সাহায্য পেতে পারে ।
গবেষণায় দেখা গেছে , স্থানীয় পুরুষ স্টারলিং পাখিরা বেশি নিজেদের পরিচিতদের সাহায্য করে, কিন্তু পরিযায়ী পুরুষ পাখিগুলি আবার পরিচিত,অপরিচিত নির্বিশেষে সকলকেই সাহায্য করে। কিন্তু তাই বলে আত্মীয়তা সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক হয় না । আবার,স্থানীয় স্ত্রী পাখিগুলি খুব কম প্রজননকারী হয় তাই তাদের পরস্পরের সাহায্যের সুযোগ খুব কম থাকে। কিন্ত পরিযায়ী স্ত্রী পাখিরা প্রায়শই সাহায্যকারী ও প্রজননকারী দুই ভূমিকাই পালন করে। তার ফলে অনাত্মীয় অপরিচিতদের সাথে বন্ধন তৈরি হয়।
বিজ্ঞানীদের অনুসন্ধানের পরিধি শুধু আফ্রিকার স্টারলিং এর ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ ছিল না, অন্যান্য পাখি প্রজাতি, যেমন সবুজ উডহোপো, হোয়াইট ফ্রন্টেড বি ইটার এরাও পারস্পরিক সাহায্য প্রদর্শনের ধারণায় বিশ্বাসী।
এখন প্রশ্ন হল এরা কেন অপরিচিতদের বেশি সাহায্য করে, আত্মীয়রা কাছাকাছি থাকা সত্ত্বেও? এর সম্ভাব্য কারণগুলি হতে পারে –উত্তর আফ্রিকার সাভানাতে জীবন ও প্রজননের অনিশ্চয়তা , শিকারীদের হুমকি অথবা খাদ্যের ঘাটতি।
এদের নিয়ে অনুসন্ধানটি বন্ধুত্বের এক বিরল আভাস দেয় এবং শেখায় যে পশু-পাখি নির্বিশেষে সকল সামাজিক গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে এটাই সত্য যে আজ কাউকে সাহায্য করলে, আগামীতে সাহায্য পাওয়াও যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three + nine =