ইউরোপে শিল্প বিপ্লবের সময় শিশুদের রিকেট রোগের প্রাদুর্ভাব

ইউরোপে শিল্প বিপ্লবের সময় শিশুদের রিকেট রোগের প্রাদুর্ভাব

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৫ মার্চ, ২০২৪

ইউরোপে ১৮ ও ১৯ দশকে শিল্প বিপ্লবের সময় শিশুদের মধ্যে অস্থি জনিত রিকেট রোগের প্রাধান্য দেখা দিয়েছিল। রিকেটে শিশুদের হাড়ের বিকাশ ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এতে হাড়ে ব্যথা হয়, হাড়ের বৃদ্ধি দুর্বল হয়, নরম, দুর্বল হাড় গঠন থেকে হাড়ের বিকৃতি ঘটে। প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে এই রোগ হতে পারে, যা অস্টিওম্যালাসিয়া নামে পরিচিত। আগে গবেষকদের অনুমান ছিল শিল্প বিপ্লবের সময় মানুষ দীর্ঘক্ষণ ঘরের ভেতরে থেকে কাজ করত, ধোঁয়াযুক্ত পরিবেশে শিশু সহ অনেক মানুষ ঠাসাঠাসি করে থাকত, এসবের জন্য মানুষের ত্বকে সূর্যালোকের ঘাটতি দেখা দিত, যার ফলস্বরূপ ভিটামিন ডি-এর অভাব ঘটত আর রিকেট রোগ দেখা দিত।
ওটাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্বে গবেষণায় আবিষ্কার করা গেছে শিল্প বিপ্লবের সময় শিশুদের মধ্যে রিকেটের কারণ শুধুমাত্র কারখানার শ্রম এবং শহরের দূষণ ছিল না। PLOS One-এ প্রকাশিত গবেষণা ওটাগো বিশ্ববিদ্যালয়, ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয়, এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়, ব্রাইটন বিশ্ববিদ্যালয় এবং কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা, শিল্প যুগের ইংল্যান্ডের একটা কবরস্থান থেকে দাঁতের নমুনা সংগ্রহ করে তাতে মাইক্রোস্কোপিক মার্কার খুঁজে এই পুষ্টিজনিত ঘাটতির ফলে হওয়া রিকেট রোগের কারণ অনুসন্ধান করেছেন। দাঁত প্রত্নতাত্ত্বিক তথ্যের একটা গুরুত্বপূর্ণ উত্স, কারণ দাঁত খুব সুনির্দিষ্ট কালানুক্রমিকভাবে গঠিত হয় আর দাঁতের টিস্যুগুলো পরিবর্তিত হয় না। গবেষণায় দেখা গেছে নমুনায় পাওয়া ৭৬ শতাংশ দাঁতের আভ্যন্তরীণ অংশে ভিটামিন ডি-এর অভাবজনিত যুক্ত মার্কার বিদ্যমান। অনেক নমুনায়, এই অভাব নিয়মিত বার্ষিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। গবেষকরা বুঝতে পেরেছেন, এটা হল ইংল্যান্ডের উত্তরে বসবাসকারী মানুষের দাঁতে ঋতুভেদে ভিটামিন ডি-এর অভাবের স্পষ্ট প্রমাণ। অক্ষাংশ এবং ঋতুগত কারণে সূর্যালোকের অভাবে এই সমস্ত মানুষের ত্বকে ভিটামিন ডি তৈরি হতে পারেনি। ভিটামিন ডি-র অভাবে নানা ধরনের রোগ ঘটে, সংক্রামক রোগ, হৃদরোগ, ক্যান্সারও ঘটতে পারে। বর্তমান সমাজে ভিটামিন ডি-র অভাব বেশ প্রকট সমস্যা। তাই গবেষকরা অতীতে কী ঘটেছিল তা অধ্যয়ন করা গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন, যা থেকে বর্তমানে এই অসুখের প্রকাশ, কারণ বুঝতে সুবিধা হবে, কারণ মানুষের জৈবিক শরীর ২০০ বছরে একই থেকে গেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

1 × one =