আদিম মানুষের ঘোড়া পালন

আদিম মানুষের ঘোড়া পালন

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২১ অক্টোবর, ২০২৪

সম্প্রতি নেচার জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণা জানিয়েছে যে মানুষ ঘোড়াকে গৃহে পালন করার চেষ্টা দুবার করেছে –তবে প্রথমবারের প্রচেষ্টাটি ব্যর্থ হয়। প্রাচীন এবং আধুনিক ঘোড়ার জিনোম বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা সেই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত চিহ্নিত করেছেন যখন মানুষ প্রথম ঘোড়ার শক্তি ব্যবহার করেছিল যুদ্ধে, বাণিজ্যে, এবং প্রাচীন বিশ্ব জুড়ে যোগাযোগকে পুনর্নির্মাণ করতে। বলা হয়েছে ইউরেশিয়াতে প্রায় ২২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ব্যাপকভাবে ঘোড়ার ব্যবহার শুরু হয় তবে পূর্বে ভাবা হয়েছিল তার চেয়ে অনেক আগেই ঘোড়াকে পোষ মানানো হয়েছিল।
যখন থেকে মানুষ পশুপালন শুরু করে তখন থেকেই, ইতিহাসে নতুন যুগের সূত্রপাত। গবেষকরা মনে করেন আজ আমরা যে পৃথিবীতে বাস করছি তার অন্যতম রূপকার হল ঘোড়া। জিনোমিক প্রমাণ থেকে জানা যায় যে প্রায় ৫৫০০ বছর আগে এশিয়ায়, বিশেষ করে উত্তর কাজাখস্তানে, বোতাই সংস্কৃতি প্রথম ঘোড়া পালন শুরু করে। তবে তারা ঘোড়াকে পালন করে তার মাংস এবং দুধের জন্য। ঘোড়াকে তারা পরিবহন হিসেবে ব্যবহার করেনি, এবং সেই নির্দিষ্ট অঞ্চলের বাইরে ঘোড়া কখনও দেখা যায়নি। মঙ্গোলিয়ার ফেরাল প্রজেওয়ালস্কি প্রজাতির বন্য ঘোড়া এই বোতাই ঘোড়ার বংশধর। প্রায় ৪৭০০ বছর আগে পশ্চিম রাশিয়ায় ঘোড়া পালন করা হয়, এবং পরিবহনের জন্য তাদের ব্যাপক ব্যবহার শুরু হয়। সমীক্ষা অনুসারে, প্রায় ৪২০০ বছর আগে ইউরেশিয়ার বাইরে ঘোড়াকে গৃহপালিত পশু রূপে পালন করা শুরু হয়। আর তারপরই ধীরে ধীরে আধুনিক গৃহপালিত ঘোড়া জন্ম নেয়। গবেষকরা এই সময়ের কাছাকাছি ঘোড়ার প্রজননের ক্ষেত্রে একটি পরিবর্তন শনাক্ত করেছেন কারণ সেখানে হয়তো মানুষের হস্তক্ষেপ ঘটে, উন্নত বৈশিষ্ট্যযুক্ত ঘোড়ার জন্ম হয় । ঘোড়াকে ব্যবহার করে মানুষ অনেক বেশি দূরত্ব দ্রুত অতিক্রম করতে শুরু করে। যোগাযোগ, বাণিজ্য দ্রুত হয়। ইউরোপ ও এশিয়া জুড়ে সাংস্কৃতিক বিনিময় দ্রুততর হয়। ঘোড়ায় টানা রথ এবং অশ্বারোহীরা যুদ্ধক্ষেত্রে নতুন দিশা দেখায়। গবেষকদের অনুমান ঘোড়ায় টানা চাকাযুক্ত রথের উদ্ভাবন, এই পশুটিকে বিভিন্ন অঞ্চলে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। মানব ইতিহাসে এক নতুন যুগের সূচনা হয়, পৃথিবীতে ব্যবধান ছোটো হয়ে ওঠে, দূর আরও নিকট হয়। এই যুগটি উনিশ শতকের শেষের দিক পর্যন্ত স্থায়ী ছিল, তারপর চালু হয় ইঞ্জিন। আর এক যুগের সূচনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

4 × 5 =