আল্ট্রা- প্রসেসড খাবারের প্রতি ঝোঁক বাড়ছে…

আল্ট্রা- প্রসেসড খাবারের প্রতি ঝোঁক বাড়ছে…

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৩১ জুলাই, ২০২৪
আল্ট্রা-প্রসেসড-খাবার

ব্যস্ত জীবনে কড়া ডায়েট বা চিকিৎসকদের বাধানিষেধ মেনে চলার চেষ্টা করলেও অনেক সময়ই ঘড়ির কাঁটা ও কাজের চাপে আমাদের মধ্যে ঢিলেমি আসে। আর সেই ঢিলেমির সুযোগ নিয়ে বাড়িতে ঢুকে পড়ে আলট্রাপ্রসেসড ফুড বা অতিপ্রক্রিয়াজাত খাবার। কাজের চাপে, ক্লান্তিতে রান্না করতে ইচ্ছা না করলেই মুশকিল আসান হিসেবে আমরা রান্না করেনি ‘রেডি টু ইট’ পাস্তা থেকে পিৎজা, সব্জি থেকে পরোটা সবই। কেবল গরম করে নিলেই কেল্লাফতে। তাই রোজের জীবনে সময় বাঁচাতে প্রক্রিয়াজাত খাবারের দিকে আমাদের ঝোঁক বাড়ছে। শুধুমাত্র বিদেশেই নয় আজ আমাদের দেশে বহু মানুষের কখনও না কখনও আল্ট্রাপ্রসেসড ফুডের দ্বারস্থ হতেই হয়। যদিও এই প্রসেসড ফুড নিয়ে চিকিৎসকরা বার বারই সাবধান করে আসছেন। তাদের মতে, শরীরে অতিরিক্ত চিনি, নুন ও নানারকম অ্যাডিটিভ সরবরাহ হয় এই প্রক্রিয়াজাত খাবারের মাধ্যমেই। বাড়ে ওবেসিটি, কিছু কিছু ক্যানসার, ডায়াবিটিস, হৃদরোগ। বাড়াতে পারে মৃত্যুর ঝুঁকি।
এখন প্রশ্ন হল কোন খাবারগুলোকে আমরা “আল্ট্রাপ্রসেসড” ফুড বলবো?
প্রায় সব খাবারই কোনো না কোনোভাবে প্রক্রিয়াজাত করা হয়। তবে প্রক্রিয়াকরণের ধরনের উপর নির্ভর করে তাদের আলাদা করা হয়। ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের গবেষকরা নোভা শ্রেণিবিন্যাস ব্যবস্থা ব্যবহার করে, যা খাবারকে চারটি গ্রুপে ভাগ করে- অপ্রক্রিয়াজাত এবং ন্যূনতম প্রক্রিয়াজাত খাবার, প্রক্রিয়াজাত রান্নার সামগ্রী বা মশলা, প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং আল্ট্রাপ্রসেসড বা অতিপ্রক্রিয়াজাত খাবার। অপ্রক্রিয়াজাত খাবারের মধ্যে রয়েছে উদ্ভিদের বা প্রাণীর অংশ যা আমরা যেমন প্রকৃতিতে পাওয়া যায় তাই ব্যবহার করি— যেমন তাজা ফল, শাক সবজি, মাছ, মাংস, মাশরুম এবং ডিম। ন্যূনতম প্রক্রিয়াজাত খাবারকে আরও উপযোগী বা খাবারের জন্য নিরাপদ করার জন্য সামান্য পরিবর্তন করা হয়- ফ্রোজেন করা, ভাজা বা শুকনো করা। এই খাবারগুলোতে সচরাচর কিছুই যোগ করা হয় না, এমনকি লবণ, চিনি বা তেলও নয়। যেমন হিমায়িত মটর এবং রোস্টেড কফি বিন। এরপরে রয়েছে রান্নার সামগ্রী বা মশলাপাতি যা আমরা সামান্য প্রক্রিয়াজাত করে ব্যবহার করি যেমন উদ্ভিজ্জ তেল যা আমরা বীজ পিষে তৈরি করে থাকি। প্রক্রিয়াজাত খাবারের মধ্যে রয়েছে স্মোকড মিট, রান্না করা শাকসবজি যা টিন বা ক্যানে সিল করা থাকে অনেকটা রেডি টু ইট, টফু এবং রুটি। খাবারগুলো দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য মেশানো থাকে নানা ধরনের রাসায়নিক বা অ্যাডিটিভ এবং লবণ। অন্যদিকে, আল্ট্রাপ্রসেসিং, খাদ্য সামগ্রীকে বাণিজ্যিক পদ্ধতির মাধ্যমে অন্য উপাদানে রূপান্তরিত করে। এই সব অতিপ্রক্রিয়াজাত খাবারের মধ্যে রয়েছে নির্দিষ্ট কিছু শর্করা, যেমন ডেক্সট্রোজ, এবং প্রোটিন যেমন কেসিন। খাবারের রঙ, স্বাদ, ইমালসিফায়ার এবং অন্যান্য অ্যাডিটিভও খাবারের স্বাদ এবং শেলফ লাইফ বাড়াতে ব্যবহৃত হয়। আল্ট্রাপ্রসেসড খাবারের মধ্যে রয়েছে সফট ড্রিঙ্ক, ক্যান্ডি, ব্রেকফাস্ট সিরিয়াল, চিকেন নাগেটস, হট ডগ এবং ইনস্ট্যান্ট স্যুপ পাউডার। এগুলো সহজেই তৈরি করে নেওয়া যায় এবং খেতেও সুস্বাদু। খাবারকে দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য ব্যবহৃত রাসায়নিক আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক। ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, হৃদরোগ এবং উচ্চ রক্তচাপের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। চিনি এবং লবণ মেশানোর ফলে খাবারগুলো সুস্বাদু হয় এবং খাবারের ইচ্ছা বেড়ে যায়। খাদ্য সামগ্রীতে ফাইবারের পরিমাণও কম। তাই খাদ্যনালী দ্রুত শোষণ করে নেয় কিন্তু আমাদের অন্ত্রের মাইক্রোবায়োম পর্যাপ্তভাবে পুষ্ট হয় না। তাছাড়াও প্রক্রিয়াবিহীন খাবারের মতো আমাদের শরীরে তৃপ্তির অনুভূতিও হয় না, ফলে খাওয়ার পরেও আমরা ক্ষুধার্ত বোধ করি। তাই সতর্ক থাকা জরুরি, আল্ট্রাপ্রসেসড ফুডে নিয়ন্ত্রণ আনা প্রয়োজন ।