ইমোজির উৎস সন্ধানে

ইমোজির উৎস সন্ধানে

সাহিত্যের ইতিহাসই হোক আর কথ্য ভাষার পরম্পরা – মানুষের ভাব বিনিময়ের বিষয়টা ছেলের হাতের পাঁচ তো নয়। জটিল এবং পরতে পরতে বিতর্কের জন্ম দিতে পারে এমন সব কানাগলি রয়েছে ভাষার অন্দরে। সেই রহস্যময় সংকেত আর চিহ্নের ভিড়ে উত্তরাধুনিক সমাজ উপহার দিয়েছে আরেক উপাদানের – ইমোজি। বিশ্বায়িত ইন্টারনেট আর টেক্সট বার্তার দুনিয়ায় এক জরুরি সদস্য বলা যায় এটাকে।
ইমোজি নিয়েও বৈজ্ঞানিক গবেষণা হয়েছে, এবং পরেও হবে। গবেষকরা বলছেন, মনের ভেতরের অবস্থা বোঝাতে আর লুকোতে মানুষ ইমোজি ব্যবহার করে। অবশ্যই পরিস্থিতি আর সামাজিক বাধানিষেধ মেনেই। সামনাসামনি ‘সত্যিকার’ কথাবার্তার সময়ও মানুষ নিজের ভেতরকার আসল মনোভাব লুকিয়ে মুখোশ ধারণ করে সম্পূর্ণ উল্টো কথা বলতে পারে। অযাচিত গিফট পাওয়ার কথাটা উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক। মনের মধ্যে যতই সন্দেহ, নাক সিঁটকানো থাক, বাইরে থেকে কিঞ্চিৎ হেসে ভেতরের চাপা উদ্বেগকে আমরা দমিয়ে রাখি। এগুলো যদি বিভিন্ন সমাজের ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকমের।
টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক মায়ু লিউ। ওনার উৎসাহের জায়গাটা ইমোজির সার্বজনীনতা নিয়ে। সোশ্যাল মিডিয়া, ব্যক্তিগত টেক্সট মেসেজ কিংবা কাজের ইমেল – সব জায়গাতেই ইমোজির কাজ করার ঢঙটা একই রকমের। মুখের ভঙ্গির মতোই, ইমোজি দিয়ে মনের সত্যিকার আবেগ যেমন প্রকাশ করা যায়, তেমনই লুকিয়েও রাখা যায়। যদিও লিউয়ের গবেষণা বলছে, খারাপ (নেগেটিভ) ইমোজি ব্যবহারের ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীর আসল মনোভাবটা বেশি ভালো বোঝা যায়।
কিন্তু ইমোজিচরিতে পরোক্ষ কিছু বিপদের সমস্যাও রয়েছে। লিউ কল্পনা করছেন সেই সময়টার, যখন অনলাইনে সামাজিক সম্পর্ক আর কথোপকথনের পরিসরটা সর্বত্র ছড়িয়ে পড়বে। তখন আমাদের নিজেদেরই বাজিয়ে দেখে নিতে হবে আমরা আমাদের সত্যিকারের আবেগ থেকে কতদূর সরে এসেছি। এই ভয় তো অকারণ নয় যে ইমোজিতে হাসি কান্না অভিমান ভালোবাসা প্রকাশ করতে করতে ওটাই একমাত্র প্রকাশ হয়ে ওঠে। লিউ প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন আমাদের জন্যে। ‘নিজেদের অকৃত্রিম আবেগ বা মনোভাব লুকবার একটা হাতিয়ার কি হয়ে উঠেছে এই ইমোজি?’ অনলাইন ব্যবস্থাপনায় আমাদের কি সত্যিই মুক্তমনে নিজেদের কথাটা বলার সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ সুযোগ থাকে?