
আমাদের চারপাশের সবকিছুই তৈরি পরমাণু দিয়ে। তার মধ্যে আবার রয়েছে ইলেকট্রন। মাঝে মাঝে পরমাণুরা ইলেকট্রন হারিয়ে বা লাভ করে আহিত (চার্জড)হয়। এরই নাম আয়নীভবন। এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ হল বজ্রপাত, প্লাজমা টিভি, কিংবা মেরুপ্রভা । সম্প্রতি, অটোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের একটি দল পরমাণু এবং অণুর আয়নীভবন সম্পর্কে অতীব উল্লেখযোগ্য কিছু তথ্য সরবরাহ করেছেন। এতদিন বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল, এই প্রক্রিয়াটিকে কেবল কতকগুলি সীমিত উপায়েই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। কিন্তু, এই গবেষকরা বিশেষ কাঠামোযুক্ত আলোর রশ্মি ব্যবহার করে আয়নীভবনকে নিয়ন্ত্রণের নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন। গবেষণা দলটির নেতৃত্বে রয়েছেন অটোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের পূর্ণ অধ্যাপক রবি ভারদ্বাজ এবং পিএইচ ডি ছাত্র জাঁ-লুক বেগাঁ। সাথে আরও আছেন অধ্যাপক ইব্রাহিম করিমি, পল কর্কাম এবং টমাস ব্রাবেক। দু বছর ধরে গবেষণাটি চলেছে। জোরালো ক্ষেত্র সংক্রান্ত পদার্থবিজ্ঞান এবং আলো আর পদার্থর মিথষ্ক্রিয়া বিষয়ক “অ্যাটোসেকেন্ড” বিজ্ঞান, উভয় ক্ষেত্রেই এটির গুরুত্ব সমধিক। পারমাণবিক স্তরে অতিদ্রুত গতিতে সংঘটিত ইলেকট্রনিক প্রক্রিয়াগুলি নিয়ে অনুসন্ধান করে, ইলেকট্রনেরা কীভাবে তাদের পারমাণবিক বন্ধন থেকে মুক্তি লাভ করে তারই বর্ণনা দেয় অ্যাটোসেকেন্ড পদার্থবিজ্ঞান। অধ্যাপক ভরদ্বাজ ব্যাখ্যা করে বলেছেন, “আমরা প্রমাণ করেছি যে, কৌণিক ভরবেগযুক্ত আলোকরশ্মিগুচ্ছ বা “অপটিক্যাল ভর্টেক্স বিম” ব্যবহার করে, আমরা পরমাণু থেকে একটি ইলেকট্রন ঠিক কীভাবে ঠিকরে বেরিয়ে আসে তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি”। তিনি আরও বলেন, “এই আবিষ্কার ইমেজিং এবং কণা ত্বরণ প্রযুক্তি উন্নত করার নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে”। দলটি দেখেছেন, “ভর্টেক্স” আলোকরশ্মির গুচ্ছ বাঁহাতি না ডানহাতি এবং তার অন্যান্য ধর্ম লক্ষণীয়রূপে আয়নীভবনের হারকে প্রভাবিত করে। ওই রশ্মিগুচ্ছের মধ্যে “শূন্য তীব্রতা”-যুক্ত যে-অঞ্চলটি থাকে তাকে নিয়ন্ত্রণ করে তাঁরা নির্বাচিত মাত্রায় আয়নীভবন ঘটাতে পেরেছেন। এ জন্য তাঁরা “অপটিক্যাল ডাইক্রোইজম” নামক একটি অভিনব ধারণার প্রবর্তন করেছেন। এর অর্থ, দৃশ্যমান আলো হয় কয়েকটি আলাদা আলাদা তরঙ্গদৈর্ঘ্যে ভেঙে ভেঙে যাবে, নাহয় অববর্তনের (পোলারাইজেশন)আলাদা আলাদা মানযুক্ত আলোকরশ্মিগুলি আলাদা আলাদা পরিমাণে শোষিত হবে। এ গবেষণা থেকে যা জানা গেল তার মূল কথাগুলি হল: –
১. আয়নীভবনের প্রক্রিয়া যে কৌণিক ভরবেগ-বাহী আলোকরশ্মিগুচ্ছের ধর্মর ওপর নির্ভরশীল তার প্রথম নিদর্শন ও প্রমাণ।
২। আয়নীভবনের প্রক্রিয়াগুলির ওপর নিয়ন্ত্রণ বাড়িয়ে ইমেজিং প্রকৌশলের বর্তমান সীমাবদ্ধতা কাটানো।
৩। বিশেষ প্রকৌশলে আলোক কীভাবে ইলেকট্রনের আচরণকে প্রভাবিত করতে পারে তা অনুধাবনের অভাবিতপূর্ব পথ প্রদর্শন।
এ বিষয়ে একেবারে বুনিয়াদী তত্ত্বগুলির ভিত্তিতেই চালিত হয়েছে এ গবেষণা। আয়নীভবন সংক্রান্ত বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনার সম্ভাবনা রয়েছে এর। কেবল পদার্থবিজ্ঞানের পাঠ্যবইতেই নয়, বহু ব্যবহারিক ক্ষেত্রে নানাবিধ উন্নতি ঘটতে পারে এর দরুন। বিশেষ করে কোয়ান্টাম কম্পিউটিং-এ।