
সম্প্রতি এক নতুন গবেষণায় বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, উদ্ভিদের জন্মের বহু কোটি বছর আগেই পৃথিবীতে ছত্রাক বিকশিত হয়েছিল। এই প্রাচীন ছত্রাকরাই পৃথিবীর প্রথম বাসযোগ্য ভূমি তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।এরা শৈবালের সঙ্গে মিলিত হয়ে পাথর ক্ষয়, পুষ্টি পুনর্ব্যবহার এবং প্রাথমিক মৃত্তিকা তৈরির কাজ শুরু করে।
ওকিনাওয়া ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক গের্গেলি স্যোল্লোসি জানান, জটিল বহুকোষী জীবন অন্তত পাঁচটি স্বাধীন গোষ্ঠীতে আলাদাভাবে বিকশিত হয়েছিল : প্রাণী, স্থল উদ্ভিদ, ছত্রাক, লাল শৈবাল ও বাদামী শৈবাল। অর্থাৎ, এককোষী পৃথিবীতে অন্তত পাঁচবার পৃথকভাবে জটিল জীবনের জন্ম হয়েছে।
এই রূপান্তর ছিল বিপ্লবাত্মক। কোষগুলো বিশেষ কাজের জন্য দলবদ্ধ হয়, কোষকলা ও অঙ্গ তৈরি করে, আর পারস্পরিক যোগাযোগের মাধ্যমে একত্রে কাজ করে – যেমনটা আমরা আজ প্রাণীজগতে দেখি। এককোষী থেকে বহুকোষী জীবনের জটিলতা বিকশিত হতে সময় লেগেছে কোটি কোটি বছর এবং অসংখ্য জিন ঘটিত অভিযোজন।
ছত্রাকের জীবাশ্ম খুব কম পাওয়া যায়, কারণ তাদের দেহ নরম ও সূক্ষ্ম তন্তুজাতীয়। তাই তাদের বিবর্তনকাল নির্ধারণ করা এতদিন কঠিন ছিল। উদাহরণস্বরূপ, লাল শৈবালের জীবাশ্ম ১.৬ বিলিয়ন বছর পুরোনো, প্রাণী প্রায় ৬০০ মিলিয়ন বছর আগে দেখা দেয়, আর স্থল উদ্ভিদের জীবাশ্ম প্রায় ৪৭০ মিলিয়ন বছরের। কিন্তু ছত্রাকের নির্দিষ্ট সময়কাল এতদিন অজানা ছিল।
এই সমস্যা মেটাতে গবেষকেরা ব্যবহার করেন আণবিক ঘড়ি —যেখানে ডিএনএ পরিবর্তনের হারে সময় আন্দাজ করা হয়। কিন্তু ছত্রাকের জীবাশ্ম কম থাকায় সেই ঘড়ির একদম সঠিক সময় নির্ধারণ করা কঠিন ছিল। এজন্য বিজ্ঞানীরা হরাইজন্টাল জিন ট্রান্সফার(এইচ জি টি) পদ্ধতি ব্যবহার করেন। যেখানে এক প্রজাতির জিন অন্য প্রজাতিতে লাফিয়ে চলে যায়। এই বিরল ঘটনাগুলো ছত্রাকের বিবর্তনের সময় নির্ধারণে সহায়ক হয়।
গবেষণায় দেখা যায়, জীবিত ছত্রাকদের সাধারণ পূর্বপুরুষ বেঁচে ছিল প্রায় ১.৪ থেকে ০.৯ বিলিয়ন বছর আগে, অর্থাৎ স্থল উদ্ভিদের জন্মের বহু আগেই। এ থেকে প্রমাণ হয় যে ছত্রাক ও শৈবালের মধ্যে প্রাচীন সহযোগিতাই স্থলজ জীবনের ভিত্তি তৈরি করেছিল।
গবেষকরা মনে করেন, উদ্ভিদরা যখন স্থলে আসে, তখন পৃথিবী মোটেও শূন্য মরুভূমি ছিল না। ছত্রাকেরা আগেই কোটি কোটি বছর ধরে তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে পৃথিবীকে সাজিয়ে রেখেছিল। তারা পাথর ক্ষয় করে পুষ্টিচক্র তৈরি করেছিল, আর ধীরে ধীরে পৃথিবীর বুকে গড়ে তুলেছিল প্রথম জীবনবান্ধব মাটি।
আজকের যে শস্য- শ্যামলা ধরিত্রী আমরা দেখি তা আসলে ছত্রাক রাজ্যের কীর্তি।এরাই আদি ধরিত্রীকে শ্যামল শস্যে স্পন্দিত হওয়ার জন্য সযত্নে প্রস্তুত করেছিল।
সূত্র : “A timetree of Fungi dated with fossils and horizontal gene transfers” by Lénárd L. Szánthó, Zsolt Merényi, et.al; (31.09. 2025), Nature Ecology & Evolution.
DOI: 10.1038/s41559-025-02851-z