শান্ত অবস্থাতেও আগ্নেয়গিরিগুলো সুমেরু অঞ্চলের আবহমণ্ডলে প্রচুর গন্ধক ছড়ায়। এটা যে জানা ছিল না তা নয়, কিন্তু ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চালিত গবেষণা বলছে, যতটুকু ভাবা গিয়েছিল তার থেকে এরা অন্তত তিন গুণ পরিমাণ গন্ধক আবহমণ্ডলে ছাড়ে। তাঁদের এই সমীক্ষা প্রকাশিত হয়েছে জিওফিজিক্যাল রিসার্চ লেটার্স-এ। বছর দুয়েক আগে তাঁরা ১২০০-১৮০০ খ্রিস্টাব্দ পর্বে মধ্য গ্রিনল্যন্ডের কেন্দ্রীয় বরফ-তালের স্তরগুলোর মধ্যে সালফেট-মিশ্রিত সূক্ষ্মকণা-বাষ্পর মাত্রা কতটা ছিল তা বিশ্লেষণ করে দেখেছিলেন। ওই পর্বে আগ্নেয়গিরিগুলো থেকে খুব প্রবল কোনো উদ্গিরণ হয়নি, তারা মোটের ওপর নিষ্ক্রিয় ছিল। সুতরাং ওই পর্বে গন্ধকের মাত্রা কতটা ছিল তা হিসেব করে বার করতে পারলে বায়ুমণ্ডলে আগ্নেয় উদ্গিরণ-জনিত গন্ধককে অন্য উৎস থেকে আসা গন্ধক থেকে আলাদা করা সহজ হবে।
বিস্তৃত কালপর্বের পরিপ্রেক্ষিতে বিচার করে দেখা গেল, আগ্নেয়গিরিগুলোর নিষ্ক্রিয় পর্বে বায়ুতে সূক্ষ্মকণা-বাষ্পর মধ্যে যে-পরিমাণ গন্ধক থাকে তা আগ্নেয় উদ্গিরণ থেকে বেরিয়ে-আসা গন্ধকের তুলনায় ঢের বেশি। দশক-ওয়ারি হিসেব থেকে দেখা গেল, আগ্নেয়গিরির নিষ্ক্রিয় পর্বে তা থেকে যে গ্যাস বেরোয় তার মধ্যে গন্ধকের মাত্রা, সক্রিয় পর্বের উদ্গিরণের তুলনায় অন্তত দশ গুণ বেশি, কখনো কখনো তিরিশ গুণেরও বেশি। এতদিন ধারণা ছিল সামুদ্রিক অতিক্ষুদ্র শৈবালই (ফাইটো-প্ল্যাঙ্কটন) আবহমণ্ডলে গন্ধকের মাত্রা বাড়ানোর জন্য বেশি দায়ী। এবার জানা গেল, তাদের চেয়ে ঢের বেশি দায়ী আগ্নেয়গিরিগুলো। কেননা যখন বড়ো কোনো উদ্গিরণ হচ্ছে না, তখনও আগ্নেয়গিরিগুলো বায়ুমণ্ডলে প্রচুর পরিমাণ গন্ধক ছাড়ে।
এখান থেকে প্রশ্ন উঠল, তাহলে শিল্পযুগ পরবর্তী কালের মানুষই বায়ুমণ্ডল দূষণের জন্য একমাত্র দায়ী নয়। একথা ঠিক যে, মোটরগাড়ি থেকে, কারখানার চিমনি থেকে কিংবা জ্বালানি কাঠের ধোঁয়া থেকে যেসব যেসব সূক্ষ্মকণা-বাষ্প বেরোয় তারা সবাই-ই কিছু না-কিছু সৌর শক্তির পথ রোধ করে। কিন্তু স্বাভাবিক অবস্থাতেই, প্রাকৃতিক কারণেই আগ্নেয়গিরিরা যদি বায়ুতে এত বেশি পরিমাণ গন্ধকযুক্ত সূক্ষ্মকণা-বাষ্প ছাড়ে, তাহলে মানতে হবে, বিশ্ব-তাপমাত্রার ওপর মানুষের ছাড়া ধোঁয়ার কমা-বাড়ার প্রভাব যতটা ভাবা গিয়েছিল তত বেশি নয়। মুখ্য গবেষক জোঙ্গেলবোয়েড বলেছেন, “আগ্নেয় উদ্গিরণের মাত্রা বেশি হওয়ার অর্থ বায়ুতে সূক্ষ্মকণা-বাষ্পর মধ্যে সালফেটের পরিমাণের ভিত্তিমাত্রাটা বেড়ে যাওয়া। তার অর্থ, আবহাওয়ার ওপর মানুষের তৈরি সূক্ষ্মকণা-বাষ্পর প্রভাবের মাত্রা কমে যাওয়া, কখনো কখনো অর্ধেক হয়ে যাওয়া”।