উত্তাল জলরাশি, ভয়ঙ্কর হাওয়া, তীব্রতম স্রোত দক্ষিণ মহাসাগরকে করে তুলেছে বিশ্ব জলবায়ুর নিয়ন্ত্রক

উত্তাল জলরাশি, ভয়ঙ্কর হাওয়া, তীব্রতম স্রোত দক্ষিণ মহাসাগরকে করে তুলেছে বিশ্ব জলবায়ুর নিয়ন্ত্রক

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৬ আগষ্ট, ২০২৪
জলরাশি

দক্ষিণ মহাসাগর হল পৃথিবীর জলবায়ুর নিয়ন্ত্রকশক্তি। শক্তিশালী বাতাস ও সমুদ্রের উত্তাল জলরাশি নিয়ে গঠিত এই মহাসাগর। একটা শহরের মাপের হিমশৈলের যেমন এখানে দেখা মেলে, তেমনই থাকে সমুদ্রের সবচেয়ে বড়ো বড়ো স্রোত। আবার চায়ের কাপের মাপে ছোটো ছোটো অশান্ত প্রবাহও এখানে উৎপন্ন হয়। এই দক্ষিণ মহাসাগর পৃথিবীর জলবায়ুর জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। এই সমুদ্রের জল বিশ্বের গভীর মহাসাগরগুলোকে পূর্ণ করে। মানব-সৃষ্ট বিশ্ব উষ্ণায়নে নির্গত তাপ ও কার্বন সঞ্চয় করে দক্ষিণ মহাসাগর অ্যান্টার্কটিকার বিশাল বরফের পাতে তাপের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে। অ্যান্টার্কটিকার বরফের গলন বৈশ্বিক সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য সবচেয়ে বড়ো হুমকি। গবেষকরা দক্ষিণ মহাসাগরের জটিল চরিত্র বোঝার চেষ্টা করেছেন। এর চরিত্র বোঝার জন্য প্রায়শই গবেষকরা এই মহাসাগরের তুষারবৃত অঞ্চল অবধি যান।
অ্যান্টার্কটিক বরফপাত পৃথিবীর মধ্যে বৃহত্তম বরফের পাত, যা বিশ্ব সমুদ্রপৃষ্ঠের ৫৮ মিটারের সমান। বরফের পাত দক্ষিণ মহাসাগরের পৃষ্ঠে বিশাল বরফের তাকের মতো প্রবাহিত হতে থাকে। এই বরফের তাকগুলোর মধ্যে অনেকগুলোই নীচের উষ্ণ সমুদ্রের ছোঁয়ায় ক্ষয়ে গেছে, বা ভেঙে পড়ে আগের চেয়ে দ্রুত গতিতে হিম শৈলে পরিণত হচ্ছে। বরফের তাক পেরিয়ে গেলে দেখা যায় দক্ষিণ মহাসাগরের লক্ষ লক্ষ বর্গকিলোমিটার পৃষ্ঠতল জমে বরফের সমুদ্র হয়ে রয়েছে। এগুলো শক্তিশালী সৌর প্রতিফলক হিসেবে কাজ করে দক্ষিণ মহাসাগরের উত্তাল তরঙ্গ থেকে বরফের তাককে রক্ষা করে। আপাতদৃষ্টিতে কয়েক দশক ধরে উষ্ণায়নে বরফের পাত ক্ষতি গ্রস্থ না হলেও সাম্প্রতিক কয়েক বছরে দক্ষিণ মহাসাগরের জমা বরফ ভয়ঙ্করভাবে হ্রাস পেয়েছে। এটা বরফের তাক ও বরফের পাতের গলার জন্য আরও চাপ সৃষ্টি করছে। সমুদ্রের জলের খোলা ছোটো অংশে অ্যান্টার্কটিকা থেকে প্রবাহিত শক্তিশালী এবং ঠান্ডা বাতাসের স্পর্শে বেশিরভাগ সামুদ্রিক বরফ গঠিত হয়। একে পলিনিয়া বলে। হিমাঙ্কের নীচে এই বায়ু প্রবাহিত হয়ে সমুদ্র পৃষ্ঠকে শীতল করে, যার ফলে বরফ তৈরি হয়। বরফ তৈরি হওয়ার সাথে সাথে জল সমুদ্রের পৃষ্ঠে লবণ বের করে দেয়। এই অতিরিক্ত লবণ, পৃষ্ঠের সমুদ্রের জলকে ভারী বা ঘন করে তোলে।
সাগরের জলের উপরিভাগ দক্ষিণ মহাসাগরের গভীরে যেতে অনেক বছর সময় লাগে। বর্তমানে যে জল সমুদ্রের গভীরে ডুবেছে তা গভীর সমুদ্রে বেশি কার্বন সঞ্চয় করেছে, যা বিশ্ব উষ্ণায়ণকে সীমিত করতে সাহায্য করেছে। মডেল ও পর্যবেক্ষণ জানাচ্ছে সমুদ্রের বরফ এবং বরফের তাকের হ্রাস গুরুত্বপূর্ণ জলবায়ু ব্যবস্থাকে দুর্বল করছে। এতে জল আরও উষ্ণ হচ্ছে, লবণাক্তভাব কমছে ও প্লবতা বাড়ছে, তাই জলের ওপরভাগ সহজে সমুদ্রের ভেতরে ডুবছেনা। আর এতে কার্বন সঞ্চয় কমতে পারছেনা। অতএব আগামী বছরগুলোতে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল আরও উষ্ণ হওয়ার সম্ভাবনা। দক্ষিণ মহাসাগরের গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা করতে বৈজ্ঞানিক এবং বিস্তৃত সম্প্রদায়ের একত্রে যোগ দেওয়া জরুরি।