আল্ট্রাসাউন্ড স্টিকার লিভার ব্যর্থতার প্রাথমিক লক্ষণগুলি শনাক্ত করতে পারবে

আল্ট্রাসাউন্ড স্টিকার লিভার ব্যর্থতার প্রাথমিক লক্ষণগুলি শনাক্ত করতে পারবে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা‌
Posted on ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪

এমআইটি ইঞ্জিনিয়াররা একটি ছোট আল্ট্রাসাউন্ড স্টিকার তৈরি করেছেন যা শরীরের গভীরে অঙ্গগুলো নিরীক্ষণ করতে পারে। স্ট্যাম্পের আকারের স্টিকারটা ত্বকে আটকে দিলে, এটা লিভার এবং কিডনির রোগ ধরতে পারে, টিউমার হলে তা শনাক্ত করতেও পারে। সায়েন্স অ্যাডভান্সেস-এ গবেষকরা জানিয়েছেন, যে সেন্সরটি ত্বকের মাধ্যমে শরীরে শব্দ তরঙ্গ পাঠাতে পারে, এই তরঙ্গ আভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলোতে প্রতিফলিত হয়ে স্টিকারে ফিরে আসে। প্রতিফলিত তরঙ্গের প্যাটার্ন থেকে অঙ্গের দৃঢ়তা বোঝা যায়। কিছু অঙ্গে রোগ হলে সেগুলো সময়ের সাথে শক্ত হয়ে যেতে পারে। এই পরিধানযোগ্য স্টিকার দীর্ঘ সময়ের জন্য অনমনীয়তার পরিবর্তনগুলো ক্রমাগত নিরীক্ষণ করতে পারে, আভ্যন্তরীণ অঙ্গের প্রাথমিক পর্যায়ের ব্যর্থতা নির্ণয়ের জন্য যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
গবেষকরা দেখিয়েছেন যে স্টিকারটা নিরবচ্ছিন্নভাবে ৪৮ ঘন্টা ধরে অঙ্গগুলির কঠোরতা পর্যবেক্ষণ করতে পারে এবং রোগের সংকেত ধরার মতো সূক্ষ্ম পরিবর্তনগুলো শনাক্ত করতে পারে। প্রাথমিক পরীক্ষায়, দেখা গেছে স্টিকি সেন্সর ইঁদুরের ক্ষেত্রে তীব্র লিভার ব্যর্থতার প্রাথমিক লক্ষণ শনাক্ত করতে পেরেছে। গবেষকরা মানুষের ব্যবহারের জন্য এর ডিজাইন নিয়ে কাজ করছেন। তাদের মতে স্টিকারটা আইসিইউ-তে যাদের অঙ্গ প্রতিস্থাপন হয়েছে, সেখানে ব্যবহার করা যেতে পারে। অঙ্গ প্রতিস্থাপনের পরে, প্রথম ৭২ ঘন্টা আইসিইউতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়, কিন্তু আলট্রা সাউন্ডের মাধ্যমে শরীরের একটানা নিরীক্ষন সম্ভব নয়। দীর্ঘ মেয়াদে এটা ক্রমাগত করা যায়না, কিন্তু তাতে ডাক্তারদের বুঝতে খুব দেরি হতে পারে, যে প্রতিস্থাপিত অঙ্গটি ব্যর্থ হচ্ছে। এই গবেষণায় গবেষকরা একটানা, পরিধানযোগ্য বিকল্প প্রদান করতে সক্ষম হতে পারেন। তাদের এই আল্ট্রাসাউন্ড স্টিকারের সমাধান গভীর টিস্যু এবং অঙ্গগুলির চিত্র নিতে সক্ষম।
গবেষকরা ১২৮ টা ক্ষুদ্রাকৃতির ট্রান্সডুসার তৈরি করে একটা ২৫-মিলিমিটার-বর্গক্ষেত্রের চিপে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। জল এবং পলিমারের মিশ্রণ দিয়ে হাইড্রোজেল তৈরি করেছেন, যা এক ধরনের আঠা তা চিপের নীচে আটকেছেন। প্রায় সমস্ত শব্দ তরঙ্গগুলো হারিয়ে না গিয়ে ডিভাইসের মধ্যে এবং বাইরে যেতে পারে। তারা ইঁদুরের মধ্যে এই স্টিকার লাগিয়ে দেখেছেন, স্টিকারগুলো ৪৮ ঘন্টা ধরে লিভারের কঠোরতা ক্রমাগত পরিমাপ করেছে। স্টিকারের সংগৃহীত তথ্য থেকে, গবেষকরা লিভার ব্যর্থতার স্পষ্ট এবং প্রাথমিক লক্ষণগুলো পর্যবেক্ষণ করেছেন, যা তারা পরে টিস্যুর নমুনার সাথে মিলিয়ে নিশ্চিত হয়েছেন। লিভারের ব্যর্থতায় অঙ্গ অনমনীয় হয়ে যায়। একটা সুস্থ লিভার নরম-সিদ্ধ ডিমের মতো নড়চড়ে, কিন্তু রোগাক্রান্ত শক্ত -সিদ্ধ ডিমের মতো হয়ে যায়। এই স্টিকার শরীরের গভীরে সেই পার্থক্যগুলি ধরতে পারছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

five × four =