
টেনেসির গবেষকরা খুঁজে পেয়েছেন প্রায় ৫০ লক্ষ বছর আগের এক হরিণের জীবাশ্ম। এটি উত্তর আমেরিকার প্রাচীনতম হরিণ প্রজাতিগুলির মধ্যে অন্যতম। এই আবিষ্কার নতুন করে জানাচ্ছে, কীভাবে হরিণরা মহাদেশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল এবং কেন তারা হাজারো বছর ধরে অ্যাপালাচিয়ান বনের প্রতীক হয়ে টিকে আছে। টেনেসির গ্রে ফসিল সাইট অ্যান্ড মিউজিয়াম দীর্ঘদিন ধরেই টেপির, গণ্ডার, এমনকি মাস্টোডনের মতো প্রাণীর জীবাশ্মের জন্য পরিচিত। কিন্তু এবার সেখানে পাওয়া গেল একেবারেই পরিচিত এক হরিণের জীবাশ্ম। এই প্রজাতির নাম ইওকোয়িলিয়াস জেনট্রিওরাম। আগে কেবল ফ্লোরিডা থেকেই এদের জীবাশ্ম পাওয়া যেত। এখন টেনেসিতেও এর খোঁজ মেলায় বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারছেন, হরিণ কত দ্রুত উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছিল। গবেষকেরা
একটি কচি হরিণের খুলি ( অংশ), একটি দাঁত (উপরের মোলার) এবং কয়েকটি হাড় খুঁজে পেয়েছেন। এসব মিলিয়ে তাঁরা গড়েছেন সেই প্রাচীন প্রাণীর ছবি। প্রায় ৫০ লক্ষ বছর আগের এই হরিণকেই মনে করা হচ্ছে আজকের হোয়াইট-টেইলড ডিয়ার-এর পূর্বপুরুষ, যে এখনও অ্যাপালাচিয়ান অরণ্যে বিরাজ করছে। তবে একটা বড় পার্থক্য আছে। প্রাচীন এই হরিণ আজকের তুলনায় অনেক ছোট ছিল। গবেষক অলিভিয়া উইলিয়ামস বলেন, “এই প্রাচীন হরিণ আধুনিক আমেরিকান প্রজাতির তুলনায় অনেক ছোট। এখনকার হরিণদের মধ্যে কেবল ফ্লোরিডার ‘কি ডিয়ার’ আর মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার ‘ব্রকেট ডিয়ার’ আকারে এত ছোট ।” জীবাশ্ম প্রমাণ বলছে, এই প্রাচীন হরিণরা দ্রুত পশ্চিমের প্যাসিফিক অরণ্য থেকে পূর্বের অ্যাপালাচিয়ান উচ্চভূমি পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছিল। জলবায়ু ও পরিবেশ বদলালেও তারা মানিয়ে নিয়েছে, কিন্তু অন্য বড় তৃণভোজীরা হারিয়ে গেছে। গবেষক জোশুয়া স্যামুয়েলস জানান, “অ্যাপালাচিয়ান বনে প্রায় ৫০ লক্ষ বছর ধরে হরিণ একই পরিবেশগত ভূমিকা পালন করছে। জলবায়ুর নাটকীয় পরিবর্তনেও তারা টিকে আছে, যেখানে অন্য প্রাণীরা বিলীন হয়ে গেছে।” এ কেবল একটি জীবাশ্ম নয়, বরং অ্যাপালাচিয়ার অতীত আর বর্তমানের মধ্যে সংযোগ। সম্প্রতি এখানে বিশাল উড়ন্ত কাঠবিড়ালি আর শক্ত চোয়ালের সালাম্যান্ডারের জীবাশ্মও পাওয়া গেছে। ইস্ট টেনেসি স্টেট ইউনিভার্সিটি (ETSU)–র বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এই সব আবিষ্কার শুধু প্রাণীর ইতিহাস নয়, অঞ্চলের পূর্ণাঙ্গ জীববিবর্তনের উত্তরাধিকারকেও তুলে ধরছে। কলেজ অব আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেসের ডিন ড. জো বিডওয়েল বলেন, “এমন আবিষ্কার আমাদের অ্যাপালাচিয়ার অতীতকে বর্তমানের সঙ্গে যুক্ত করে। গবেষকেরা কেবল প্রজাতির ইতিহাস খুঁজছেন না, তাঁরা এ অঞ্চলের জীবনের বিবর্তনকেও উন্মোচন করছেন।”
সূত্র : “Early Pliocene Deer from the Gray Fossil Site, Appalachian Highlands, Tennessee, USA” by Joshua X. Samuels, Olivia R. Williams, Shay Maden and Blaine W. Schubert, 27 July 2025, Palaeontologia Electronica.
DOI: 10.26879/1560