
চিকিৎসাক্ষেত্রে আল্ট্রা সাউন্ড চিত্রগ্রহণ বহুপ্রচলিত। কিন্তু এই সেদিনও এই প্রযুক্তিতে শরীরের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কোষের চিত্রগ্রহণের ক্ষমতা তার ছিল না। তার মানে বর্তমানে চালু আল্ট্রা সাউন্ড চিত্র দেখে আণুবীক্ষণিক স্তরে কী ঘটছে তা বোঝার জো নেই। অন্তত এতদিন ছিল না। সম্প্রতি নেদারল্যান্ড্স-এর স্নায়ুবিজ্ঞান প্রতিষ্ঠান এবং আমেরিকার ক্যালটেক-এর বিজ্ঞানীরা একযোগে এ সমস্যার সুরাহা করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন। তাঁরা আল্ট্রা সাউন্ড প্রযুক্তিতে বিশেষ প্রক্রিয়ায় ছাপ-মারা কোষের ত্রিমাত্রিক চিত্র তুলতে সমর্থ হয়েছেন। গবেষনাপত্রের প্রথম রচয়িতা বাতিস্ত হেইল্স বলেছেন, এতদিন জ্যান্ত কোষেরা কীভাবে আচরণ করে তার চিত্র তোলবার সবচেয়ে অগ্রসর প্রযুক্তিকে বলা হত লাইট শিট মাইক্রোস্কোপি। এর সাহায্যে বিকাশমান ভ্রূণের চিত্র তোলা সম্ভব। কিন্তু এর জন্য কোষগুলিকে শরীর থেকে বার করে নিয়ে মৃত কোষের পাতলা পাতলা চাদরের মতো আধা-স্বচ্ছ নমুনা নিয়ে কাজ করতে হয়, কারণ অস্বচ্ছ কোষকলায় আলো এক মিমির চেয়ে গভীরে ঢুকতে পারে না। ফলে সময়ের সঙ্গে কোষগুলোর সক্রিয়াতাকে অনুসরণ করা সম্ভব হত না। কিন্তু প্রধান গবেষক ডেভিড মারেস্কা জনিয়েছেন, নতুন এই আল্ট্রা সাউন্ড প্রযুক্তিতে স্তন্যপায়ী প্রাণির শরীরের অঙ্গ অক্ষত রেখেই অস্বচ্ছ কোষকলার বেশ কয়েক সেমি গভীরতা থেকে চিত্র তোলা সম্ভব । কাজেই কোষগুলো তাদের স্বাভাবিক পরিপার্শ্বে কেমন আচরণ করে সে বিষয়েও তথ্য সংগ্রহ করা যায়। এই প্রযুক্তির নাম ‘নন-লিনিয়ার সাউন্ড শিট মাইক্রোস্কোপি’। এই অভিনব উদ্ভাবনের মূলে আছে একটা শব্দ-প্রতিফলক সন্ধায়ক (প্রোব)। এটি ক্যালটেক-এর শাপিরো ল্যাবে আবিষ্কৃত হয়। হেইল্স-এর কথায়, ‘এটি দেহের মধ্যেকার একটি গ্যাসে-ভরা ন্যানো-স্তরের ছোটো থলি। আল্ট্রাসাউন্ড চিত্রের মধ্যে এটি প্রজ্বলিত হয়ে উঠে কোষকে দৃশ্যমান করে তোলে। এরা একটি প্রোটিন খোলসে ঢাকা থাকে। চিত্রের মধ্যে এরা কতটা উজ্জ্বল দেখাবে সেটা নিয়ন্ত্রণ করার প্রকৌশল আমাদের জানা। এই গ্যাস-থলিগুলোকে কাজে লাগিয়ে আমরা ক্যান্সার কোষ অনুসরণ করি’। কিন্তু শুধু কোষগুলিতে দৃশ্যমান করে তুলেই ক্ষান্ত হননি তাঁরা। আল্ট্রাসাউন্ড আর মাইক্রোবাব্লকে রক্তপ্রবাহর মধ্যে প্রবহমান সন্ধায়ক হিসেবে ব্যবহার করে তাঁরা মস্তিষ্কের কৈশিক নালীগুলিকে (ক্যাপিলারি) শনাক্ত করেন। হেইল্স বলেছেন, ‘আমরা যতদূর জানি, এই নন-লিনিয়ার সাউন্ড শিট মাইক্রোস্কোপিই হল জীবিত মস্তিষ্কের কৈশিক নালীগুলিকে পর্যবেক্ষণ করবার প্রথম প্রকৌশল। এটি এক নতুন পথ খুলে দিল। ছোটো ছোটো রক্তবাহর অসুখ শনাক্ত করার ক্ষেত্রে এর সম্ভাবনা বিরাট’। অচিরেই এই প্রকৌশল হাসপাতালে ব্যবহার করা যাবে বলে আশা করা যায়। মারেস্কার মতে, অন্যান্য রোগ তো বটেই, বিশেষ করে ক্যান্সারের নতুন চিকিৎসায় সহায়ক হবে এই প্রকৌশল । সুস্থ কোষ আর ক্যান্সারগ্রস্ত কোষ আলাদা করার ব্যাপারে এটি কাজে লাগবে, বিশেষ করে টিউমারের মারণ-কেন্দ্রটির চিত্রটি ফুটিয়ে তোলার কাজে। অক্সিজেনের অভাবে ওই কেন্দ্র থেকেই তো কোষের মৃত্যুর প্রক্রিয়া শুরু হয়। কাজেই ক্যান্সারের গতিপ্রকৃতি এবং চিকিৎসার ফল কী হছে তা নিরূপণের কাজে এটি সহায়ক হবে।