আমাজনের জঙ্গলে

আমাজনের জঙ্গলে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১২ জুন, ২০২৪

পৃথিবীর মিষ্টি জলের প্রায় এক পঞ্চমাংশ হল আমাজন রেইনফরেস্টের নদী এবং উপনদী যা স্তন্যপায়ী প্রাণী, পাখি, গাছপালা এবং উভচর প্রাণীদের অত্যাশ্চর্যভাবে পুষ্টির জোগান দেয়। আশেপাশের অববাহিকা অঞ্চলের পর্বত, বন, নদী ও জলাভূমি অঞ্চলের প্রায় ৪৭ মিলিয়ন মানুষকে সহায়তা করে, বাঁচিয়ে রাখে তাদের জীবন ও জীবিকা। আটলান্টিক মহাসাগর, আন্দিজ পর্বতমালা, আমাজন নিম্নভূমি অঞ্চলের জলাশয় ও সেই অঞ্চলের জলবায়ু যে জটিল হাইড্রোক্লাইমেটিক সিস্টেম তৈরি করে তাকে বিজ্ঞানীরা নাম দিয়েছেন এএএ পাথওয়ে। এই সিস্টেমকে গবেষকরা পূর্বে একটি পাম্পের সাথে তুলনা করেছেন যার মাধ্যমে পৃথিবী পৃষ্ঠ থকে জল বাষ্পীভূত হয়ে বায়ুতে মেশে আবার পরে ঘণীভূত হয়ে আঞ্চলিক বৃষ্টিপাত ঘটায়। এই বহুমুখী জলচক্র শুধু বৃষ্টিপাত ঘটায় তা নয়, মাটিকেও স্থানান্তরিত করে – আন্দিজ পর্বতমালা থেকে মাটি, নদীর মধ্য দিয়ে, বনাঞ্চল পেরিয়ে শেষে সমুদ্রে গিয়ে মেশে। জল ও মাটির মাধ্যমে পুষ্টি পৌঁছে যায় ওই অঞ্চলের বৈচিত্র্যপূর্ণ স্থলজ এবং জলজ জীবকুলের কাছে। এই এএএ ব্যবস্থা আটলান্টিক মহাসাগরের ৪০% পলি মাটির জোগান দেয় যা পরবর্তী ক্ষেত্রে সমুদ্রের জীবকুলের পুষ্টি প্রদান করে। তাছাড়া বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড শুষে পৃথিবীর তাপমাত্রা সহনীয় রাখার ক্ষেত্রে এ-যাবৎ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এসেছে এই অরণ্য। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অ্যামাজন অঞ্চল সবসময় বন্যা এবং খরার মধ্য দিয়ে যায়। এই অঞ্চলের দক্ষিণ দিকে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যার ফলে এএএ সিস্টেমটি আরও বেশি ওঠানামা করছে। এর ফলে উত্তরের অঞ্চলগুলো অতিরিক্ত বন্যার কবলে পড়ছে আবার মানুষের দ্বারা সৃষ্ট পরিবেশ পরিবর্তনের জেরে গত বছর এই অর্ধশতকের ভয়ঙ্করতম খরার কবলে পড়ে এই অঞ্চলটি। আন্দিজের হিমবাহ গলে যাওয়ার ঝুঁকিও বৃদ্ধি পেয়েছে। বস্তুত, ব্রাজ়িল, কলম্বিয়া, ভেনেজ়ুয়েলা এবং পেরু-সহ ন’টি অ্যামাজ়ন বৃষ্টিঅরণ্য অঞ্চলই অনাবৃষ্টিতে প্রভাবিত হয়। এর ফলে এই অঞ্চলের বহু নদীর জলস্তরের লক্ষণীয় পতন ঘটে, ভয়ঙ্কর দাবদাহের প্রাদুর্ভাব হয় এবং বিপন্ন হয় লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন ও জীবিকা।
গবেষকদের মতে সম্প্রতি অ্যামাজনে সরকারীভাবে স্বীকৃত ন্যাশনাল পার্ক, সংরক্ষিত বনাঞ্চল এবং আদিবাসী অঞ্চলের মতো সংরক্ষিত এলাকার সংখ্যা এবং পরিধি বিপুল পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে, বন এবং স্থলজ বাস্তুতন্ত্রের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে কিন্তু এখন সময় এসেছে মিষ্টি জলের উৎস এইসব নদীর সংরক্ষণের জন্য হাত এগিয়ে দেওয়ার।