বেশিরভাগ সময় আমরা আদর করে সদ্যজাত শিশুদের গালে, কপালে বা ঠোঁটে চুমু খেয়ে থাকি যা শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য বেশ ক্ষতিকারক হতে পারে। এমন কথাই জানাচ্ছে এই গবেষণা। শিশুর জন্মের সাথে সাথে তার ইমিউন সিস্টেম পূর্ণরূপে বিকশিত হয় না, দুর্বল থাকে, তাই তাদের শরীরে নানা সংক্রামক রোগ বাসা বাঁধতে পারে। ফলে ভালোবেসে আদরের চুমুও সন্তানের বিপদের কারণ হয়ে উঠতে পারে। প্রথম তিন মাস বা তারও বেশি সময়, শিশুর ইমিউন সিস্টেম প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় অনেক কমজোরি থাকে। তাদের শরীরে নিউট্রোফিল এবং মনোসাইটের মতো সহজাত সংক্রমণ-প্রতিরোধী কোশের সংখ্যা বড়োদের তুলনায় কম থাকে। ফলে যে সংক্রমণ প্রাপ্তবয়স্ক বা একটু বড়ো বাচ্চাদের মধ্যে হালকা উপসর্গ সৃষ্টি করে তা সদ্যজাতদের ক্ষেত্রে জীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ হতে পারে। এমনই একটি ভাইরাসজনিত রোগের উদাহরণ হার্পিস ভাইরাস। আর হার্পিস ভাইরাস এক বার শরীরে ঢুকলে তা সহজে যেতে চায় না। স্নায়ুকোষের মধ্যে আজীবন সুপ্ত অবস্থায় থেকে যেতে পারে। মাঝেমধ্যে বেরিয়ে ত্বকে ক্ষত, জ্বালাযন্ত্রণা ও নানা চর্মরোগ তৈরি করতে পারে। অনেকেরই জিভে, ঠোঁটে, গালে হার্পিস হয়। সেই রোগ নিয়ে যদি কোনও শিশুকে চুম্বন করা হয়, তা হলে তার শরীরেও ভাইরাস দ্রুত ঢুকে সংক্রমণ ঘটাতে পারে। তাই সাবধান থাকতেই হবে। যদি হারপিস শুধুমাত্র শিশুর চোখ, মুখ বা ত্বককে প্রভাবিত করে তবে তা অ্যান্টিভাইরাল চিকিত্সার মাধ্যমে নিরাময় হতে পারে। কিন্তু যদি ভাইরাসটি শিশুর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে প্রভাবিত করে, তবে সংক্রমণ অনেক বেশি গুরুতর, এমনকি প্রাণঘাতীও হতে পারে। শিশুর জন্মের পর প্রথম চার সপ্তাহে তারা হারপিসের সংক্রমণের জন্য অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।
আবার বড়ো বাচ্চা ও প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় নবজাতকদের সংক্রামক ব্যাকটেরিয়া অনেক বেশি আক্রমণ করে বিশেষ করে এমন ব্যাকটেরিয়া যা হোস্টের শরীরের কোশে প্রবেশ করে বেঁচে থাকতে পারে, যেমন গ্রুপ বি স্ট্রেপ্টোকোকি (জিবিএস)। প্রায়শই এই ব্যাকটেরিয়া কোনোরকম অসুস্থতা সৃষ্টি না করে হোস্টের খাদ্যনালীতে বাস করে। যার শরীরে এই ভাইরাস রয়েছে তিনি যদি কোনও সদ্যোজাতকে চুমু খান, তা হলে সংক্রামক জীবাণু শিশুর শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে। জিবিএস সংক্রমণের ফলে শিশুদের মধ্যে সেপসিস, নিউমোনিয়া, মেনিনজাইটিস এবং রক্তের সংক্রমণ হতে পারে। অন্যদিকে চুমু খাওয়ার সময়ে লালার মাধ্যমে ই-কোলাই ব্যাক্টেরিয়া ঢুকে যেতে পারে শিশুর শরীরে। প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ক্ষতিকর না হলেও এই ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ শিশুর জন্য প্রাণঘাতীও হতে পারে। তাই মা-বাবা বা পরিবারের সদস্যদের সতর্ক থাকতে হবে, অন্যদের বারণ করতে হবে যাতে তারা শিশুকে চুম্বন বা স্পর্শ না করে। গবেষকেরা বলছেন, শিশুকে কোলে নেওয়ার আগে হাত ধুয়ে নেওয়া জরুরি। বাইরে থেকে ফিরেই শিশুর গায়ে হাত দেওয়ার আগে হাত ভালো করে সাবান দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। আর শিশুর মুখে কোথাও চুম্বন করা একেবারেই ঠিক নয়। এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে পরিবারের সকলকেই। সর্বদা মনে রাখবেন যে শিশুরা সংক্রমণের জন্য খুব ঝুঁকিপূর্ণ।