আবার আসছে মহামারি?

আবার আসছে মহামারি?

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৪

বিশ্ব জুড়ে কোভিডের প্রকোপ শেষ হয়ে গিয়েছে। তবে করোনার থেকেও ‘মারাত্মক’ অতিমারি থাবা বসাতে পারে পৃথিবীর বুকে। পরবর্তী অতিমারির জন্য এখন থেকেই প্রস্তুত হতে হবে বিশ্ববাসীকে। সতর্কতা জারি করে এমনটাই জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা- হু। তবে শুধু কী কোভিড ১৯, এর আগেও নানা সময়ে নানা রোগের প্রকোপে কেঁপে উঠেছে বিশ্ব। বার বারই পৃথিবার বুকে ফিরে ফিরে এসেছে মহামারি-অতিমারির ‘অভিশাপ’। বিগত ২০০ বছরে বারে বারেই অতিমারির আকার নিয়ে ফিরে এসেছে কলেরা। ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ানক রোগ- ব্ল্যাক ডেথ বা প্লেগ। এর প্রভাবে বিশ্বব্যাপী ২০ কোটি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। এশিয়ার দেশগুলোয় প্রথম থাবা বসিয়েছিল এই রোগ পরে অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়ে। মৃত্যু সংখ্যার নিরিখে ইতিহাসের অন্যতম ভয়ানক রোগ, স্প্যানিশ ফ্লু । সারা বিশ্বে ৫০ কোটি মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়েছিল, তার মধ্যে মৃত্যু হয়েছিল পাঁচ কোটি মানুষের। ইতিমধ্যে বিজ্ঞানের জয়যাত্রা শুরু হয়। প্রতিষেধক ব্যবহারে গুটিবসন্ত নির্মূল হয়, পোলিও প্রায় তাই। ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের চিকিত্সার জন্য অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার শুরু হয় এবং সম্প্রতি অ্যান্টিভাইরাল ওষুধও চিকিৎসাক্ষেত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে সাম্প্রতি বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন মহামারি ফিরে আসছে। এখন প্রশ্ন হল কেন এমন ঘটছে? এবং ভবিষ্যতের মহামারি এড়াতে আমরা কি কিছু করতে পারি?
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন স্বাস্থ্যকর, স্থিতিশীল বাস্তুতন্ত্র আমাদের সুস্থ রাখে, আমাদের খাদ্য এবং বিশুদ্ধ জল সরবরাহ করে, অক্সিজেন উত্পাদন করে, সবুজ প্রকৃতি মানুষকে সুস্থ রাখে। বাস্তুতন্ত্র রোগ নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে। প্রকৃতিতে ভারসাম্য বজায় থাকলে মাংসাশী প্রাণীরা তৃণভোজীদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখে আবার তৃণভোজীরা উদ্ভিদের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে – তখন রোগজীবাণুও বিস্তারলাভ করতে পারে না আর মহামারি সৃষ্টি হওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। কিন্তু যখন মানুষের কাজ বাস্তুতন্ত্রকে ব্যাহত করে, তার ভারসাম্য নষ্ট করে তখন সব কিছু ক্ষতিগ্রস্ত হয়- জলবায়ু পরিবর্তন ঘটে, জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি হয়। জলবায়ু পরিবর্তন, গাছপালা এবং প্রাণীর সংখ্যা এবং বণ্টনকে প্রভাবিত করে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন পৃথিবীর তাপমাত্রা উষ্ণ হওয়ার সঙ্গে রোগসৃষ্টিকারী মশা গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চল থেকে নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু অঞ্চলে চলে যেতে পারে এবং সাধারণত যে সব সময়ে মশাবাহিত রোগের প্রকোপ সচরাচর দেখা যায়না সেই মাসগুলোতে আরও বেশি লোককে সংক্রামিত করতে পারে। শহুর এবং কৃষি উন্নয়ন প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্রের উপর প্রভাব ফেলছে। ফলে মানুষ এবং গৃহপালিত পশুরা এমন জীবাণু দ্বারা সংক্রামিত হচ্ছে যা সাধারণত শুধুমাত্র বন্যপ্রাণীতে দেখা যায়। গবেষকদের মতে জলবায়ু পরিবর্তন, জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি এবং বিশ্বব্যাপী অন্যান্য চ্যালেঞ্জের কারণে মহামারির প্রকোপ বাড়ছে। মানুষ, গৃহপালিত পশু এবং বন্যপ্রাণীর মধ্যে সংযোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে আর এটাই মহামারির প্রথম কারণ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

fourteen + 1 =