আনকোরা নতুন জিন!

আনকোরা নতুন জিন!

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

সম্প্রতি এক নতুন পথ-খুলে-দেওয়া গবেষণায় আগে থেকেই বিদ্যমান কোনো জিনের সাহায্য না-নিয়েই আনকোরা নতুন জিনের উদ্ভবের বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। মূলত এ কাজটি করেছেন চীনের শ্রীমতী লি ঝাং। জিনতত্ত্বে এর দ্বারা এক নতুন দিশার সঞ্চার হল বলে মনে করা হচ্ছে।

আনকোরা নতুন জিনের উদ্ভব কি আদৌ হয়? হলে কীভাবে হয়? অভিযোজন-নির্ভর বিবর্তনের প্রক্রিয়ায় কী তার ভূমিকা? বহুকাল ধরে অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন, নতুন জিনের উদ্ভব কেবল ইতিমধ্যেই বিদ্যমান জিনের প্রতিরূপ থেকেই হয়। ১৯৫০-এর দশকে উদ্ভিদ জীববিজ্ঞানী স্ট্যানলি স্টিফেন্স অবশ্য ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে নতুন জিনের অবস্থান-কেন্দ্র একেবারে নতুন করেই উদ্ভূত হতে পারে। কিন্তু তখনকার প্রযুক্তিতে এ নিয়ে কাজ করা সম্ভব ছিল না। তাছাড়া বড়ো বড়ো বিজ্ঞানীরা এ সম্ভাবনা বাতিল করে দিয়েছিলেন। কিন্তু তারপর একুশ শতকে এ বিষয়ে নতুন তথ্য পাওয়া যায়। ক্যালিফর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসমষ্টি বিষয়ক জিনতাত্ত্বিক ডেভিড বেগান আমাদের চেনা ফল-মাছি ড্রসোফিলা মেলানোগাস্টর-এর শুক্রকোষে পাঁচটি সম্পূর্ণ নতুন জিন শনাক্ত করেন – তার মধ্যে চারটি এক্স-কোমোসোমে।

২০১১ নাগাদ চীনের বিজ্ঞান একাডেমিতে বিবর্তনী জিনতত্ত্ব নিয়ে কাজ করছিলেন শ্রীমতী লি ঝাং। আনকোরা নতুন জিনের উদ্ভবের বিষয়টি তাঁকে আকৃষ্ট করল। তিনি এসে যোগ দিলেন বেগান-এর ল্যাবে। লি ও তাঁর সহকর্মীরা ওই মাছির শুক্রকোষের ছ-টি আগে থেকে চেনা প্রজন (স্ট্রেন) নিয়ে কাজ শুরু করলেন। এদের মধ্যে কোনগুলো থেকে একেবারে আনকোরা নতুন জিনের উদ্ভব হতে পারে তা চিহ্নিত করলেন। মোট ১৪২টি বহুরূপী (পলিমর্ফিক) এবং ১০৬টি একরূপ আনকোরা জিন শনাক্ত করলেন তাঁরা। এদের বেশির ভাগেরই মধ্যে ছিল ১৫০টি বেস-যুগ্ম থেকে প্রোটিন তৈরি করে নেওয়ার সম্ভাবনা। বিবর্তনী প্রশ্নগুলোর আরও গভীরে গিয়ে লি এবার প্রকৃতিকে নতুন পরিপ্রেক্ষিতে দেখবার প্রয়াস পেলেন। সহ-গবেষক, বিবর্তনী জিনতাত্ত্বিক নিকোলাস স্বেতেক মেতে রইলেন এর পরীক্ষানিরীক্ষার দিকটি নিয়ে আর লি তাঁর কম্পিউটার-বিশেষজ্ঞতা কাজে লাগালেন। অবশেষে তাঁরা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।

২০১৭ সালে লি রকিফেলার বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিয়ে জোর কদমে এই আনকোরা জিনের উদ্ভবের রহস্য সমাধানের কাজ চালিয়ে যান। সেখানে নানান অভিনব প্রকৌশল কাজে লাগিয়ে তিনি এক-কোষী আর এন এ-র পর্যায়ক্রমকে কাজে লাগাতে শুরু করলেন। অণুবীক্ষণে এগুলো দেখে লি-র মনে হল, মূলত এগুলো হল এমন একগুচ্ছ কোষ যাকে ঘিরে রয়েছে দেহের অ-প্রজনন (সোমাটিক) সিস্ট। কিন্তু এদের কী করে আলাদা করা যাবে তা কেউ জানে না। হতোদ্যম না হয়ে তাঁরা কাজ চালিয়ে গেলেন। শেষ পর্যন্ত সাফল্য এল। শুক্রাণু গড়ে ওঠার বিভিন্ন পর্যায়ে আনকোরা নতুন জিন আবিষ্কার করতে সমর্থ হলেন তাঁরা। দেখা গেল এইসব জিন মোটেই এলোমেলোভাবে উদ্ভূত নয়, তারা নিবিড়ভাবে সুনিয়ন্ত্রিত, এমনকী নিতান্ত অপরিণত পর্যায়েও। তাঁরা দেখলেন, এদের মধ্যে কতকগুলি জিন বিশেষ বিশেষ ধরণের কোষেই প্রকাশ পায়; কতকগুলি আবার অনেক আগেই, একেবারে শুক্রকোষ বিকাশের পর্যায় থেকেই সক্রিয় হয়ে ওঠে। আবিষ্কৃত এই তথ্যসম্ভার তাঁরা সকলের ব্যবহারের উপযোগী একটি ডেটাবেসে উন্মুক্ত করে দিয়েছেন।

 

সূত্র : https://www.the-scientist.com/the-rise-of-de-novo-genes-from-scratch-to-survival-73361?fbclid=IwdGRzaAM5CRdjbGNrAzkI_2V4dG4DYWVtAjExAAEe47CmykQ-wHUnDDZtDBzvotSs-_tmSpcWPT5kMEa9HAABus0XfuraOHkOXX4_aem_vSlzG8isD4QP7kI_1D8C6A&sfnsn=wiwspwa

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

four × 1 =