আমাদের ভাবার আগেই মস্তিষ্ক ভুল স্মৃতি তৈরি করে ফেলে?

আমাদের ভাবার আগেই মস্তিষ্ক ভুল স্মৃতি তৈরি করে ফেলে?

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা‌
Posted on ১৫ এপ্রিল, ২০২৩

PLOS জার্নালে প্রকাশিত একটা নিবন্ধে একদল গবেষক জানিয়েছেন, মানুষের মস্তিষ্ক পলকের মধ্যে ভুল স্মৃতি তৈরি করে ফেলতে সক্ষম। আমস্টারডাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা ৫৩৪ জন মানুষের ওপর ইংরেজি বর্ণমালা নিয়ে পরপর চারটে পরীক্ষা করেছেন। এক্ষেত্রে তারা বর্ণের সঠিক রূপ আর তার উলটো প্রতিবিম্ব দেখিয়ে মানুষের প্রতিক্রিয়া নথিভুক্ত করেছেন।
গবেষকরা পরীক্ষার শুরুতে ব্যক্তিদের একটা স্লাইড দেখিয়েছেন, যেখানে ৬টা বা ৮টা বর্ণ লেখা আছে। এরপরের স্লাইডে তাদের একটা নির্দিষ্ট বর্ণের খালি জায়গায় দাগ দিয়ে সেখানে কোন বর্ণ ছিল, তা মনে করতে বলা হয়েছে। প্রথম দেখা স্লাইডের স্মৃতি তাদের মস্তিষ্ক থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য মাঝে একটা অন্য স্লাইডে যেকোন কয়েকটা বর্ণ তারা দেখিয়েছেন। শেষে গবেষকরা ব্যক্তিদের কাছে জানতে চেয়েছেন, ওই দ্বিতীয় স্লাইডের নির্দিষ্ট ফাঁকা জায়গায় ব্যক্তিরা একদম প্রথম স্লাইডে কোন বর্ণ দেখেছিলেন? সেটা বর্ণের সঠিক রূপ ছিল না তার উলটো প্রতিবিম্ব ছিল?
প্রথম স্লাইড দেখার আধ সেকেন্ড পরে প্রায় ২০% ব্যক্তির ওই নির্দিষ্ট বর্ণের স্মৃতির একটা কাল্পনিক বিভ্রম তৈরি হয়েছিল। কিন্তু প্রথম স্লাইড দেখার ৩ সেকেন্ড পর ৩০% ব্যক্তির মধ্যে কাল্পনিক বিভ্রম সৃষ্টি হয়েছিল।
এর কারণ হল মানুষের মস্তিষ্ক যা দেখতে অভ্যস্ত, সেটাই সে নিজের মতো স্মৃতিতে দেখায়। এক্ষেত্রে যে সমস্ত ব্যক্তিদের বর্ণ নিয়ে পরীক্ষা করা হয়েছিল, তারা সকলে ইংরেজি বর্ণমালার সাথে অত্যন্ত পরিচিত ও অভ্যস্ত, ফলে মস্তিষ্ক তাদের কাছে বার্তা পাঠিয়েছিল, যে তারা বর্ণের সঠিক রূপই দেখছে। যখন বর্ণের প্রতিবিম্ব দেখানো হয়, যেমন ‘C -র পরিবর্তে Ɔ’; তখন ব্যক্তির কাছে মস্তিষ্ক জানাচ্ছে, তিনি সঠিক রূপই দেখেছেন, মাত্র মিলিসেকেন্ড পরেও মস্তিষ্ক সঠিক চিত্র ধরে রাখতে পারেনা।
গবেষকরা বলছেন, স্বল্পকালীন স্মৃতিতে যা ধরে পড়ে তা সবসময় সঠিক হয় না, স্মৃতি এমনভাবে গঠিত হয়, যা আমরা দেখতে চাই বা দেখতে অভ্যস্ত স্মৃতি তাকেই আমাদের দেখায়। যে কারণে যারা পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল, তারা জোর দিয়ে আত্মবিশ্বাসের সাথে বারবার বলেছে, তারা প্রতিবিম্ব দেখেনি, বর্ণের সঠিক রূপই দেখেছে। আমাদের কোন বিষয় সম্বন্ধে যা পূর্বধারণা তার ভিত্তিতেই আমাদের মস্তিষ্ক আমাদের অনেক সময় বিভ্রম ঘটায়।
গবেষকরা এই পরীক্ষায় ব্যক্তিদের ভুল হচ্ছে নাকি তাদের ভুল স্মৃতি গঠিত হচ্ছে তা বোঝার জন্য দুটো আলাদা সময়ে তাদের দেখা বর্ণ বলতে বলেছিলেন। ০.২৫ সেকেন্ড যাবৎ বর্ণগুলো ব্যক্তিদের দেখানো হয়েছিল। যদি দেখা বর্ণ উপলব্ধি করতে অসুবিধা হত, তাহলে ৫০০ মিলিসেকেন্ডে যা ভুল বলা হয়েছিল, তাহলে ৩ সেকেন্ডেও সেই একই ভুল থাকত। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে ব্যক্তিদের মধ্যে ভুল বলার শতাংশ বেড়ে গেছে, অর্থাৎ গবেষকদের মতে ভুল স্মৃতি গঠিত হচ্ছে।
Fuzzy trace theory অনুযায়ী মানুষের মস্তিষ্ক দুভাবে স্মৃতিশক্তি তৈরি করে। একটা verbatim অপরটা হল gist, দ্বিতীয়টির ক্ষেত্রে মানুষের স্মৃতি হিসেবে একটা অস্বচ্ছ ধারণা থাকে ; কিন্তু verbatim – এ অনেক বিশদ ধারণা গঠিত হয়ে তা স্মৃতিতে থাকে। কিন্তু এক্ষেত্রে গবেষকদের মতে Fuzzy trace theory – র সাহায্যে এই পরীক্ষা সম্পূর্ণভাবে ব্যাখ্যা করা যাচ্ছে না। তাদের ব্যখ্যা অনুযায়ী আমাদের verbatim স্মৃতির ক্ষেত্রেও পূর্ববর্তী অভিজ্ঞতা ও আমাদের চাহিদা তা গঠিত হতে সাহায্য করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

14 + 10 =