
আমরা যদি এক চা চামচ স্বাস্থ্যকর মাটি পরীক্ষা করি, তাতে হয়তো পাব প্রায় এক বিলিয়ন ব্যাকটেরিয়া, সুতোর মত ছত্রাক ও অগণিত অণুজীব।এই অণুজীবরা একত্রে সহাবস্থানের মাধ্যমে তৈরি করে ফেলে মাইক্রোবায়োম। এ হল অণুজীবদের বাসস্থল, যা গাছের পুষ্টি, জল সরবরাহ এবং রোগ বা খরার বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করে। নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, গাছ শুধু এই মাইক্রোবায়োমের নিষ্ক্রিয় সদস্য নয়, বরং তারা সক্রিয়ভাবে কিছু অণুজীবদের সাথে মিলে একধরনের বাছাই-করা “কর্মী দল” তৈরি করে। একে বলা হচ্ছে ফাংশনাল টিম সিলেকশন।
এই গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন নর্দার্ন অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ন্যান্সি কলিনস জনসন এবং চিলির সেজার মারিন। তাঁরা দেখিয়েছেন, উদ্ভিদের মূলের আশেপাশের মাটি অর্থাৎ রাইজোস্ফিয়ার- অণুজীবদের পুষ্টি আদান-প্রদানের এক জটিল অঞ্চল। এখানে ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক উদ্ভিদের সঙ্গে পুষ্টি ও রাসায়নিক সংকেত বিনিময় করে। উদাহরণস্বরূপ, খরার সময় কিছু ব্যাকটেরিয়া “বায়োফিল্ম” তৈরি করে যা গাছের শিকড়কে জল ধরে রাখতে সাহায্য করে। চারটি উপাদান একত্রিত হলে উদ্ভিদ তার এই কর্মী দল তৈরি করতে পারে। এগুলি হল, অণুজীব নির্বাচন, গাছের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য, জীবাণুর বৈচিত্র্য এবং সময়। গাছ তাদের শিকড় থেকে কার্বনের ৪০% পর্যন্ত নির্গত করে জীবাণুদের আকৃষ্ট করতে পারে। ম্যালিক অ্যাসিড ব্যাসিলাসকে আকৃষ্ট করে গাছের প্রবৃদ্ধিকে মদত দেয় আর টারপিনস অনাকাঙ্ক্ষিত অনুপ্রবেশকারীদের ভাগিয়ে দেয়।
দেখা গেছে, গাছ যখন চাপের মুখের পড়ে যেমন খরা বা কম পুষ্টিকর পরিবেশে, তাদের জীবাণু দল তখন আরও কার্যকর হয় এবং সহানুভূতিশীল জীবাণুর সংখ্যা বাড়ে। উদাহরণস্বরূপ, ভুট্টা খরার সময় গাছ ফ্ল্যাভোনয়েড নির্গত করে যা খরা-সহনশীল ব্যাকটেরিয়াকে আকর্ষণ করে।
এই ধারণা কৃষিতে বিপ্লব ঘটাতে পারে। বর্তমানে জৈবসারের বিক্রি বাড়লেও অনেক ক্ষেত্রেই সেগুলোর কার্যকারিতা কম। বাছাই -করা কর্মী দলের ধারণা অনুযায়ী, এসব পণ্য যদি স্থানীয় চাপ ও পুষ্টির অভাব অনুযায়ী তৈরি হয়, তাহলে সাফল্যের হার অনেক বেশি হতে পারে। একই সঙ্গে উদ্ভিদের এমন জাতের উন্নয়ন করা দরকার যারা স্থানীয় জীবাণুদের সঙ্গে পারস্পরিক সহযোগিতা বজায় রাখতে পারে। বাছাই-করা
কর্মীদলের এই ধারণাটি শুধু উদ্ভিদে নয়, মানব অন্ত্র, প্রবাল প্রাচীর বা শিল্পের ক্ষেত্রে মনুষ্যসৃষ্ট জৈবচুল্লিতেও কার্যকর হতে পারে। ভবিষ্যতে এই গবেষণার পরিসর বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে গবেষকদের। যাতে দেখা যায় বাছাই -করা কর্মীদল কীভাবে বাস্তবিক অর্থে টেকসই কৃষি পদ্ধতিতে অবদান রাখতে পারে।
সূত্রঃ The ISME Journal.