ইঁদুরের বিষের প্রভাব পড়ছে খাদ্য শৃঙ্খলে

ইঁদুরের বিষের প্রভাব পড়ছে খাদ্য শৃঙ্খলে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৪ আগষ্ট, ২০২৪
ইঁদুরের-বিষে

মানুষের বসতির কাছাকাছি ইঁদুরদের বাস। তারা ফসল খায়, আবর্জনা খুঁটে খায়। আবার বিভিন্ন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন পরিবেশে নিজেদের মানিয়ে নিয়ে থাকে সে খামারই হোক বা বিশ্বের সবচেয়ে বড়ো শহর। তবে বাড়িতে এক বার যদি ইঁদুর বাসা বাঁধে তবে আর রক্ষে নেই। কয়েক দিন পর তাদের সংখ্যাটা আরও বেড়ে যায়। তার পর বাড়ির পুরনো কাগজপত্র, বই এমনকি ইস্ত্রির তার, সবই কেটে রেখে দেয়। ভালো কাপড়-জামারও নিস্তার নেই এদের থেকে। তাই বাড়িতে ইঁদুর ঢোকা মানে এক ধরনের আতঙ্ক। আমরা সচরাচর কয়েকটি সহজ ঘরোয়া উপায়েই ইঁদুরের হাত থেকে নিষ্কৃতি পেয়ে যাই। ইঁদুর নিয়ন্ত্রণে আমরা প্রায়শই বিষের আশ্রয় নিয়ে থাকি। সেই বিষ খেয়ে ইঁদুর মরলে আমরা ফেলে দিই আবর্জনার স্তূপে। সাম্প্রতিক এক গবেষণা জানাচ্ছে ইঁদুর মারার রাসায়নিক অন্যান্য প্রাণীদেরও ক্ষতি করতে পারে। যে বিষ আমরা সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করি সেগুলোকে বলে অ্যান্টিকোয়াগুল্যান্ট রোডেন্টিসাইডস। এই রাসায়নিক ইঁদুরের শরীরে প্রবেশ করে তাদের রক্ত জমাট বাঁধতে দেয়না। এই বিষ কিন্তু মৃত ইঁদুরদের দেহে থেকে যায়। অন্য কোনো প্রাণী যদি এই মরা ইঁদুর খায় তবে তাদের প্রাণনাশের আশঙ্কাও থাকে।
গবেষণায় বিভিন্ন অধ্যয়ন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে বহু বন্য স্তন্যপায়ী মাংসাশী প্রাণীরা এই অ্যান্টিকোয়াগুল্যান্ট ইঁদুরনাশক বিষের সংস্পর্শে আসে। এদের মধ্যে বেশিরভাগেরই মৃত্যু ঘটে। বেশ কিছু জীবিত প্রাণীদের নিয়েও গবেষণা চালানো হয়েছে। গবেষকরা মৃত প্রাণীদের প্রায় এক-তৃতীয়াংশের মধ্যে ইঁদুরনাশক বিষ শনাক্ত করেছেন। এদের মধ্যে রয়েছে বিড়াল জাতীয় প্রাণী, বেজি, শিয়াল। গবেষকরা প্রাণীদের যকৃতের কলাতে এই রাসায়নিক খুঁজে পেয়েছেন। প্রথম পর্যায়ে যে ইঁদুরনাশক বিষ ব্যবহার হত তা সাধারণত শুধুমাত্র খামারে ব্যবহার করা হয়। এক্ষেত্রে বেশ কয়েকবার ইঁদুর বিষ খেলে তবেই তার মৃত্যু ঘটে। দ্বিতীয় পর্যায় যে ধরনের অ্যান্টিকোয়াগুল্যান্ট ইঁদুরনাশক বিষ এসেছে সেগুলো ১৯৭০ সাল থেকে ব্যবহৃত হয়েছে। এই গবেষণায় শনাক্ত করা বেশিরভাগ বিষই এর অন্তর্ভুক্ত। এই রাসায়নিক একচেটিয়াভাবে আবাসিক এবং শহুরে এলাকায় ব্যবহার করা হয়। একবার এ বিষ খেলেই ইঁদুরের মৃত্যু অবসম্ভাবী। এই বিষের ব্যবহার ব্যাপক ও ব্যবহারও অনিয়ন্ত্রিত। গবেষকদের অনুমান ইঁদুরনাশক বিষ ব্যবহারে বৃদ্ধির ফলে বিশ্বজুড়ে অনেক মাংসাশী প্রাণীর সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। রেহাই পায়নি পার্বত্য এলাকার সিংহ বা নেকড়েরাও।