আন্দিজে অজানা প্রজাতির ব্যাঙ

আন্দিজে অজানা প্রজাতির ব্যাঙ

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৬ জুলাই, ২০২৫

পেরুর উত্তরে আন্দিজ পার্বত্য অঞ্চলে তিনটি নতুন ব্যাঙের প্রজাতি আবিষ্কৃত হয়েছে, যারা আকারে মাত্র বুড়ো আঙুলের ছাপের সমান। ঝরঝরে জলপ্রপাত, স্যাঁতসেঁতে ব্রোমেলিয়াড গাছ ও শৈবাল ঢাকা খাড়াই পাহাড়ে এসব ব্যাঙের বাস। গবেষক জার্মান শাভেজ জানান, এই ক্ষুদ্র ও অতি সাধারণ ব্যাঙগুলোকে দেখলেই বোঝা যায় আন্দিজ পর্বতমালার জীববৈচিত্র্য সম্পর্কে আমরা এখনও কত কম জানি।
২০২১ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে গবেষক দল চরম আবহাওয়া মোকাবিলা করে ৯ হাজার ফুটের বেশি উচ্চতায় গিয়ে এই ব্যাঙগুলোকে শনাক্ত করেন। কোরডিলেরা দে হুয়ানকাবাম্বা অঞ্চলের এই বিচ্ছিন্নতা নতুন নতুন প্রজাতি গড়ে তুলেছে। এখানেই প্রিস্টিমান্টিস গণের নতুন তিন সদস্য পি. চিঙ্গুয়েলাস, পি. নুনেজকোর্টেজি, এবং পি. ইয়োনকে খুঁজে পাওয়া গেছে। এরা বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বৈচিত্র্যপূর্ণ উভচর প্রজাতি। একই পাহাড়ের সদস্য হলেও ভিন্ন পরিবেশে বাস করে। কেউ খাড়া পাহাড়ের গায়ে, কেউ ঝরনার ধারে ঢাকা পাতার মধ্যে, আর সবচেয়ে ছোটটি ব্রোমেলিয়াড গাছের গভীরে আশ্রয় নেয়।
প্রিস্টিমান্টিস গণের ব্যাঙেরা ব্যতিক্রমী প্রকৃতির, কারণ এদের ব্যাঙাচি পর্যায় নেই। ডিম ফুটেই সরাসরি পরিণত ব্যাঙ বের হয়, ফলে তারা জলাশয় ছাড়াই টিকে থাকতে পারে। তবে এই বৈশিষ্ট্য তাদেরকে পরিবেশগত পরিবর্তনের প্রতি অত্যন্ত সংবেদনশীল করে তোলে।

ব্যাঙের পরিচিতি নিশ্চিত করতে তাদের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ ও তুলনা করা হয়। জিনগত পার্থক্য তিন শতাংশের বেশি হওয়ায় এগুলো নতুন প্রজাতি হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক প্রকৃতি সংরক্ষণ সংস্থা এগুলোকে প্রয়োজনের তুলনায় কম তথ্যের তালিকাভুক্ত করেছে, অর্থাৎ বিলুপ্তির ঝুঁকি নির্ধারণের মতো তথ্য এখনো নেই। অনেক সময় এমন শ্রেণিবিন্যাসে থাকা প্রজাতিগুলোই কিন্তু পরে হুমকির তালিকায় উঠে আসে।
এই ব্যাঙগুলোর বাসস্থানের চৌহদ্দি খুবই ছোট, প্রায় চার বর্গমাইলের মধ্যে সীমাবদ্ধ। তার চারপাশে কৃষিজমি ও অগ্নিকাণ্ডের ক্ষতচিহ্ন রয়েছে। পেরুতে ২০২৪ সালে ১০,৪০০টি দাবানল হয়েছে, যা একটি রেকর্ড। এর ফলে পাহাড়ি ঘাসের জমি ও বনাঞ্চল ধ্বংস হয়েছে। যার প্রভাব এই ব্যাঙগুলোর বাসস্থানের উপর পড়েছে।

গবেষকরা বলছেন, এই প্রজাতিগুলোকে রক্ষার কাজে স্থানীয় জনগণের সহযোগিতা অপরিহার্য। ছোট ছোট এলাকা সংরক্ষণ , কম ক্ষতিকারক পশুচারণ এবং সচেতনতা বৃদ্ধি এই প্রজাতিকে টিকে থাকার সময় দিতে পারে। তাহলে এদের নিয়ে আরও গবেষণা করা সম্ভব হবে এবং এরা রক্ষা পাওয়ার সুযোগ পাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three × five =