
মশা ঠান্ডা রক্তের একটি ক্ষুদ্র প্রাণী । মশার বাড়বৃদ্ধি, বিকাশ ও বংশবিস্তারের জন্য নির্দিষ্ট তাপমাত্রা প্রয়োজন । এদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পৃথিবী গ্রহটি ক্রমেই উষ্ণতর হয়ে যাচ্ছে। কিছু গবেষক মনে করছেন এই ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রার ফলে পোকামাকড়রা শীতল অঞ্চলে স্থানান্তরিত হতে পারে। কিন্তু মশারা যদি পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নেয় তাহলে মশার সংখ্যা কমবে না।ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জাস্টিন রেমেইসের ল্যাবের ইকোলজিস্ট লিসা কুপার বলেছেন, নতুন গবেষণায় দেখা গেছে মশারা বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে সৃষ্ট উষ্ণতর তাপমাত্রার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। এর অর্থ, জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সাথে তারা ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া এবং জিকা জ্বরের মতো রোগ নতুন অঞ্চলে ছড়িয়ে দিতে পারে। কুপার ও অন্যান্য গযেষকরা কুকুরের হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস প্রভৃতির মধ্যে হার্টওয়ার্ম রোগ সৃষ্টিকারী এডিস সিয়েরেনসিস প্রজাতির মশা নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছেন । তারা গাছের গর্ত থেকে মশার লার্ভা নিয়ে দুই প্রজন্ম ধরে ল্যাবে তাদের বংশবৃদ্ধি করতে দিয়েছিলেন। তৃতীয় প্রজন্মের বৃদ্ধির সময় তারা তাপের তারতম্য নিয়ে একটি পরীক্ষা চালান । কিছু মশার লার্ভাকে উষ্ণ জলে (৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) আবার কিছু লার্ভাকে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় (২২ ডিগ্রি সেলসিয়াস)রাখা হয়েছিল । পরীক্ষা শেষে দেখা যায় গরম জলের মশারা স্বাভাবিক তাপমাত্রায় থাকা মশাদের মতো বেশিদিন বাঁচতে পারেনি। কুপার এবং অন্যান্য গবেষকরা দেখতে চেয়েছিলেন লার্ভা অবস্থায় তাপের সংস্পর্শে আসার ফলে প্রাপ্তবয়স্ক মশাদের তাপ -সহনশীলতা কিভাবে প্রভাবিত হয় । তারা প্রতিটি মশাকে শিশিতে ভরে ধীরে ধীরে গরম জলে ডুবিয়ে কতক্ষণ তারা নড়াচড়া করতে পারে তা পর্যবেক্ষণ করেছেন। দেখা গেছে লার্ভা অবস্থায় উচ্চ তাপমাত্রার সংস্পর্শে আসা প্রাপ্তবয়স্ক মশাদের তাপ – সহনশীলতা স্বাভাবিক তাপমাত্রায় থাকা মশাদের তুলনায় কম ছিল। মূলত, এই গবেষণায় দেখা গেছে উষ্ণ জলে বেড়ে ওঠা মশার লার্ভা ছোট আকারের প্রাপ্তবয়স্ক জীবে পরিণত হয়। এই ছোট মশাগুলি তাপ সহ্য করতে পারে না। এই বিষয়গুলি খতিয়ে দেখার জন্য তারা এই তাপ-সহিষ্ণু মশার ডিএনএ সাধারণ মশার সাথে তুলনা করেছেন ও তাদের জেনেটিক কোডে ৫ লক্ষেরও বেশি পার্থক্য খুঁজে পেয়েছেন । এর মধ্যে তাপ সহ্য করতে পারে এমন শত শত জিনের পরিবর্তনও রয়েছে।
জিনের কিছু অংশে পরিব্যক্তি (মিউটেশন)পাওয়া গেছে, অর্থাৎ ক্রোমোসোমের গঠনে পরিবর্তন হয়েছে । এই ধরণের পরিবর্তনকে ক্রোমোসোমাল ইনভার্সন (ক্রোমোসোম বিপরীত বিন্যাস) বলা হয়। এক্ষেত্রে ক্রোমোসোমের একটি অংশ ভেঙে গিয়ে বিপরীত ক্রমে পুনরায় সংযুক্ত হয় । এই ইনভার্সনগুলি মশাদের বিভিন্ন জলবায়ুর সাথে খাপ খাইয়ে নিতে সাহায্য করে। গবেষকরা মিউটেশনে ৮০ টিরও বেশি এই ধরনের ইনভার্সন খুঁজে পেয়েছেন।
গবেষক কুপার জানান উষ্ণ তাপমাত্রা কিছু এলাকায় মশার সংখ্যা কমাতে নাও পারে। তাই, মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে আমাদের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া উচিত।
বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন কিছু পোকামাকড় জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারে।তবে, সমস্ত পোকামাকড় তা পারে কিনা তা স্পষ্ট নয়। এজন্য আরও গবেষণা প্রয়োজন। পোকামাকড়ের সংখ্যার উপর জলবায়ু পরিবর্তনের সম্পূর্ণ প্রভাব বোঝার জন্য দীর্ঘ সময় ধরে প্রাকৃতিক পরিবেশে গবেষণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।