ইউরেনাস ও নেপচুন সহ হাজার হাজার এক্সোপ্ল্যানেটে হিরের বৃষ্টি

ইউরেনাস ও নেপচুন সহ হাজার হাজার এক্সোপ্ল্যানেটে হিরের বৃষ্টি

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা‌
Posted on ১৪ জানুয়ারী, ২০২৪

আমাদের সৌরমণ্ডলের দুই গ্রহে যে হিরের বৃষ্টি হতে পারে, তা নিয়ে বেশ কিছু দিন ধরেই চলছিল কানাঘুষো। সম্প্রতি এক দল জ্যোতির্বিজ্ঞানীর জোরালো দাবি, হিরের বৃষ্টি হতে পারে নেপচুন আর ইউরেনাসে। একটি নতুন পরীক্ষা থেকে জানা গেছে যে মহাকাশে শত শত এক্সোপ্ল্যানেটে হিরের বৃষ্টি হওয়ার উচ্চ সম্ভাবনা রয়েছে। এক্সোপ্ল্যানেটের অভ্যন্তরে অত্যন্ত কম তাপমাত্রায় সংকুচিত কার্বন যৌগের ফলে এই হিরে উৎপন্ন হয়ে থাকতে পারে। ইউরেনাস এবং নেপচুনের মতো গ্রহে কার্বনের অভাব নেই। সেই কার্বন যেমন অন্য কোনও পদার্থের সঙ্গে বিক্রিয়া করে বিভিন্ন যৌগ বানাচ্ছে, তেমনই তা বিভিন্ন রকম ভাবে থাকছে মৌল হয়েও। পরীক্ষাটি ক্যালিফোর্নিয়ার এসএলএসি ন্যাশনাল অ্যাক্সিলারেটর ল্যাবরেটরিতে মুঙ্গো ফ্রস্ট এবং তার সহকর্মীরা করেন। ফ্রস্টের পরীক্ষা অনুসারে, ইউরেনাস এবং নেপচুনের মতো দৈত্যাকার তুষার গ্রহের অভ্যন্তরে হিরে বৃষ্টি একটি সাধারণ ঘটনা হয়ে উঠতে পারে।
এর আগে, এই বরফের গ্রহের ভিতরে হিরে তৈরি নিয়ে পরীক্ষাগারে অনেক অধ্যয়ন হয়েছে। বেশিরভাগ পরীক্ষাই ডায়নামিক কম্প্রেশন পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে ছিল। এই প্রথম এই ক্ষেত্রে একটি পরীক্ষা স্ট্যাটিক কম্প্রেশন পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে পরিচালিত হয়েছে। ফ্রস্টের গবেষক দল স্টাইরোফোম তৈরি করতে যে পলিমার ব্যবহৃত হয় অর্থাৎ পলিস্টেরিনকে কম্প্রেসড বা সংকুচিত করে। দলটি এক্স-রে আলোর উপ্সথিতিতে দুটি হিরের মধ্যে পলিস্টাইরিন রেখে তাকে চাপ দেয়। তারা দেখেন ২২০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এবং প্রায় ১৯ গিগাপাস্কেলের চাপে পলিস্টাইরিন থেকে ধীরে ধীরে হিরে তৈরি হচ্ছে এবং ইউরেনাস এবং নেপচুনের অভ্যন্তরে একই অবস্থা বিরাজমান। ডায়নামিক কম্প্রেশন ব্যবহার করে পূর্বের পরীক্ষায় হিরে তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় চাপের তুলনায় এই চাপ অনেক কম। প্রক্রিয়াটি ডায়নামিক কম্প্রেশন পরীক্ষার চেয়েও বেশি সময় নেয়। গবেষক দলের অনুমান অনেক ছোটো গ্রহে হিরের বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। তারা আরও বলেন যে মোট ৫৬০০টি চিহ্নিত এক্সোপ্ল্যানেটের মধ্যে, ১৯০০ টিরও বেশি গ্রহে হিরের বৃষ্টি হতে পারে। অর্থাৎ, সৌরজগতের মধ্যে, হিরে সমতলের অনেক কাছে তৈরি হতে পারে। পূর্বে এক পরীক্ষায় দেখা গেছে যে শনি ও বৃহস্পতিতে হিরে তৈরি হয় কিন্তু এই দুটি গ্রহ সূর্যের আনেক কাছে থাকে বলে সেখানে হিরে খুব বেশিক্ষণ কঠিন অবস্থায় থাকতে পারে না। এই হিরের বৃষ্টি হয়ে চলেছে এই সৌরমণ্ডলের প্রায় শেষ প্রান্তে থাকা আরও দু’টি গ্রহ- ইউরেনাস আর নেপচুনেও। তবে বৃহস্পতি আর শনি- এই দু’টি গ্রহ তুলনায় সূর্যের অনেক কাছে রয়েছে বলে তাদের তাপমাত্রা অনেক বেশি। বাড়তি তাপমাত্রায় তাই শনি আর বৃহস্পতিতে হিরে বেশিক্ষণ কঠিন অবস্থায় থাকতে পারে না। তরল হিরে হয়ে যায়। কিন্তু ইউরেনাস আর নেপচুনের মতো অনেক অনেক দূরের গ্রহগুলোকে অনেক কম সূর্যের তাপ খেতে হয় বলে ওই দু’টি গ্রহ অনেক অনেক বেশি ঠাণ্ডা শনি আর বৃহস্পতির চেয়ে। ফলে, ওই গ্রহগুলোতে অনেক বেশি সময় ধরে হিরে কঠিন অবস্থায় থাকতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

thirteen − three =