আল্ট্রাসাউন্ডের সাহায্যে জলের ক্ষতিকারক দূষণ রোধ

আল্ট্রাসাউন্ডের সাহায্যে জলের ক্ষতিকারক দূষণ রোধ

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা‌
Posted on ৭ ডিসেম্বর, ২০২৩

ওহিও স্টেট ইউনিভার্সিটির সাম্প্রতিক গবেষণা জানাচ্ছে আল্ট্রাসাউন্ড প্রযুক্তি দূষিত ভূগর্ভস্থ জলে পাওয়া পিএফএএস, নামক ক্ষতিকারক রাসায়নিক অপসারণের ক্ষেত্রে কার্যকর হতে পারে। এই পদ্ধতিটি প্রথাগত পিএফএএস কমানোর বিপরীত, কারণ এই পদ্ধতি ছোটো পিএফএএস যৌগগুলিকে আরও দক্ষতার সাথে কমায়। ফার্মাসিউটিক্যাল অবক্ষয়ের উপর পূর্ববর্তী কাজের অধ্যয়ন দেখায় যে আল্ট্রাসাউন্ড তরঙ্গ পিএফএএস -এ স্থিতিশীল কার্বন-ফ্লোরিন বন্ডগুলিকে ভেঙে ফেলার ক্ষমতা রাখে। ব্যয়বহুল এবং শক্তি-নিবিড় হলেও এই পদ্ধতিটি জলের উৎসগুলো রক্ষা করার জন্য অত্যাবশ্যক হতে পারে। অর্থাৎ দূষিত ভূগর্ভস্থ জল বিশুদ্ধ করতে, আল্ট্রাসাউন্ড প্রযুক্তি প্রতি- পার এবং পলি-ফ্লুরোঅ্যালকাইল পদার্থের (PFAS) অপসারণের ক্ষেত্রে কার্যকর হতে পারে, যা সাধারণত “চিরকালের রাসায়নিক” হিসাবে পরিচিত। এই রাসায়নিকগুলি, প্রায় একশ বছর আগে, নন-স্টিক কুকওয়্যার, জল-প্রতিরোধী পোশাক এবং ব্যক্তিগত যত্নের সামগ্রীর মতো বিভিন্ন পণ্য তৈরিতে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়েছিল। বিজ্ঞানীরা বুঝতে পেরেছেন পিএফএএস-এর সংস্পর্শে আসার ফলে অনেকগুলি মানব স্বাস্থ্য সমস্যা যেমন জন্মগত ত্রুটি এবং ক্যান্সার হতে পারে। কিন্তু যেহেতু এই রাসায়নিকগুলির ভিতরের বন্ধনগুলি সহজে ভেঙ্গে যায় না, তাই এদের পরিবেশ থেকে অপসারণ করা খুব কঠিন।
ফ্লুরোটেলোমার সালফোনেটের তিনটি ভিন্ন আকারের যৌগ সমন্বিত ল্যাব-তৈরি মিশ্রণের উপর পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলাফলগুলি দেখায় যে তিন ঘন্টার মধ্যে, ছোটো যৌগগুলি বড়োগুলির তুলনায় অনেক দ্রুত হ্রাস পেয়েছে। এটি অন্যান্য অনেক পিএফএএস অপসারণের পদ্ধতির বিপরীত যেখানে দেখা গেছে ছোটো পিএফএএস অপসারণ করা আরও চ্যালেঞ্জিং। অন্যান্য প্রথাগত পদ্ধতিতে অক্সিডাইজিং রাসায়নিকের সাথে প্রতিক্রিয়া করিয়ে পিএফএএস কে ভেঙে ফেলার চেষ্টা করা হয়। এই গবেষণায় মেডিকেল ইমেজিংয়ে ব্যবহৃত হওয়া আল্ট্রাসাউন্ডের তুলনায় অনেক কম কম্পাঙ্কে শব্দ নির্গত করে পিএফএএস কে ভেঙে ফেলা হয়। আল্ট্রাসাউন্ডের নিম্ন কম্পাঙ্কের চাপ দ্রবণটিকে সংকুচিত করে এবং আলাদা করে দেয়, যা ক্যাভিটেশন বাবল নামে বাষ্পের পকেট তৈরি করে। বুদবুদগুলি ভেঙে পড়ার সাথে সাথে, এত বেশি গতি এবং শক্তি অর্জন করে যে এটি সংকুচিত হয় এবং আরও সংকুচিত হয়ে বুদবুদকে উত্তপ্ত করে। অনেকটা শক্তিশালী দহন চেম্বারের মতো, এই ক্ষুদ্র বুদবুদের ভিতরের তাপমাত্রা ১০০০০ কেলভিন পর্যন্ত পৌঁছতে পারে এবং এই তাপই পিএফএএস -এর স্থিতিশীল কার্বন-ফ্লোরিন বন্ধনগুলিকে ভেঙে দেয় এবং যে উপজাত তৈরি হয় তা ক্ষতিকারক নয়। গবেষকরা জানিয়েছেন, এখনও এই গবেষণা বাণিজ্যিকভাবে বড়ো মাপে ব্যবহার করা যাবে না। এর খরচও ব্যয়সাপেক্ষ, কিন্তু বিজ্ঞানী এবং সরকারী সংস্থাগুলি ভবিষ্যতে জলের ট্রিটমেন্টের জন্য এই প্রযুক্তির বিষয়ে বিবেচনা করতে পারেন। গবেষণাটি জার্নাল অফ ফিজিক্যাল কেমিস্ট্রি এ প্রকাশিত হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

19 + sixteen =