আমি দূর হতে তোমারেই দেখেছি

আমি দূর হতে তোমারেই দেখেছি

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৩ অক্টোবর, ২০২৪

আমি দূর হতে তোমারেই দেখেছি, আর মনে মনে কত ছবি এঁকেছি

এই মহাবিশ্বের বিস্তৃতি এবং রহস্য এর কথা ভাবতে গেলে, সবই কেমন যেন কল্পবিজ্ঞানের গল্প মনে হয়! নিজেকে তখন মনে হয় নির্বোধ ছোট্ট শিশুটি। যার সদ্য পাওয়া জীবন থেকে যেমন অনেককিছু জানার আছে, শেখার আছে, অথচ জানার, বোঝার আশায় তাকে যেমন চেয়ে থাকতে হয়, মা বাবা কিংবা বড় কোন মানুষের দিকে, তেমনই মহাবিশ্বের প্রতি অমোঘ টান নিয়ে, তাকিয়ে থাকি মহাকাশ বিজ্ঞানীদের দিকে।

পৃথিবীর বুকে দাঁড়িয়ে, আকাশের দিকে খালি চোখে তাকালেই তো কত আলোক কণা আমাদের চোখে এসে পরে। তার উপর যদি টেলিস্কোপে চোখ রাখা যায়, তাহলে তো কথাই নেই। সবথেকে দূরের, পৃথিবীতে আগত আলোকরশ্নি এর উৎস হল GN-z11 গ্যালাক্সি।

GN-z11 গ্যালাক্সি মহাকাশের এক অভূতপূর্ব রহস্য। যা বৈজ্ঞানিক জগতে, বিস্ময়কর আবিষ্কারের ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্ত খুলেছে। বর্তমানে, সবচেয়ে দূরবর্তী এই গ্যালাক্সি প্রায় ১৩.৪ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। আমরা এই গ্যালাক্সিটিকে যে দেখতে পাচ্ছি, তার দুরত্ব বোঝাতে গেলে, বলতে হয়, কোন বস্তু থেকে আলো প্রতিফলিত হয়ে, আমাদের চোখে আলো এলে তবেই আমারা সেই বস্তু কে দেখতে পাই। আর এই গ্যালাক্সি রয়েছে, মহাবিশ্বের জন্মকালেরও ৪০০ বিলিয়ন আগে থেকে। সেই সূত্রানুসারে, সেখানে পৃথিবীর জন্ম, মাত্র ৪.৫৪ বিলিয়ন বছর আগে। ৪০০ বিলিয়ন পুরনো এই গ্যালাক্সির আলো, ৪.৫৪ বিলিয়ন আলোকবর্ষ ধরে পথ অতিক্রম করে এই সবেমাত্র পৃথিবীতে এসে পৌঁছেছে। এখন যে আলো আমরা দেখতে পাচ্ছি তা আসলে ৪.৫৪ বিলিয়ন বছর আগের আলো।

অন্যদিকে, GN-z11 গ্যালাক্সি এত দূরে থাকা সত্ত্বেও, এটি অত্যন্ত উজ্জ্বল। এর উজ্জ্বলতা এত বেশি যে, বিজ্ঞানীদের ধারণা, এই গ্যালাক্সিতে প্রচুর সংখ্যক নক্ষত্র আছে। আর এই নক্ষত্ররা দ্রুতহারে গঠিত হচ্ছিল। মহাবিশ্বের জন্মের প্রথম দিকে, এই গ্যালাক্সি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। গ্যালাক্সির উজ্জ্বলতা গবেষণায়, GN-z11 একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক।

GN-z11 গ্যালাক্সির উপর গবেষণা, আমাদের মহাবিশ্বের জন্ম এবং বিকাশের একটি প্রাথমিক চিত্র দেয়। এটি আমাদের জানান দেয় যে, মহাবিশ্বের প্রাথমিক কালের গ্যালাক্সিগুলি কেমন ছিল এবং কীভাবে তারা সময়ের সাথে সাথে বিবর্তিত হয়েছে। এই তথ্যগুলি, কেবলমাত্র মহাবিশ্বের ইতিহাসের একটি অংশ নয়, বরং আমাদের বর্তমান মহাকাশীয় দৃশ্যপটের উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক ভিত্তি প্রদান করে, যা মহাবিশ্বের ভবিষ্যৎ অধ্যয়নের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক নির্দেশনা করে।