পাখিরা শীত এলেই দক্ষিণে পাড়ি দেয়। এ যেন প্রকৃতির অটল নিয়ম। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনায় জন্ম নেওয়া কিছু বল্ড ঈগল (সাদা মাথা ঈগল) সেই চেনা মানচিত্র অনুসরণ না করে একপ্রকার সেই নিয়ম ভেঙে প্রতিবছর ঠিক উল্টো পথে পাড়ি দেয়। শীতে নয়, বরং গ্রীষ্মে ও শরতে তারা উড়ে যায় উত্তরের দিকে, অনেক সময় যুক্তরাষ্ট্র পেরিয়ে গভীর কানাডা পর্যন্তও। এই অপ্রত্যাশিত আচরণ শুধু কৌতূহলই নয়, বিজ্ঞানীদের ধারণাকেও নতুন করে নাড়া দিয়েছে।
জার্নাল অফ র্যাপ্টার রিসার্চ–এ প্রকাশিত সাম্প্রতিক এক গবেষণায় ২০১৭ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ২৪টি সদ্য উড়তে শেখা ঈগল ও ২টি প্রজননহীন প্রাপ্তবয়স্ক ঈগলকে স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটারের / উপগ্রহ প্রেরক যন্ত্রের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা হয়। গবেষণায় উঠে আসে একটি গুরুত্বপূর্ণ বাস্তবতা—অ্যারিজোনার বল্ড ঈগলরা শীতকালেই প্রজনন করে। ফলে তাদের অ-প্রজননকাল পড়ে গ্রীষ্ম ও শরতে, আর ঠিক সেই সময়েই তারা উত্তরের পথে রওনা হয়।
এই উত্তরমুখী যাত্রা আসলে একটি অনুসন্ধানী কৌশল। তরুণ ঈগলরা পরীক্ষামূলক ও অনুসন্ধানী স্বভাবের হয়। তারা খাদ্যের অস্থায়ী উৎস খুঁজে বেড়ায়, যেমন, স্যামন মাছ, জলচর পাখির বাসা, কিংবা বড় স্তন্যপায়ী প্রাণীর মৃতদেহ ইত্যাদি। গবেষকদের মতে, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ঈগলদের এই বিশেষ কৌতূহলী ও অভিযাত্রী স্বভাব, দ্রুত বদলে যাওয়া জলবায়ু ও ভূদৃশ্যে টিকে থাকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।
গবেষণার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো—এই ঈগলরা আজও থামে সেই একই ঐতিহাসিক হ্রদ ও নদীতে, যেগুলো ১৯৮০–এর দশকের গবেষণায়ও তাদের গুরুত্বপূর্ণ বিশ্রামস্থল হিসেবে চিহ্নিত ছিল। অর্থাৎ, প্রজন্ম বদলালেও পর্বত মধ্যস্থ অভিবাসন পথ-এর মতো প্রাকৃতিক যাত্রাপথের গুরুত্ব অটুট রয়েছে।
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঈগলদের যাত্রাপথ আরও নির্ভুল ও নিয়মিত হয়ে ওঠে। যেসব ঈগলকে অন্তত দুই বছর অনুসরণ করা গেছে, তাদের বেশিরভাগই জন্মের বছর শেষ হওয়ার আগেই আবার অ্যারিজোনায় ফিরে এসেছে। তবে কিছু ব্যতিক্রমও আছে। একটি স্ত্রী ঈগল যুক্তরাষ্ট্রের ১০টি অঙ্গরাজ্য ও কানাডার ৪টি প্রদেশ পেরিয়ে ক্যালিফোর্নিয়ায় বসতি গড়ে ছিল। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, চার বছর বয়সে সে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যায়। বড় শিকারি পাখিদের ক্ষেত্রে এ কিন্তু মারাত্মক বিপদ।
বিদ্যুৎ-এর লাইন ছাড়াও তরুণ ঈগলদের সামনে রয়েছে সীসা ও ইঁদুরনাশক বিষক্রিয়া, বায়ুচালিত টারবাইনের সঙ্গে সংঘর্ষ, বাসস্থান ধ্বংস এবং জলবায়ু পরিবর্তনের অনিশ্চয়তা। গবেষকদের মতে, তরুণ ঈগলদের এই দীর্ঘ ও বিপজ্জনক যাত্রাপথ বোঝা গেলে কোন কোন বিশ্রামস্থল ও করিডর সংরক্ষণ সবচেয়ে জরুরি, তা নির্ধারণ করা সহজ হবে।
প্রকৃতি সব সময় আমাদের পরিচিত নিয়ম মেনে একই পথে চলে না। কখনো কখনো বেঁচে থাকার কৌশলই পথ বদলে দেয়। আর সেই উল্টো পথে যাওয়া ঈগলরাই আমাদের শেখায়, পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়াই আসল বিবর্তন।
সূত্রঃ Northward Migrations of Nonbreeding Bald Eagles from Arizona, USA by Caroline D. Cappello, Kenneth V. Jacobson,et.al; Journal of Raptor Research, 2025; 59 (3).
DOI: 10.3356/jrr2450
