উন্নত জীবনযাত্রা সম্পন্ন দেশে লিঙ্গ পার্থক্য মানসিকভাবে অবস্থান করে

উন্নত জীবনযাত্রা সম্পন্ন দেশে লিঙ্গ পার্থক্য মানসিকভাবে অবস্থান করে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৩ জানুয়ারী, ২০২৪

ক্যারোলিনস্কা ইনস্টিটিউটের গবেষকদের মনোবৈজ্ঞানিক বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ অনুযায়ী প্রকাশিত একটি গবেষণা অনুসারে, উন্নত জীবনযাপনসম্পন্ন দেশগুলিতে মনস্তাত্ত্বিক লিঙ্গ পার্থক্য বজায় থাকে। কিছু পার্থক্য বৃহত্তর থাকলেও অন্য পার্থক্য ছোটো হয়ে যায় কারণ উন্নত জীবনযাপন ধারায় মহিলারা পুরুষদের তুলনায় বেশি উপকৃত হয় বলে গবেষণায় মনে করা হয়। এই ফলাফল তথাকথিত লিঙ্গ বৈষম্য সম্পর্কে বিপরীত মতামত নিশ্চিত করে।
উন্নত জীবনযাত্রার সাথে লিঙ্গ বৈষম্যের ক্ষেত্রে মনস্তাত্ত্বিক পার্থক্য বাড়বে বা কমবে কিনা তা বিতর্কের বিষয়, কোনো কোনো বিশেষজ্ঞের মতে পার্থক্যগুলি সমতাসম্পন্ন সমাজে কম। সমাজে সমতা বলতে বোঝানো হয় যখন জাতি, লিঙ্গ, বয়স, যৌনতা বা অক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তি নির্বিশেষে সকলের সাথে সমান আচরণ করা হয়। কোনো ব্যক্তিই বৈষম্যের সম্মুখীন হয় না। প্রত্যেকে সমান সুযোগ পায় এবং তাদের উন্নতির জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদ পেতে পারে। পূর্ববর্তী গবেষণায় দু ধরনের লিঙ্গের মধ্যে বৃহত্তর পার্থক্য দেখা গেছে, একটি ঘটনা যাকে সমতা প্যারাডক্স বলা হয়েছে। লিঙ্গ-সমতা প্যারাডক্স হল, লিঙ্গ সমতাসম্পন্ন দেশগুলিতেও ব্যক্তিত্ব এবং পেশাগত পছন্দের ক্ষেত্রে লিঙ্গ পার্থক্য বিরাজমান। তাদের গবেষণাপত্রে, গবেষকরা দেখান যে লিঙ্গ সম্পর্কীয় কিছু পার্থক্য বৃদ্ধি পায় আবার কিছু কিছু হ্রাস পায় এবং উপসংহারে আসেন যে জীবনযাত্রার মান উন্নত হলেও, লিঙ্গের মধ্যে স্বতন্ত্র পার্থক্য অব্যাহত থাকবে বলে মনে হয়। করোলিনস্কা ইনস্টিটিউটের সমীক্ষা দেখায় যে বয়স, স্থান বা জীবনযাত্রা নির্বিশেষে পুরুষ এবং মহিলাদের শক্তিশালী এবং দুর্বল দিকগুলির প্যাটার্ন একইধরনের। ব্যক্তিত্ব, নেতিবাচক আবেগ, এবং কিছু জ্ঞানীয় ফাংশনের ক্ষেত্রে লিঙ্গের পার্থক্য উচ্চতর জীবনযাত্রার দেশগুলিতে বেশি। কিন্তু তারা এটাও উল্লেখ করেছেন যে তার জন্য কোনো কার্যকারণ স্থাপন করা যায়নি।
গবেষণাটি দুটি অংশে পরিচালিত হয়েছিল, ৫৪ টি প্রকাশিত নিবন্ধের একটি পদ্ধতিগত পর্যালোচনা এবং ২৭ টি বড়ো আকারের অধ্যয়ন এবং গবেষণার পরিসংখ্যানগত একত্রীকরণের ওপর গবেষকদের নিজস্ব বিশ্লেষণ। উভয় বিশ্লেষণেই, তারা একটি দেশের (যেমন জিডিপি এবং সমতা সূচক) অনেকগুলি মনস্তাত্ত্বিক লিঙ্গ পার্থক্য এবং জীবনযাত্রার মানের সূচকের ওপর পারস্পরিক সম্পর্ক পরীক্ষা করেছেন। তাদের ফলাফলগুলি দেখায় যে ব্যক্তিত্ব, মৌখিক দক্ষতা, এপিসোডিক স্মৃতি এবং নেতিবাচক আবেগের ক্ষেত্রে লিঙ্গপার্থক্য উচ্চতর মানের জীবনযাত্রার দেশগুলিতে বড়ো। মৌখিক দক্ষতা এবং এপিসোডিক স্মৃতির পরিপ্রেক্ষিতে, মনে হয় যে মহিলারা ভালো অবস্থা থেকে উপকৃত হন এবং পুরুষদের তুলনায় তাদের নেতৃত্ব বৃদ্ধি পায়। তারা পরার্থপরতা এবং সহযোগিতার মতো উচ্চতর গুণাবলী দেখান তবে নেতিবাচক আবেগ প্রকাশের ঘটনাও বাড়ে। পুরুষরাও উচ্চতর জীবনযাত্রার মানসম্পন্ন দেশগুলিতে বৃহত্তর জ্ঞানীয় দক্ষতা প্রদর্শন করেন, কিন্তু মহিলাদের উন্নতি বেশি দেখা যায়, যার অর্থ হতে পারে যে নিম্ন জীবনযাত্রার মানের দেশগুলিতে মহিলাদের প্রাপ্ত সুবিধা কম।