মানবসভ্যতার ইতিহাসে ঘোড়ার ভূমিকা নিয়ে নতুনভাবে কিছু বলার প্রয়োজন নেই। আদিমকাল থেকে মানুষের সমস্ত বড় কাজে অন্যতম সহায়ক প্রাণী ঘোড়া। কী কৃষিক্ষেত্রে, কী যুদ্ধক্ষেত্রে, কী দৈনন্দিন জীবিকার প্রয়োজনে, কী বিনোদনের প্রয়োজনে-মানুষ আর ঘোড়া প্রায় সমার্থক আদিমকাল থেকেই! মানবসভ্যতার যা ইতিহাস আজ পর্যন্ত লেখা হয়েছে তাতে ঘোড়ার ইতিহাসও একই গৌরব ও ঐতিহ্য নিয়েই লেখা যেত!
গবেষকরা এখন সেই খোঁজে নেমেছেন। মানুষ এবং ঘোড়ার ইতিহাস কবে থেকে মিশে গেল? কোন সময় থেকে ঘোড়া মানুষের কাছে অপরিহার্য বস্তুগুলোর মধ্যে অন্যতম হয়ে গেল? ফ্রান্সের সেন্টার ফর অ্যানথ্রোপবায়োলজি আন্ড জেনমিক্সের গবেষাণাগারে ২৭৩টি প্রাচীন ঘোড়ার হাড়ের ডিএনএ বিশ্লেষণ করা হয়েছে অনেকদিন ধরে। গবেষকরা প্রাথমিকভাবে অনুমান করেছেন আধুনিক ঘোড়া, যা মানুষ দেখে আসছে তার সভ্যতার শুরু থেকে, তার উৎসস্থল রাশিয়ার (বর্তমানে) দক্ষিণ-পশ্চিমের বিশাল অঞ্চল জুড়ে। কবে প্রথম তাদের দেখা গিয়েছিল সেই নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে মতভেদ আছে। বিজ্ঞানীদের একদল বলেছেন প্রায় ৫ হাজার বছর আগে দক্ষিণ-পশ্চিম রাশিয়ায় প্রথম আধুনিক ঘোড়া দেখা গিয়েছিল এবং পরবর্তী কয়েক দশকের মধ্যে ইউরেশিয়া জুড়ে তারা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। বিজ্ঞানীদের সেই দল আরও জানিয়েছে, প্রাচীন যে বন্য ঘোড়া ছিল তাদের সংখ্যাকে দমন করেই আধুনিক ঘোড়া তাদের বংশবৃদ্ধি ঘটিয়েছিল।
ইউরেশিয়ায় ছড়িয়ে পড়া এবং রাশিয়া উৎসস্থল, সেই নিয়ে মতভেদ নেই। কিন্তু অরল্যান্ডো লুডোভিচের মত আণবিক প্রত্নতত্ববিদ এবং তার দলের যে পর্যবেক্ষণ সম্প্রতি নেচার ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছে তাতে আদিম ঘোড়ার সময়কালের সঙ্গে আগের বিজ্ঞানীদের বলা সময়কালের আকাশপাতাল তফাৎ। লুডোভিচ জানিয়েছেন, মানুষ এবং ঘোড়ার ইতিহাস ৫০ হাজার বছরের! রাশিয়া এবং কাস্পিয়ান সমুদ্রের চারপাশের অঞ্চল জুড়ে যে আধুনিক ঘোড়া ৫ হাজার বছর আগে দেখা গিয়েছিল তারা আসলে এসেছিল স্পেন থেকে মঙ্গোলিয়ায়। সেখান থেকে পরবর্তীকালে তাদের বাসস্থান হয় রাশিয়ায়।
‘