ইনসুলিন উৎপাদনে প্রোটিন বা ফ্যাটের প্রভাব

ইনসুলিন উৎপাদনে প্রোটিন বা ফ্যাটের প্রভাব

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৪ জুলাই, ২০২৪
ইনসুলিন-উৎপাদন

ডায়াবিটিস শব্দটা আমাদের জীবনযাপনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িয়ে গেছে। চল্লিশের কোটায় পা রাখার সঙ্গে সঙ্গেই ডায়াবিটিসে আক্রান্ত হচ্ছেন লক্ষ লক্ষ মানুষ। তৃতীয় বিশ্বের এই দেশে ভাত, রুটি জাতীয় শর্করা খাবারের প্রাধান্য বেশি বলেই হয়তো এই রোগের প্রকোপও বেশি। সম্প্রতি এক জার্নালে প্রকাশিত একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, টাইপ টু ডায়াবিটিসের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ইনসুলিনের পরিমাণ আগামী বছরগুলোতে বিশ্বব্যাপী ২০% বেশি বৃদ্ধি পাবে। ইনসুলিন কোনও ওষুধ নয়। এটি একটি হরমোন যা আমাদের শরীর নিজেই তৈরি করে। শরীর নিজে থেকে ইনসুলিন তৈরি করতে না পারলে বাইরে থেকে তা শরীরে প্রবেশ করানো হয়। এই ইনসুলিন নিয়েই গবেষণা করেছেন ব্রিটিশ কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। যখন রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণের কথা আসে, তখন সবার আগে মনে হয় ভাত বা রুটি খাওয়া কমিয়ে ফেলত হবে। কিন্তু ব্রিটিশ কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন গবেষণা থেকে জানা যাচ্ছে যে, কিছু মানুষের ক্ষেত্রে খাদ্যতালিকায় প্রোটিন এবং ফ্যাট জাতীয় খাবার বিবেচনা করে খাওয়া ঠিক ততটাই গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। সেল মেটাবলিজম-এ প্রকাশিত এই সমীক্ষায় দেখার চেষ্টা করা হয়েছে তিনটি ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্ট অর্থাৎ কার্বোহাইড্রেট (গ্লুকোজ), প্রোটিন (অ্যামিনো অ্যাসিড) এবং ফ্যাট (ফ্যাটি অ্যাসিড) এদের প্রতিটির প্রতিক্রিয়ায় কীভাবে বিভিন্ন মানুষ ইনসুলিন তৈরি করে। অধ্যয়নের ফলাফল প্রকাশ করে যে রক্তে শর্করা-নিয়ন্ত্রণকারী হরমোন ইনসুলিনের উত্পাদন আগে যা ভাবা হত তার তুলনায় অনেক বেশি স্বতন্ত্র, কারণ দেখা গেছে কিছু মানুষের ক্ষেত্রে এটি ফ্যাটযুক্ত বা প্রোটিনযুক্ত খাবারের প্রতি অতি-প্রতিক্রিয়াশীল। ইনসুলিন মানুষের শরীরে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে- ডায়াবেটিস থেকে শুরু করে, স্থূলতা, ওজন বৃদ্ধি এমনকি কিছু ধরনের ক্যান্সারের ক্ষেত্রেও এর প্রভাব খুব বেশি। গবেষকদের মতে এই গবেষণাটি দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত বিশ্বাস যে- ফ্যাট বা প্রোটিন প্রত্যেকের মধ্যে ইনসুলিন নিঃসরণে নগণ্য প্রভাব ফেলে, এই ধারণাকে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি ফেলে। তাছাড়াও এই গবেষণার ফলে একজন ব্যক্তির ইনসুলিন উৎপাদনের স্বতন্ত্র চালক সম্পর্কে ধারণার ভিত্তিতে সেই ব্যক্তির উপযোগী খাদ্যতালিকা দেওয়া যেতে পারে যাতে তার রক্তে শর্করা এবং ইনসুলিনের মাত্রা আরও ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

one × two =