আধুনিক মানুষের বেঁচে থাকার রহস্য

আধুনিক মানুষের বেঁচে থাকার রহস্য

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২ আগষ্ট, ২০২৪
আধুনিক মানুষের বেঁচে থাকার রহস্য

প্রায় ৬ মিলিয়ন বছর আগে শুরু হওয়া মানব ইতিহাসে অন্তত ১৮ টা মানব প্রজাতির জন্ম হয়েছে, যাদের সম্মিলিতভাবে হোমিনিন বলা হয়। বর্তমানে আধুনিক মানুষ (হোমো স্যাপিয়েন্স) মানব গোষ্ঠীর একমাত্র জীবিত প্রতিনিধি। অন্যান্য মানব গোষ্ঠী বিলুপ্ত হলেও কেন হোমো স্যাপিয়েন্স-রা বেঁচে গেল? মোটামুটি তিন লক্ষ বছর আগে আফ্রিকা, ইউরোপ এবং এশিয়ার চারপাশে হোমো স্যাপিয়েন্স সহ, কমপক্ষে নয়টি হোমো প্রজাতি বাস করত, তবে হোমো স্যাপিয়েন্স বাদে সবাই বর্তমানে বিলুপ্ত। নিয়ান্ডারথাল এবং ডেনিসোভান নামে পরিচিত হোমো গোষ্ঠী হোমো স্যাপিয়েন্স-এর সাথে হাজার হাজার বছর ধরে বাস করত, তাদের মধ্যে আন্তঃপ্রজনন হয়েছিল। ডিএনএর বিট থেকে এর প্রমাণ অনেক মানুষের মধ্যে রয়েছে। কিন্তু ডেনিসোভান এবং নিয়ান্ডারথালরাও একসময় বিলুপ্ত হয়ে যায়। চল্লিশ হাজার বছর যাবত হোমো স্যাপিয়েন্স হল শেষ হোমিনিন গোষ্ঠী।
হোমিনিন গোষ্ঠীদের মধ্যে সাধারণ বিষয় ছিল বাইপেডালিজম বা দ্বিপদে হাঁটা। বাইপেডালিজম হোমিনিনদের গুরুত্বপূর্ণ বিবর্তনমূলক পদক্ষেপ তবুও হোমিনিন প্রজাতি আরডিপিথেকাস, অস্ট্রালোপিথেকাস, প্যারানথ্রপাস বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। এই প্রজাতিগুলোর আবির্ভাব আর বিলুপ্ত হওয়ার সময় কিন্তু আলাদা আলাদা। এদের বিলুপ্তির পেছনে নানা কারণ ছিল, পরিবেশ পরিবর্তন, খাদ্য ও সম্পদের জন্য প্রতিযোগিতা, জনসংখ্যার কম ঘনত্ব। আধুনিক মানুষের পূর্বপুরুষের প্রতিযোগিতায় টিকে যাওয়ার পেছনে অন্যতম কারণ, তাদের মস্তিষ্কের বড়ো আকার। বৃহত্তর মস্তিষ্ক ব্যবহার করে হাতিয়ার তৈরির ক্ষমতা, বৌদ্ধিক ক্ষমতা, আচরণগত নমনীয়তা, সামাজিকতা, ও সমস্যা সমাধান করতে পারার মতো দক্ষতা তাদের মধ্যে দেখা গিয়েছিল। এরা মৃতদেহ কবর দিতে পারত, আশ্রয় বানাতে পারত, ছুঁড়ে মারার হাতিয়ার বানাতে সক্ষম ছিল, আগুনকে নিয়ন্ত্রণ করতে শিখেছিল। এগুলো তাদের অন্যান্য হোমো প্রজাতির তুলনায় আরো স্থিতিস্থাপক, অভিযোজিত করেছিল। হারকোর্ট-স্মিথ বলেন, প্রাচীন হাতিয়ার, শিল্প, অন্যান্য নিদর্শন থেকে বোঝা যায় যে আমাদের বৌদ্ধিক দক্ষতা, প্রযুক্তিগত দক্ষতা এবং সমস্যা সমাধান আমাদের নিকটাত্মীয়দের তুলনায় অনেক বেশি উন্নত ছিল। অন্যান্য প্রজাতির তুলনায় নমনীয় সামাজিক কৌশলগুলোও তাদের সাহায্য করেছে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে। নানা স্থানে ছড়িয়ে পড়ে নিজেদের প্রযুক্তিও ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা সমস্ত ধরনের পরিবেশে জৈবিক, সাংস্কৃতিক, সামাজিকভাবে মিশে যেতে পেরেছি।
আফ্রিকার বাইরে হোমো স্যাপিয়েন্স-রা ছড়িয়ে পড়লে তাতে সম্পদ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে অন্যান্য প্রজাতির উপর চাপ সৃষ্টি হয়। আমাদের প্রজাতি ঘোরাফেরা, মিলনে খুব সফল ছিল, যা এখনও আমাদের বেঁচে থাকার কারণ। দেখা গেছে আফ্রিকা থেকে উদ্ভব হয়ে তুষার যুগে ইউরোপে আমাদের গোষ্ঠী বেঁচে ছিল। কিন্তু নিয়ান্ডারথাল ঠান্ডা স্থানে জন্মালেও তুষার যুগের সাথে মানিয়ে নিতে পারেনি। বিশেষজ্ঞদের মতে আমাদের গোষ্ঠীর বেঁচে থাকার পেছনে প্রকৃতির র‍্যান্ডম চয়েসও কাজ করেছে। আফ্রিকা ও অন্যান্য স্থানের মানুষের জিন পরীক্ষা করে দেখা গেছে আজ থেকে ৮ লক্ষ বছর আগে আমাদের গোষ্ঠী বিলুপ্ত হওয়ার মুখে দাঁড়িয়েছিল। প্রায় দশ হাজার বছর ধরে মাত্র ১৩০০ জন বেঁচেছিল। বিশেষজ্ঞরা সাবধান করেছেন, এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ আমাদের বেঁচে থাকা নিশ্চিত নয়। আমাদের নমনীয়তা, সহযোগিতামূলক দক্ষতা আমাদের নতুন চ্যালেঞ্জ থেকে বাঁচতে সাহায্য করে।