উড়িষ্যায় জাফরান চাষ

উড়িষ্যায় জাফরান চাষ

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২০ জানুয়ারী, ২০২৫

জাফরান, বিশ্বের সবথেকে ব্যয়বহুল মসলাগুলির মধ্যে একটি। রূপে, গন্ধে ,স্বাদে, জাফরান আভিজাত্যের ছাপ রাখে। জাফরানের উৎপত্তিস্থল নিয়ে দ্বিমত রয়েছে। অনেকের মতে এটি ইরান থেকে এসেছে, আবার অনেকের মতে, গ্রীস বা মেসোপটেমিয়া অঞ্চলে প্রথম চাষ শুরু হয়ে,পরবর্তীতে ইউরেশিয়াতে ছড়িয়ে পড়ে।

কোন বন্য জায়গাতে জাফরান চাষ করা যায় না। এরা স্বতন্ত্র ভাবে বংশবিস্তার করতে পারে না। হাইব্রিডিসেশন বা ‘বিভাজন এবং সেট’ এর মাধ্যমে জাফরান চাষ হয়ে থাকে। জাফরান চাষের জন্য আদর্শ আবহাওয়া আদ্র শীতকাল। মূলত -১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এদের বেড়ে ওঠার জন্য আদর্শ। হিমবাহ সহ্য করার পাশাপাশি কিছু কিছু ক্ষেত্রে বার্ষিক বৃষ্টির পরিমাণ কম হলে, বিশেষ সেচের মাধ্যমে জাফরান চাষ করা হয়ে থাকে। আমাদের দেশে কাশ্মীরে মূলত জাফরান চাষ হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে বিশেষ উল্লেখ্য, আগের থেকে কাশ্মীরে জাফরান উৎপাদনের হার কমেছে। আবহাওয়া পরিবর্তন যে এর অন্যতম কারণ, তা বলাবাহুল্য।

সুজাতা আগারওয়াল, উড়িষ্যার ঝাড়সুড্ডার বাসিন্দা। জাফরানের দাম এত বেশি কেন ! এটাই ছিল মূল আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। সুজাতার জাফরান বিষয়ক কোন প্রথাগত প্রশিক্ষণ নেই। ইন্টারনেট থেকে পাওয়া ইনডোর চাষ, জাফরান চাষ নিয়ে পড়াশোনা শুরু করে দিলেন জোর কদমে। ২০২২ সালে, তিনি ঠিক করেন, উড়িষ্যাতেই, নিজের বাড়িতে জাফরান চাষ করবেন। কিন্তু কাশ্মীরের সাথে উড়িষ্যার আবহাওয়া একেবারেই বেমানান।

প্রথমেই কাশ্মীর থেকে, আড়াই লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করে কিনে নিলেন, ২৫০ কেজি জাফরান বাল্ব। মাত্র ১০০ বর্গফুটের ছাদ ঘর। নাম দিলেন ব্লুম ইন হাইড্রা। এরোপনিক্স পদ্ধতির মাধ্যমে সতর্কভাবে তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, কার্বন ডাই-অক্সাইড, আলো নিয়ন্ত্রণ করে মাত্র ১৫ দিনের মাথাতেই জাফরান-শুট বার করে ফেললেন। ফুল ধরালেন, আরো সাত সপ্তাহের মধ্যে। এরোপনিক্স আসলে কম মাটিতে কুয়াশা এবং বাতাসের মধ্যে দিয়ে আর্দ্রতার মাঝে গাছ ভালো রাখতে সাহায্য করে।
কাশ্মীরে যেখানে জাফরান বছরে একবারই চাষ হয়, সেখানে উড়িষ্যার সুজাতা বছরের দুবার প্রায় ৯০০ গ্রাম ফলন করে, তাক লাগিয়ে দিলেন। শুধুমাত্র মসলা হিসেবে নয় তিনি জাফরান গাছের আরো অন্যান্য অংশ দিয়ে কাহওয়া চা, ত্বক ও চুলের যাবতীয় প্রোডাক্ট তৈরি করে ফেলছেন অনায়াসে। ১০০ বর্গফুটের ছাদ ঘর থেকে এখন তার বার্ষিক আয় ২৪ লক্ষ টাকা।

শুধুমাত্র ব্যবসা নয়, তার এই উদ্ভাবনী কৌশল, আরও অন্যান্য উৎসাহী কৃষকদের সাহায্য করছে, কাশ্মীর ছাড়া জাফরান উৎপাদনে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2 × 3 =