উপেক্ষিত জীবাণুদল

উপেক্ষিত জীবাণুদল

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৭ জানুয়ারী, ২০২৫

ল্যাবরেটরিতে কাজের সুবিধা হবে বলে সব জীবাণুবিদই আদর্শ কতকগুলো পছন্দসই জীবাণু নিয়ে কাজ করেন। যেমন ই কোলাই। এ-কে মডেল ধরে নিয়ে অন্যান্য জীবাণু নিয়ে প্রচুর গবেষণা হয়েছে। বস্তুত অণু-জীববিদ্যা (মলিকিউলার বায়োলজি) তো গড়েই উঠেছে ই কোলাই নিয়ে চর্চার ভিত্তিতে। কিন্তু জীবাণুর সংখ্যা তো প্রচুর। প্রকৃতিকে এবং জীবকুলকে বুঝতে গেলে এদের তো ভালো করে জানা চাই। মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের পল জেনসেন ৪৩৪০৯টি প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া নিয়ে গবেষণার একটি পূর্ণাঙ্গ ডেটাবেস নিয়ে কাজ করতে গিয়ে দেখেন জীবাণুদের নিয়ে যত গবেষণা হয়েছে তার ২১% হয়েছে শুধু ই কোলাইকে নিয়ে। এছাড়াও ই কোলাইয়ের মতো যেসব জীবাণু মানুষের রোগ বাধায় সেগুলো নিয়েই গবেষণা হয়েছে বেশি, যেমন স্ট্যাফিলোকোকাস অরিয়াস, মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকুলোসিস, হেলিকোব্যাকটর পাইলোরাই (যা পাকস্থালীর মধ্যে ক্ষত সৃষ্টি করে)। কিন্তু ব্যাকটেরিয়া কুলের ৭৪%-এরই নামগন্ধ নেই সেই ডেটাবেসে। শুধু জেনসেনই নন, ইতালির ত্রেন্তো বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োম (দেহ-নিবাসী জীবাণু-সমগ্র) বিশেষজ্ঞ নিকোলা সেগাতা বলেছেন, একটি দুটি ব্যতিক্রম ছাড়া সুস্থ মানুষের দেহে উপস্থিত সুপ্রচুর ব্যাকটেরিয়াকে হিসেবের মধ্যেই আনা হয় না। অস্টিনের টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবাণু-বাস্তুতন্ত্র বিশেষজ্ঞ ব্রেট বেকার বলেছেন, মানুষের স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারী এমন কয়েকটি ব্যাকটেরিয়া তাঁরা আবিষ্কার করেছেন যাদের এখনো নামকরণই হয়নি। সাগর আর মাটি প্রভৃতি বাস্তুতন্ত্রের জীবাণুদের নিয়েও কাজ প্রয়োজনের তুলনায় অল্পই হয়েছে। কী করে এইসব অজানা জীবাণুদের নিয়ে চর্চা বাড়ানো যায় সে বিষয়ে ভাবছেন জীবাণুবিদরা। তাঁরা বলছেন, ই কোলাই বা অন্য কিছু জীবাণু নিয়ে এত কাজ হয়েছে এইজন্য যে তারা খুব দ্রুত বংশবৃদ্ধি করে। কিন্তু শুধু ওই নিয়ে পড়ে থাকলে তো চলবে না। মানুষের এবং বাস্তুতন্ত্রের পক্ষে প্রয়োজনীয় অন্য বহু অ-চর্চিত জীবাণু নিয়েও গবেষণা চালাতেই হবে। এ উদ্দেশ্যে ‘অ্যালাইন-টু-ইনোভেট’ নামে একটি মুক্ত-বিজ্ঞান সংস্থা ১০ লক্ষ ডলারের একটি প্রকল্প চালু করেছে। ১০০০টি স্বতন্ত্র অবস্থায় বিভিন্ন খাদ্য, বিভিন্ন অক্সিজেন-মাত্রা ও বিভিন্ন তাপমাত্রায় ১০০০টি জীবাণুর বংশবৃদ্ধির ধারাকে চিহ্নিত করার কাজ শুরু করেছেন তাঁরা। কানাডায় অবস্থিত এঁদের প্রকল্প ব্যবস্থাপক শান্তাল আল হাবিব এই কথা জানিয়েছেন। সংস্থাটি মুনাফা-কেন্দ্রিক নয়। সান ফ্রান্সিস্কোয় এঁদের কর্মসূচি পরিচালক পিট কেলি জানিয়েছেন, বিজ্ঞানীরা এঁদের সংগৃহীত উপাত্ত (ডেটা) অবাধে ব্যবহার করতে পারবেন। হয়তো এর সাহায্যে জীবাণু-জীবনকে গভীরভাবে জানবার উপযোগী কৃ বু (এ আই) মডেল বানানো সহজ হবে। জেনসেন বলছেন, তার অর্থ এ নয় যে ল্যাবরেটরিতে এখন থেকে ই কোলাই মডেলের বদলে কেবল কম-জানা অভিনব জীবাণুর মডেলই কাজে লাগানো হবে। কিন্তু একটা পরিবর্তন দরকার। কারণ “বর্তমানের চালে চললে যাবতীয় জীবাণু সম্পর্কে একটা পরিচ্ছন্ন ধারণা গঠন করতে আমাদের দশ হাজার বছর লেগে যাবে।“

https://doi.org/10.1038/d41586-025-00038-x

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

4 × three =